ছাত্ররাজনীতিতে পরিশুদ্ধতা অপরিহার্য

20

 

দূর অতীতে ছাত্ররাজনীতি ছিলো আদর্শভিত্তিক এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এদের আন্দোলনও ছিল বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছাত্রদের স্বার্থ নিয়ে । শিক্ষকগণ সেসময় কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেননা, তারা হয়তো কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন কিন্তু তা তারা কখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টেনে আনতেননা। বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহে ছাত্রদের সাথে শিক্ষকদেরও রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায় ফলে কোনো একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একেবারে ন্যায়ের ভিত্তিতে ছাত্র আন্দোলন গড়ে ওঠলেও তার সফলতা আসতে বিলম্ব হয়। কারণ ছাত্রদের আন্দোলন যতই যুক্তিযুক্ত হোকনা কেনো প্রথমদিকে ছাত্র আন্দোলনকে দমানোর জন্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতায় থাকা শিক্ষকরা নানা অপকৌশল অবলম্বন করে , এমনকি অনেক সময় রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ছাত্রদের ওপর বলও প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু দূর অতীতে ছাত্র আন্দোলনগুলোর সাথে শিক্ষকদেরও একাত্ম হতে দেখা গেছে এবং ছাত্রদের দাবি-দাওয়া নিয়ে শিক্ষকদেরও ছাত্রদের সাথে মিছিল করতে দেখা গেছে। সা¤প্রতিক দেশের উচ্চ বিদ্যাপিঠ সমূহের ছাত্র আন্দোলন এবং বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের কর্তৃপক্ষদের আচরণ দেখে মনে হচ্ছেনা দূর অতীতে এদেশে ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-শিক্ষক একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের একটি সুদীর্ঘ ইতিহাস ছিলো। যেদেশের ইতিহাসে ‘৫২,‘৬৬,‘৬৯, এবং ‘৭১ এর বড়বড় আন্দোলনগুলোতে ছাত্রদের অংশগ্রহণ ছিল অনেক উচ্চতায় সে দেশের ছাত্র আন্দোলন স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন গোষ্ঠীগত দ্ব›েদ্বর কারণে কিছুটা কলুষিত হতে থাকে। ছাত্ররা তাদের আদর্শের চেয়ে অর্থনৈতিক সুবিধাকে বেশি করে প্রাধান্য দিতে থাকলে ছাত্র রাজনীতি ক্রমেই বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে ভাগ হতেহতে অনেক ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা বিপথে চলে যায়। বর্তমানে দেশের বড়বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র রাজনীতির উপস্থিতি দেখা গেলেও এসব প্রতিষ্ঠানে ছাত্ররা কোন সময় কী নিয়ে আন্দোলন করে তা বলা মুশকিল। তাছাড়া যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীর, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যে সমস্ত ছাত্ররা রাজনীতি করে তাদের কাছ থেকে দূরে থাকতে চায়, কারণ ছাত্ররাজনীতি মানেই সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে একটি আতঙ্কের নাম কারণ তাদের ধারণা ছাত্ররাজনীেিত জড়িয়ে পড়লে তাদের কেরিয়ার ধ্বংস হয়ে যাবে বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে নির্দিষ্ট সময়ে বের হওয়া যাবেনা, তাছাড়া মামলা এবং পুলিশি ঝামেলা তো রয়েছেই, ফলে এখন বলতে গেলে বেশিরবাগ ছাত্রই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে রাজনীতিতে জড়াতে একেবারেই নারাজ। যদিও দূর অতীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেবল ভালো এবং মেধাবি ছাত্রদেরই রাজনীতি করতে এগিয়ে আসতে দেখা যেতো কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে তেমন কোনো মেধাবি ছাত্র-ছাত্রীকে স্বইচ্ছায় রাজনীতিতে এগিয়ে আসতে দেখা যায়না। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবিরাই রাজনীতির মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তবে হাতেগোনা কিছু প্রতিষ্ঠানে এর কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। এখন ছাত্ররাজনীতি বলতে বোঝায় যে সরকার ক্ষমতায় থাকবে তাদের দলের ছাত্র সংগঠনই কেবল সারা দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোতে রাজনীতি করবে বাকি দলের ছাত্র সংগঠনগুলো চুপচাপ হলে বসে থাকবে এতে করে রাজনীতিতে বিরুদ্ধ মতের প্রতি সম্মান প্রদর্শিত হয়না এবং বিরোধী ছাত্র সংগঠনের ছাত্রদের মধ্যে দিনদিন ক্ষোভ জমতে থাকে।
অতীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহের হলে সকল রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনগুলোর ছাত্ররা একসাথে থাকতো একসাথে ডাইনিংয়ে খেতো এবং রাজনৈতিক মতাদর্শ বিষয়ে তাদের মধ্যে বিভিন্ন যুক্তিতর্ক চলতো কিন্তু তারা কখনও দাঙ্গা হাঙ্গামায় জড়িয়ে পড়তোনা কিন্তু বর্তমানে রাজনৈতিক দলের ছাত্রদের মধ্যে সবাই একসাথে বসে গঠনমূলকভাবে রাজনীতিচর্চার কোনো বালাই নেই এরা সবসময় বিরুদ্ধ মতকে দমিয়ে রাখার চিন্তুায় মত্ত থাকে। অবশ্য এদেশে প্রতিক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের ক্যাডার ভিত্তিক রাজনীতি দিয়ে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এদেশের শিক্ষাঙ্গনগুলোতে সর্বপ্রথম বিরুদ্ধমতকে দমিয়ে রাখার অপকৌশল ব্যবহারে তৎপরতা দেখায়। সেথেকে ছাত্ররাজনীতি বিভাজিত হতে থাকে বর্তমানে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকায় এসব প্রতিক্রিয়া ছাত্র সংগঠনের দাপট কমলেও কিন্তু বর্তমান সময়ের ছাত্র রাজনীতিতেও কিছু পরিশীলতা আনতে হবে। ক্ষমতার দাপটে বিরুদ্ধ মতের ছাত্র সংগঠনগুলোকে দাবিয়ে না রেখে তাদের মধ্যে আদর্শের প্রতিফলন ঘটিয়ে তাদের মনোজাগতিক পরিবর্তন ঘটাতে হবে, তবেই আসবে ছাত্ররাজনীতিতে পরিশুদ্ধতা।

লেখক : কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক