ছৈয়দ আবদুল অদুদ চৌধুরী

8

মোহাম্মদ আইয়ুব চৌধুরী

চট্টগ্রামের হাজী মহসিন খ্যাত দানবীর মরহুম আলহাজ্ব ছৈয়দ আবদুল অদুদ চৌধুরী ছিলেন সৎ, সমাজ হিতৈষী, নিরহঙ্কার ও ধর্মভীরু একজন মানুষ। ব্যবসা থেকে প্রাপ্ত হালাল আয়ে একক অর্থায়নে প্রতিষ্ঠা করেন একাধিক স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, সড়কসহ অনেক লোকহিতৈষী প্রতিষ্ঠান। তাঁর প্রতিষ্ঠিত জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানসমূহের হলো ১. ফতেনগর নোয়াজিশপুর অদুদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়; ২.ফতেনগর নোয়াজিশপুর ফাজিল মাদ্রাসা; ৩. ফতেনগর অদুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ৪. হাটহাজারী অদুদিয়া ফাজিল মাদ্রাসা ; ৫. চন্দ্রঘোনা অদুদিয়া তৈয়্যবীয় ফাজিল মাদ্রাসা; ৬. গাহিরা- আজাদী বাজার অদুদিয়া সড়ক এবং ৭. বিভিন্ন স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয় ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে উল্লেখযোগ্য অংকের আর্থিক অনুদান এবং প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে অর্থ সহায়তা প্রদান। তিনি ১৯০৭ সালে নোয়াজিশপুরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। শৈশবকাল থেকেই তাঁকে কঠোর পরিশ্রম ও সংগ্রামের মধ্যেই গড়ে উঠতে হয়েছে। ব্যবসাকে তিনি পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন। সততা, স্বচ্ছতা কঠোর শ্রম, কাজের প্রতি নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার কারণে তিনি পেশাগত জীবনে আশানুরূপ সাফল্য অর্জন করেন। হালালভাবে উপার্জিত অর্থ ব্যয় করে শিক্ষার প্রসার, মানবকল্যাণ ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন। সে সময়ে নোয়াজিশপুর, ফতেনগর, নদিমপুর, পার্শ্ববর্তী আবদুল্লাহপুর ও চিকদাইর অঞ্চলে কোন উচ্চ বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা না থাকায় ছেলে-মেয়েরা শিক্ষা সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল। উক্ত অঞ্চলসমূহে শিক্ষার প্রসার ও জনকল্যাণের প্রত্যয়ে এবং সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য তিনি নিজ অর্থায়নে একটি উচ্চ বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের অকৃত্রিম সাহায্য- সহযোগিতায় ১৯৬৩ সালে ফতেনগর নোয়াজিশপুর অদুদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেন। উক্ত বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে উল্লিখিত অঞ্চলসমূহে শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটে এবং বিদ্যালয়টিও উত্তরোত্তর উন্নতির দিকে এগিয়ে যায়। এ বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সরকারি চাকরিজীবী, চিকিৎসক প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী হিসেবে স্ব-স্ব পেশায় সুপ্রতিষ্ঠিত। আধুনিক রাউজানের স্থপতি, রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির মাননীয় সভাপতি জননেতা জনাব এ,বি,এম ফজলে করিম চৌধুরী,এম,পি মহোদয়ের আন্তরিক সহযোগিতায় ১৫ নম্বর নোয়াজিশপুর ইউনিয়ন পরিষদের সুযোগ্য চেয়ারম্যান এবং বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব মোহাম্মদ সরোয়ার্দী শিকদারের সুষ্ঠু পরিচালনা, তত্ত¡াবধান ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বর্তমানে বিদ্যালয়টি রাউজান উপজেলার অন্যতম একটি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।ইতোমধ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিদ্যালয়টির শতভাগ পরীক্ষার্থী কৃতকার্য হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়নও দৃশ্যমান।এটা এখন এলাকাবাসীর গর্বের প্রতিষ্ঠান। আগামীতে বিদ্যালয়টিকে কেন্দ্র করে একটি মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হোক এটাই এ অঞ্চলের মানুষের অন্যতম প্রত্যাশা।শিক্ষা প্রসারে মরহুম ছৈয়দ আবদুল অদুদ চৌধুরী যে আলোকবর্তিকা প্রজ্জ্বলিত করেছিলেন বর্তমানে তা চতুর্দিকে ছড়িয়ে একটি বৃহৎ অঞ্চলকে আলোকিত করছে। তিনি একক অর্থায়নে চট্রগ্রামের বিভিন্ন স্থানে একাধিক মাদ্রাসা, এতিমখানা ও মসজিদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটিয়েছেন। অনাথ,এতিম ও সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সন্তানগণ এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সুশিক্ষা ও খাদ্য সহায়তা গ্রহণ করে গড়ে উঠার সুযোগ পাচ্ছে।
১৯৭১ সালে ২৪ নভেম্বর আলহাজ্ব ছৈয়দ আবদুল অদুদ চৌধুরী পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরকালে চলে যান। ৫২তম মৃত্যু বার্ষিকীতে পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। তাঁর জনহিতকর মহান সৃষ্টিসমূহ চিরন্তন। তিনি কর্ম, মানব প্রেম, উদারতা ও সৃজনশীলতার জন্য মানুষের কাছে অগাধ শ্রদ্ধা ও অপরিসীম ভালোবাসায় বেঁচে থাকবেন। মরহুমের মৃত্যুবার্ষিকীতে মরহুমের কবর জেয়ারত, পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, তাঁর কর্ম ও জীবন নিয়ে আলোচনা, স্মরণিকা প্রকাশ এবং মেজবানের আয়োজন করা হয়েছে।
লেখক: একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা