ছবির মতো আমার গ্রাম ‘হাইদগাঁও’

30

শাল-সেগুনের জঙ্গলের ফাঁক দিয়ে রুপোর ফিতের মতো ঝরনা, বুনো অর্কিডের সুবাস, চোখ জুড়ানো সবুজের সমারোহ,পাথরে পাথরে নেচে চলা পাহাড়ি শ্রীমাই খাল আর একঝলক পাখির কিচিরমিচির-এই নিয়ে আমাদের গ্রাম পটিয়ার হাইদগাঁও। অদ্ভুদ হাইদগাঁও পাহাড় ও পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলা শ্রীমাই খাল। অপরূপ সাজে সেজে থাকে বার মাস। ছোট-বড় পাহাড়, নীল-সবুজের মাখামাখি, পাহাড়ি ছড়া-খাল,অরণ্য, ইতিহাস ঐতিহ্য এবং অসংখ্য ঝরনার হাতছানির গল্প যেন হাইদগাঁও। প্রকৃতির অফুরন্ত ভান্ডার ছড়ানো সর্বত্র। দু’চোখ ভরে দেখেও আশ মেটে না। এ গল্পের টানেই ভ্রমণপ্রিয় মানুষরা ছুটে আসেন এ গ্রামে।
হাইদগাঁও বুদবুদি ছড়ায় রয়েছে ব্রিটিশ আমলের পরিত্যক্ত গ্যাসক্ষেত্র। পাহাড়ের কোলে অবস্থিত এ জায়গাটির পরতে পরতে লুকিয়ে রয়েছে বিস্ময়,অ্যাডভেঞ্জার ও মনোরম মায়া। অসংখ্য ঝরনা ঘেরা পাহাড়ে মোড়া রোমাঞ্চ সত্যিই গায়ে কাটা দেয়ার মতো। ঝরনা সৃষ্টখালে পানি খেতে আসা বন্যপ্রাণীর সাথে চোখাচোখি হয়ে যেতে পারে যখন-তখন। তিরতির করে বয়ে চলা শ্রীমতি খালের বুকে একাকী নৌকা। শান্ত স্তব্ধ পাহাড়ের সাথে এসে মিশে যাওয়া সন্ধ্যা আকাশের নীল রঙ। হাইদগাঁও-এ রয়েছে দেড় হাজার বছর আগের ফারাতারা (ফোরাচেঙ্গি) বৌদ্ধ মন্দির। প্রতিবছর বৈশাখ মাসের ১ তারিখ বৌদ্ধ ও মঘ স¤প্রদায়ের মেলা বসে সেখানে। অতিশ দিপঙ্কর মন্দিরটির প্রতিষ্ঠা। সেখানে ষাট হাজার ভিক্ষু অধ্যয়ন করেছে বলে কথিত রয়েছে। পাহাড়ের গা-ঘেঁষে রয়েছে চট্টগ্রামের অন্যতম বড় মাজার সাতগাছিয়া দরবার। এর একটু পাশে লাল মাটি সমৃদ্ধ পাহাড়ি গুচ্ছগ্রাম। সেখানের পাহাড়ে উঠে সূর্যোদয় এবং সূর্যোস্তের রঙ্গিন সমারোহ দেখার মতো। পটিয়ার গোবিন্দরখীল হয়ে হাইদগাঁওয়ে গাছ গাছালির ভেতর দিয়ে ছায়াঘন বিওসি সড়কের পথ গিয়েছে নির্জন পাহাড়ে। গাছের সো সো সুর লহরী আপনাকে রোমান্টিক করে তুলবে। ঘুরে আসতে পারেন পূর্ব হাইদগাঁওয়ে শ্রীমতি বাড়িতে। সেখানে রয়েছে অসংখ্য শতবর্ষী বটবৃক্ষ, মন্দির, মঠ ও সনাতনী ধর্মীয় স্থাপনা। দেখে আসতে পারেন বারুণী গ্রাণ এলাকা। উত্তর হাইদগাঁওয়ে রয়েছে হয়রত আকবর শাহ মাজার। মাজারটির প্রাচীন স্থাপত্য শৈল্পিকতা মন ছুঁয়ে যায়। ঘুরে দেখতে পারেন পানের বরজ, পানের হাট, ত্রিপুরা দীঘির হাটসহ ঐতিহ্যবাহী এলাকাটি। পানবাজারের গৌরাঙ্গোর প্রসিদ্ধ ছানার মিষ্টি খেয়ে আসতে পারেন মনভরে। পান খেয়ে ঠোঁট লাল করতে পারেন ব্রাক্ষণঘাটায় গিয়ে। আমি,আমার স্ত্রী ফরিদা খানম, আমাদের মেয়ে ফাতাহ নুকতা, ছেলে যায়িদ রমাদানসহ গত ৭ সেপ্টেম্বর ঘুরে দেখলাম পুরো গ্রাম। স্রষ্টার তুলির স্পর্শে যেন সবকিছু এখানে বর্ণময়।