ছুটির দিনে দ্বিগুণ ভাড়া যাত্রীদের ভোগান্তি

56

চট্টগ্রাম থেকে সীতাকুন্ড লাইনের হিউম্যান হলার সার্ভিস ‘সেইফ লাইন’ পরিবহণের বিরুদ্ধে ছুটির দিনে যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এই রুটের নিয়মিত ভাড়া ৪০ টাকা হলেও বৃহস্পতি, শুক্র, শনিবার এবং অন্যান্য ছুটির দিনে ভাড়ার পরিমাণ বেড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত হয়ে যায়।
পরিবহন চালকরা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে যাত্রীদের পকেট থেকে এক প্রকার টাকা কেড়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। কখনো তেলের দাম বেশি, মালিকের খরচ বেশি, অধিকাংশ সময় যাত্রী কম থাকে এসব অজুহাতে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। প্রতিদিনই ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণ ভাড়া আদায় করতে গিয়ে যাত্রীদের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ছেন সেইফ লাইন পরিবহনের চালক ও হেলপাররা।
মালিকপক্ষ বলছেন, বিআরটিএ ২০১১ সালের পর নতুন করে কোন ভাড়ার তালিকা প্রণয়ন না করাতে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে কিছু চালক। এ ব্যাপারে আমরা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি। তারপরও কেউ এমন কাজ করার অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নগরীর প্রবেশমুখে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হবে। অতিরিক্ত ভাড়া নিলেই সেসব পরিবহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানা যায়, বর্তমানে সিটিগেইট, সীতাকুন্ড, বারৈয়ারহাট পর্যন্ত প্রায় ২০০টি হিউম্যান হলার বাস রয়েছে। হিউম্যান হলারের পাশাপাশি লেগুনা, নাভানা ইত্যাদি নামে বিভিন্ন পরিবহন চলাচল করছে। যেখানে আগে একটি গাড়ির জন্য মানুষকে ১০ থেকে ১৫ মিনিটি অপেক্ষা করতে হতো সেখানে কয়েক মিনিট পর পর এখন গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। পরিবহন সঙ্কটে পড়লেও এসব গাড়িতে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার কোন নিয়ম নেই। কিন্তু নিয়মের তোয়াক্কা না করেই সেইফ লাইন পরিবহন চালক ও হেলপাররা বিভিন্ন অজুহাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।
মো. মোরশেদ হোসেন নামে এক যাত্রী জানান, আমি প্রতিদিনই সীতাকুন্ড থেকে একে.খান পর্যন্ত সেইফ লাইনে যাতায়াত করি। বৃহস্পতিবার অফিস ছুটির পর থেকে অজ্ঞাত কারণে ৪০ টাকার নির্ধারিত ভাড়া ৬০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে নেয়। আমরা অনেকবার প্রতিবাদ করেছি কিন্তু কোন কাজ হয়নি। ফারজানা আক্তার নামে আরেক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে জানান, বাসের মধ্যে প্রায় সময় সিট না পাওয়ার সেইফ লাইনের ডাইরেক্ট সার্ভিসে যাতায়াত করি। কিন্তু বৃহস্পতি, শুক্রবার এবং ছুটির দিন আসলে ভাড়া দ্বিগুণ করে ফেলে তারা। এসব দেখার কেউ নেই?
একই অভিযোগ করেন ইসমাইল, রেহান, সাজ্জাদ, সানজিদা আক্তারসহ এই পথের বেশ কয়েকজন যাত্রী। প্রশাসনের লোকজনকে এ বিষয়ে কয়েকবার জানানো হয়েছে বলেও জানান তারা।
সীতাকুন্ড হিউম্যান হলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. দিদারুল আলম বলেন, অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমি লাইনম্যান এবং স্টাফদের বেতনের জন্য চালকদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার হিসেব রাখি।
চট্টগ্রাম জেলা বাস মিনিবাস হিউম্যান হলার মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ উদ্দিন বলেন, ভাড়ার হার যদি বিআরটিএ নির্ধারিত অনুযায়ী হিসেব করলে সিটি গেইট থেকে সীতাকুÐ পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার হয়। এতে ভাড়া আসে ৬৫ টাকার চেয়ে বেশি। তারপরেও আমরা ৪০ টাকার বেশি ভাড়া নিই না। যদি কেউ নিয়ে থাকে তবে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিবো আমরা।
তিনি আরও বলেন, বিআরটিএ হিউম্যান হলারের জন্য ২০১১ সালের পর থেকে নতুন কোন ভাড়া নির্ধারণ করেননি। তারপরেও আমরা সাবেক ইউএনও মহোদয়কে ওই রুটের ভাড়ার ব্যাপারে একটি চার্ট দিয়েছিলাম। সেটিও বাস্তবায়ন হয়নি। বর্তমান জেলা প্রশাসক এবং ইউএনও যদি উদ্যোগ নেন, তাহলে চালক-যাত্রী উভয়েরই সুবিধা হবে। নতুন করে যাত্রীদের বাক-বিতন্ডায় জড়াতে হবে না।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা আঞ্চলিক ট্রান্সপোর্ট কমিটির সভাপতি ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, আমি আঞ্চলিক ট্রান্সপোর্ট কমিটি এবং আইনশৃঙ্খলা সভায় সবসময় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে সচেতন থাকতে বলেছি। বিভিন্ন সময় নগরীর প্রতিটি প্রবেশমুখে আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কোন পরিবহনের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা গত আঞ্চলিক ট্রান্সপোর্ট কমিটির সভায় যাত্রী সাধারণের সুবিধার্তে বিভিন্ন রুটে নতুন করে ১৫০টি বাস নামানোর অনুমতি দিয়েছি। নতুন বাসগুলো নামলে পরিবহন সঙ্কট কিছুটা হলেও নিরসন হবে বলে আশা করছি।