ছাত্রলীগ কর্মীর জন্মদিনে না যাওয়ায় চবিতে সাংবাদিককে মারধর

9

চবি প্রতিনিধি

ছাত্রলীগ কর্মীর জন্মদিন পালন করতে না যাওয়ায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) কর্মরত এক সাংবাদিককে মারধর করেছে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী। এসময় মারধরকারীরা ‘ছাত্রলীগ না করলে হলে থাকা যাবে না’ বলে হুমকি দেন। গতকাল মঙ্গলবার এ ঘটনার বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবরে লিখিত অভিযোগ প্রদান করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (চবিসাস)।
এ ঘটনায় ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এসএম মনিরুল হাসান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়।
গত সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ.এফ. রহমান হলের ২১২ নম্বর কক্ষে মারধরের ঘটনা ঘটে। এদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির কয়েকজন সদস্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে ভুক্তভোগী সাংবাদিক প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন।
এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের আরশিল আজিম নিলয়, একই সেশনের নাট্যকলা বিভাগের আবু বকর সিদ্দিক এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শোয়েব আতিক। এদের প্রত্যেকেই শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রæপ বিজয়ের কর্মী।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক রেদওয়ান আহমদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী। পাশাপাশি তিনি ঢাকা মেইল ও দৈনিক নয়া শতাব্দীর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত।
রেদওয়ান আহমদ বলেন, রাতে নাহিদুল ইসলাম নাহিদ নামে ২০-২১ সেশনের (ইসলামের ইতিহাস) এক ছাত্রলীগ কর্মীর জন্মদিন ছিল। জন্মদিন পালনের জন্য আরশিল আজিম নিলয় আমার রুমে ডাকতে আসেন। আমি যখন সাংবাদিক পরিচয় দিলাম, তারা আমাকে বললো- ছাত্রলীগ না করলে হলে থাকা যাবে না। এরপর আরশিল আজিম নিলয় তার সঙ্গে থাকা শোয়েব আতিককে মারধর করার নির্দেশ দেন। শোয়েব আমাকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করলে আমি সঙ্গে সঙ্গে বিজয় গ্রুপের নেতা আল আমিন ভাইকে ফোন করে বিষয়টি জানাই। তিনি তাদের নিষেধ করার পরও সে আমাকে আরও দুই দফায় মারধর করে। তবে আবু বকর ভাই শুধু ঘটনাস্থলে ছিলেন, তিনি আমাকে মারধর করেননি। এ সময় ঘটনাস্থলে ছাত্রলীগের আরও দশ পনেরো জন কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে শোয়েব আতিক ও অভিযুক্ত আরশিল আজিমকে নিলয়কে একধিকবার কল দেওয়া হলেও তাদের কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।
তবে আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমি কিছুই করিনি। শুধু ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম।
বিজয় গ্রুপের নেতা আল আমিন বলেন, ঘটনার সময় রেদওয়ান আমাকে কল দিয়েছিল। আমি নিষেধ করার পরও তারা ওর গায়ে হাত তুলেছে। সাংবাদিকদের গায়ে হাত তোলা আমরা কখনোই সমর্থন করি না। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি৷
সাংবাদিক সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা এ বিষয়ে কোনও ছাড় দেবো না। কিছুদিন আগেও সাংবাদিকদের সঙ্গে ছাত্রলীগের বিজয় গ্রুপের অনুসারীরা ঝামেলা করেছিল। আমরা অভিযোগ দেওয়ার পরও প্রশাসন শুধুমাত্র কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া ছাড়া আর কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এবার যদি অভিযুক্তদের বহিষ্কার না করে, তাহলে আমরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।
ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে আসি। ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছি আমরা। তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। নিয়মানুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তদন্ত কমিটি: তদন্ত কমিটির আহবায়ক হিসেবে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ইকবাল আহমেদ, সদস্য হিসেবে আছেন সহকারী প্রক্টর অরূপ বড়ুয়া ও সদস্য সচিব হিসেবে আছেন সহকারী প্রক্টর মুহাম্মদ ইয়াকুব।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান বলেন, সাংবাদিককে শারীরিক হেনস্তার ঘটনায় ৩ সসস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে এদিন দুপুরে এ ঘটনার বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (চবিসাস)।