জঙ্গল সলমিপুর সন্ত্রাসীদরে উচ্ছদে ও খাসজমি দখলমুক্ত করণে প্রয়োজন সমন্বতি উদ্যোগ

18

চট্টগ্রাম নগরীর গা ঘেঁষে গড়ে উঠা সীতাকুÐ উপজেলার অধীন জঙ্গল সলিমপুর দীর্ঘ ত্রিশবছর ধরে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত। এখানে দিনের বেলায় সমতল এলাকার মানুষ চলাফেরা করতে ভয় পেলেও সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের সহযোগিতায় দুর্গম এলাকায় পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হয়েছে বাড়িঘর। সেখানে ভাড়া ও স্থায়ীভাবে ত্রিশ হাজার পরিবারের প্রায় একলাখ মানুষ বসবাস করছে বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। এখানে বিদ্যুতের লাইনের অনুমতি নেই, সড়কে যান্ত্রিক গাড়ি চলাচলের পারমিটও নেই, নেই পানি বা গ্যাসের অনুমোদন। এরপরও এখানে সব আছে। আছে দোকানপাট, নিত্যপণ্যের বাজার । বিদ্যুতের লাইনসহ ব্যাংকের বুথও রয়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগের কথা এখানে রোহিঙ্গাদের বসতিও গড়ে উঠেছে। কয়দিন আগে একটি রোহিঙ্গা পরিবারকে দেড়কোটি টাকার স্বর্ণের বারসহ আটক করা হয়েছিল। সংবাদপত্রে প্রায় প্রতিবেদন ছাপানো হত জঙ্গল সলিমপুরের সন্ত্রাসীদের নানা অপরাধ নিয়ে। সরকারি খাস জায়গায় পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংস করে দেদারছে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে বিক্রি থেকে শুরু করে ভাড়াও দেয়া হত। যার থেকে আয় হতো কোটি কোটি টাকা। অবশেষে প্রশাসনের টনক নড়ে। সরকারি খাস জমি ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীদের কবল থেকে উদ্ধারের পরিকল্পনা নেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। সেই সাথে সরকারি খাস জমিতে পরিবেশ বান্ধব অবকাঠামো গড়ে তোলারও উদ্যোগ নেয়া হয়। এসব উদ্যোগ সফল করতে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় স্থানীয প্রশাসন র‌্যাব ও পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে গত ২২ জুলাই জঙ্গল সলিমপুরের আলী নগরে বড় ধরনের অভিযান চালায়। এসময় পাহাড় খননে বেশ কয়েকটি স্কেভেটরসহ খনন যন্ত্র উদ্ধার করা হয়। এরপর সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়। এ অভিযানের পর ভূমিমন্ত্রী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবং প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরেজমিনে পরিদশন করেন। উদ্ধারকৃত খাস জমিতে সরকারি হাসপাতালসহ নানা অবকাঠামো তৈরির পরিকল্পনার কথা জানান। এ নিয়ে গত শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সিডিএ’র মাস্টার প্ল্যান তৈরি নিয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমেদ কায়কাউস। এতে জঙ্গল সলিমপুর নিয়ে সরকারের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান। সভায় জঙ্গল সলিমপুরে ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীদের কবল থেকে সরকারি খাস জমি উদ্ধার করে সেখানে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে বড়ধরনের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানানো হয়। যার জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হচ্ছে মাস্টার প্ল্যান। মুখ্যসচিব ড. আহমেদ কায়কাউস জেলা প্রশাসক, পুলিশ, র‌্যাব, পরিবেশ অদিদপ্তর ও বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিনিধিদের বক্তব্য শোনার পর সরকারি খাস জমি উদ্ধারে যাতে সন্ত্রাসীরা কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে, সেই জন্য প্রশাসনের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস কর্তৃপক্ষসহ সকলকে সম্পৃক্ত করে জমি উদ্ধার ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উপর গুরুত্ব দেন। একই সাথে বিদ্যুৎসহ সেবা সংস্থার সকল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার এবং পুলিশ ও র‌্যাব কর্তৃপক্ষকে চৌকি ও ক্যাম্প তৈরি করার নির্দেশনা দেন মুখ্য সচিব। জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান বলেন, জঙ্গল সলিমপুরে পরিবেশবান্ধব প্রকল্প নিলে সেখানকার সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করা সম্ভব। জঙ্গল সলিমপুরে নির্বিচারে পাহাড় কেটে ভূমিদস্যুরা বসতিস্থাপন করেছে। ইতোমধ্যে সরকারের দুইজন মন্ত্রী সলিমপুর পরিদর্শন করেছেন। তাঁরা সেখানে উন্নয়ন প্রকল্প নিতে সিডিএকে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করতে বলেছেন। সেখানে নতুন করে বসতি স্থাপন বাধাগ্রস্ত করতে চাইলে ইট, কংক্রিট, রড এগুলো ঢুকতে দেয়া যাবে না। পুরো জঙ্গল সলিমপুরে সন্ত্রাসীদের রামরাজত্ব চলছে। বিভিন্ন মামলার দাগি আসামিরা সেখানে বসবাস করছে। আলীনগরে মসজিদ করে জমি দখলের পাঁয়তারা করা হয়েছে। একটি মসজিদে এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ রয়ে গেছে। সেটির লাইন কাটতে হবে।
বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করলে সেখানে নৈরাজ্য চলতে থাকবে। চট্টগ্রাম নগরীর জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে দূর্গম পাহাড়ি এলাকায় সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের নিরাপদ আস্তানা গড়ে উঠার খবর নিঃসন্দেহে অস্বিস্তির। সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন গ্রæপে ভাগ হয়ে এখানে যে অপরাধ কার্যক্রম চালাচ্ছে, এর প্রভাব সীতাকুÐসহ নগরীতেও পড়েছে। এছাড়া এরা পরিবেশ ধ্বংস, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসার সাথে জড়িত বলে বিভিন্ন সময় খবর পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় জেলা প্রশাসন সমন্বিত উপায়ে সন্ত্রাসী ও অবৈধ দখরদারদের উচ্ছেদ, সরকারি খাস জমি উদ্ধার এবং পরিবেশবান্ধব সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা যথার্থ বলে প্রতিয়মান হওয়া যায়। তবে সরকারি এ উদ্যোগ যত দ্রæত বাস্তবায়ন করা যায় ততই মঙ্গল।