ঢাকা প্রতিনিধি
দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর মনোনয়ন চ‚ড়ান্ত করেন। গতকাল রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এরপর থেকে বিভিন্ন মহলে শুরু হয় নানান আলোচনা। দেশের সম্ভাব্য ২২তম রাষ্ট্রপতি ১৯৪৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন পাবনায়। ফলে পাবনায় বইছে আনন্দের বন্যা।
ছাত্ররাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ, আইন পেশা, বিচারকের দায়িত্ব, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হতে যাচ্ছেন মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।
১৯৪৯ সালে পাবনা শহরের জুবিলি ট্যাঙ্কপাড়ায় (শিবরামপুর) জন্মগ্রহণ করেন মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ১৯৬৬ সালে এসএসসি পাসের পর পাবনার এডওয়ার্ড কলেজে ভর্তি হন। এরপর শুরু করেন রাজনীতি। এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি ও ১৯৭১ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৭২ সালে) বিএসসি পাস করেন মো. সাহাবুদ্দিন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন ২২তম রাষ্ট্রপতি হতে চলা এই ব্যক্তিত্ব। কলেজ জীবনে প্রবেশের আগেই ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পাবনায় সাক্ষাৎ করেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর এডওয়ার্ড কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক, অবিভক্ত পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি থেকে ছয় বছর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহŸায়কের পদে দায়িত্ব পালন করেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। এ সময় মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন তিনি। ছাত্রলীগের সক্রিয় কাজের ধারাবাহিকতায় ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাÐের পর সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকেও গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তিনি দীর্ঘ তিন বছর কারাগারে বন্দি ছিলেন। কারামুক্তির পর পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি।
পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) পরীক্ষা দিয়ে বিচারক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে পরপর দুইবার বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন তিনি।
বিচারালয়ে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন শেষে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে ২০০৬ সালে অবসরে যান মো. সাহাবুদ্দিন। এরমধ্যে শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান পদেও ছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তখনকার বিচারক সাহাবুদ্দিন। বিচারক জীবনের ইতি টানার পর আবারও আইন পেশায় ফেরেন তিনি।
২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী থাকার সময় সরকার তাকে দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব দেয়। ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেন।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা হয়। সে সময়ের ‘হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের’ মতো ঘটনার পরবর্তীতে সরকার ক্ষমতায় গিয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করে আওয়ামী লীগ। ওই কমিশনের প্রধান ছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।
সাংবাদিকতা পেশাতেও যুক্ত ছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। বিচার বিভাগে যোগ দেওয়ার আগে ১৯৮০ সাল থেকে দুই বছর দৈনিক বাংলার বাণীতে সাংবাদিকতা করেন। পাবনা প্রেস ক্লাব ও অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির সদস্য ছিলেন তিনি। সাহাবুদ্দিন চুপ্পু রাজনীতি, বঙ্গবন্ধু এবং নীতি নির্ধারণী বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত কলামও লিখতেন।
ব্যক্তিগত জীবনে এক ছেলের জনক মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। তাঁর স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব ছিলেন।
মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন, মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৭৩-৭৫ সালে পাবনা জেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সম্পাদক, ১৯৭৮-৮২ সাল পর্যন্ত পাবনা জেলা পরিবার পরিকল্পনা সমিতির কোষাধ্যক্ষ, পাবনা জেলা প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য, অন্নদা পাবলিক লাইব্রেরির আজীবন সদস্য। সাহাবুদ্দিন আহমেদ স্বাধীন বাংলা ছাত্রপরিষদের পাবনা জেলার সভাপতি হিসেবে পাবনায় স্বাধীন বাংলার পতাকার উত্তোলনকারী।
