ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সুযোগ নেবে মৌলবাদীরা

99

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলে মৌলবাদীরা তার সুযোগ নেবে বলে সতর্ক করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
সাবেক ছাত্র নেতা মেনন শুক্রবার বিকালে যখন এই সতর্ক বার্তা দেন তার কিছুক্ষণের মধ্যেই বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্র-শিক্ষকদের বৈঠক থেকে ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধের ঘোষণা আসে।
ষাটের দশকে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে উত্তাল আন্দোলনের সময় ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্ব দেওয়া মেনন বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হত্যার রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। তার মানে এই নয় যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। খবর বিডিনিউজের
তিনি বলেন, আমি, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাই ছাত্র রাজনীতি করেছি। মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলতে হবে এটা মানতে আমি রাজি নই। যখনই ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হবে তখনই মৌলবাদীরা সুযোগ নেবে। অতীতে এটাই হয়েছে।”
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মৌলবাদী শক্তির উত্থান নিয়ে সতর্ক করে রাশেদ খান মেনন বলেন, “বিএনপি-জামাত যখন জোট বেঁধে ক্ষমতা নিল এরপর থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম কলেজ চলে গেল শিবিরের দখলে। তখন বহু কথা বলেছি, আমাদের কথা শোনা হয় নাই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এ পরিস্থিতি একদিনের নয়। আজকে আবার তাই দেখলাম ছাত্রলীগের হাতে বুয়েট এবং প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয় জিম্মি। এরা শুধু রাতের নিশিথে আবরারকে পিটিয়ে মারেনি। এরপর তারা খেলা দেখেছে, খেয়েছে। কী অমানবিক! ওদের পাপের ভার পূর্ণ হয়েছে। ছাত্রলীগ অপকর্মের সীমা ছাড়িয়েছে তবে শিবিরের হত্যা-রগকাটার সীমাকে ছাড়াতে পারেনি।
তিনি বলেন, “ভিন্নমতের জন্য পিটিয়ে হত্যা যেমন গণতন্ত্রের জন্য ভয়ঙ্কর একইভাবে মৌলবাদীরা যখন একই কাজ করে সেটা শুধু গণতন্ত্রের জন্য নয়, দেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্বের জন্য আরও ভয়ঙ্কর।”
বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হত্যা-রগকাটা-হাতকাটার উদাহরণ দিয়ে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক বলেন, “শিবিরকে হালাল করার চেষ্টা হচ্ছে। আবরার হত্যার প্রতিবাদ চলবে, কিন্তু এর সুযোগে শিবির যেন হালাল না হয়। ছাত্ররা ক্ষুব্ধ, তাদের বেদনাবোধ আছে সহপাঠীর জন্য। এজন্য তারা রাস্তায় নেমেছে। সরকার এই হত্যার বিচার সঠিকভাবে করবে, এতে যেন ভুল না হয়। কিন্তু যখন দেখি বিএনপি-জামায়াত আবরার হত্যাকে রাজনীতিকরণ ও ধর্মীয়করণ করছে তখন বুঝতে হবে ‘ডাল মে কুচ কালা হ্যায়’।”
বিএনপি এখন তাদের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর ‘সুরে কথা বলছে’ অভিযোগ করে আওয়ামী লীগের জোট শরিক দলের এই নেতা বলেন, “তারা গঙ্গায়, তিস্তায়, ৫৪টি অভিন্ন নদীতে পানি আনতে পারেননি। এখন হাহাকার পড়ে গেছে। যখন বিএনপি জামাতের পক্ষ থেকে মিথ্যা কথা বলা হয় তখন বুঝতে হয় ষড়যন্ত্র চলছে। আবরার হত্যার সাথে রাজনীতি মেশানো হচ্ছে।”
দুর্নীতি নিয়ে রাশেদ খান মেনন বলেন, “দুই শতাংশ মানুষের হাতে দেশের সব ব্যবসা, ব্যাংক-বীমা, টিভি; এমনকি স্যাটেলাইটের মালিকানাও তাদের লাগে। ক্ষমতার শীর্ষে থেকে অল্প কিছু লোক সব কুক্ষিগত করতে চায়। প্রধানমন্ত্রীর চারপাশে বড় বড় পোকা। তাকিয়ে দেখুন। রূপপুরসহ বড় সব প্রকল্পে খরচ বাড়ছে। এসব টাকা কোথায় যাচ্ছে? দুর্নীতিবাজদের কাছে যাচ্ছে।”
তিনি বলেন, “দেশে দুর্নীতি কি কেবল জুয়া আর ক্যাসিনো? প্রশাসনের নাকের ডগায় মতিঝিল থানার কয়েকশ গজের মধ্যে হাজার হাজার কোটি টাকার ক্যাসিনো কী করে এতদিন চলেছে? সেই ক্যাসিনো তুলতে গিয়ে আমাদের গায়েও কালি ছেটানোর চেষ্টা হয়েছে। অথচ বড় বড় প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে। তাদের মালয়েশিয়ায় বিশ্বের অন্য দেশে ‘সেকেন্ড হোম’ হয়েছে। তাদের নামগুলো আনেন না কেন? দেখবেন কাদের নাম আসে। চাটার দল চেটে নিচ্ছে কৃষক শ্রমিক বাস্তুহারার সম্পদ। মাদক দিয়ে দেশটা ধ্বংস করে দিচ্ছে। এদেশে উপরতলার মিথ্যার রাজনীতি আর নিচতলার সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আমাদের লড়তে হবে।”
চট্টগ্রামের জে এম সেন হল প্রাঙ্গণে ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা কমিটির ১২তম সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন রাশেদ খান মেনন।
ওয়ার্কার্স পার্টির জেলার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহানের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন জেলার সভাপতি আবু হানিফ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল হক আমিন।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন জেলার সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম চৌধুরী, যুব মৈত্রীর সভাপতি কায়সার আলম, ছাত্রমৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক এস এম আলাউদ্দিন।
উদ্বোধনী অধিবেশনে সম্মাননা জানানো হয় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, শিল্পী আলোকময় তলাপত্র এবং আবৃত্তি শিল্পী রাশেদ হাসানকে।
উদ্বোধনী অধিবেশনের পর কৃষক, পাটকল শ্রমিক, হোটেল শ্রমিক, গার্মেন্ট শ্রমিক, ছাত্র মৈত্রী ও যুব মৈত্রী এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্যদের অংশগ্রহণে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এরপর জে এম সেন হলে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়।