ছাত্রলীগের দুই গ্রূপে সংঘর্ষ, আহত ৭

39

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) একটি আবাসিক হলের টেলিভিশন কক্ষে সভা করা নিয়ে ছাত্রলীগের দু’গ্রূপের মধ্যে সংঘর্ষে সাত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আব্দুর রব হল থেকে ঘটনার সূত্রপাত হয়। তবে ওই রাতেই উভয় পক্ষের সিনিয়ির নেতাদের উপস্থিতিতে ঘটনার সমাধান করে দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু শুক্রবার রাত পৌনে ১১টার দিকে হলটিতে ফের সংঘর্ষে জড়ায় উভয় গ্রূপ।
বিবদমান গ্রূপ দুটি চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের অনুসারী বগি ভিত্তিক উপগ্রূপ সিএফসি ও সাবেক উপ-দফতর সম্পাদক মিজানুর রহমান বিপুলের অনুসারী ভিএক্স। এর মধ্যে রুবেল শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী এবং বিপুল সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবসে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের এ দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন সিএফসি কর্মী ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তাপস সরকার। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে শহীদ আব্দুর রব হলের টেলিভিশন কক্ষে একই সময়ে গ্রূপ ভিত্তিক সভা করা নিয়ে সিএফসি ও ভিএক্সের নেতাকর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি বিষয়টির সমাধান করে দেন। কিন্তু শুক্রবার রাতে আবারও সংঘাতে জড়ায় উভয় গ্রূপ।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল থেকে ভিএক্স গ্রূপের নেতাকর্মীরা সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে এবং সিএফসি গ্রূপের নেতাকর্মীরা শাহ আমানত হলের সামনে অবস্থান নেন। উভয় গ্রূপ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ইট-পাটকেল ও কাচের বোতল নিক্ষেপে লিপ্ত হয়। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে উভয় পক্ষকে সরিয়ে দেয়।
এ ঘটনায় দু’গ্রূপের অন্তত সাত নেতাকর্মী আহত হন। এ সময় সোহরাওয়ার্দী হলের ছোট গেট ভেঙে ফেলার পাশাপাশি প্রক্টরিয়াল বডির একটি গাড়িতে আক্রমণের চেষ্টা চালানো হয়। রাত দেড়টার পর পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আহতদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী সুইডেন ও তানজম সাদমান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী শেখ জাহিদ, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রিয়াদ ও রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রিয়াদের নাম জানা গেছে। এদের মধ্যে দুই জনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে সেবা দেয়া হয়।
এদিকে সংঘর্ষের পর শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন সুরাহা করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সংঘর্ষের জেরে শনিবার দুপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলে সিএফসি গ্রূপ ও সোহরাওয়ার্দী হলে ভিএক্স গ্রূপের নেতাকর্মীরা ফের অবস্থান নেন। সকাল থেকে ক্যাম্পাসজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে ক্যাম্পাসে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান পূর্বদেশকে বলেন, আমরা উভয় পক্ষের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে সংঘাতের জন্য পরস্পরকে দায়ী করছে গ্রূপ দুটি। সিএফসি’র নেতা ও চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত ছাত্রলীগকর্মী তাপস সরকার হত্যার বিচারের দাবি তুলতে শহীদ তাপস স্মৃতি সংসদ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তাপসের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঘটনার বিচারের দাবিতে তার বন্ধু-সহপাঠীরা সক্রিয় হয়েছেন। কিন্তু বিষয়টি মেনে নিতে পারছে না তাপসের হত্যাকারী এবং হত্যাকারীদের প্রশ্রয় দেয়া একটি চক্র। তাই বিনা উস্কানিতে ছাত্রলীগের মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করে বিভক্তি আনতে ও বিচারের দাবিকে বাধাগ্রস্ত করতে চক্রটি এ সংঘর্ষ বাধিয়েছে। বিষয়টি সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের ডাকলেও সাড়া দিচ্ছে না।
এ অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ করেন ভিএক্স’র নেতা ও চবি ছাত্রলীগের সাবেক উপ-দফতর সম্পাদক মিজানুর রহমান বিপুল। তিনি বলেন, আমরা যখন ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের দাবি তুলে সাংগঠনিক নিয়মে কাজ শুরু করেছি, ঠিক তখনই এ সংঘাত বাধিয়েছে সভাপতি। বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনা সমাধানের পরও শুক্রবার রাতে আমাদের নেতাকর্মীদের কক্ষের দরজা ভেঙে ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয়। তাই ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারসহ এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে। যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোন সমাধান না আসে, তবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সভাপতি রুবেলকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হবে।
এদিকে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি আবাসিক হলে অভিযান শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। হাটহাজারী থানা পুলিশের সহায়তায় সিএফসি নিয়ন্ত্রিত শাহ আমানত ও শহীদ আব্দুল রব হল এবং ভিএক্স নিয়ন্ত্রিত সোহরাওয়ার্দী হলে গতরাত ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় অভিযান চলছিল বলে জানা গেছে।