ছদাহা-দস্তিদারহাট সড়ক লন্ডভন্ড, চরম জনদুর্ভোগ

66

দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় সাম্প্রতিককালে সৃষ্টি হওয়া বন্যায় লন্ডভন্ড জনপদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ছদাহা ইউনিয়ন। পূর্বে পার্বত্য জেলা বান্দরবান, দক্ষিণে লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া, উত্তরে কেঁওচিয়া ইউনিয়নবেষ্টিত এ ইউনিয়নের ছোটখাটো গ্রামীণ সড়কের অবস্থা এখন করুণ। তার মধ্যে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে হাঙ্গরখালে সৃষ্ট স্রোতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় এ ইউনিয়নের প্রধান সড়ক ‘ছদাহা ইউপি-দস্তিদার হাট সড়ক’। এ সড়কের বেশ কয়েকটি স্থান বিলীন হয়ে গেছে। সড়ক থেকে একটি কালভার্ট বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া ও বেশ কয়েকটি স্থানে বিশালাকৃতির গর্ত তৈরি হওয়ায় এ সড়কে বর্তমানে কোনো যানবাহনতো দূরের কথা, পায়ে হেঁটেও যাতায়াত করতে পারছেন না সাধারণ মানুষ।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হলেও কবে নাগাদ নষ্ট হয়ে যাওয়া সড়কের মেরামত করা হবে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেনি। ফলে মানুষের ভোগান্তি কখন শেষ হবে তাও রয়ে গেছে অজানা।
জানা গেছে, টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় পুরো সাতকানিয়ার মধ্যে ছদাহায় ৫৪১ সম্পূর্ণ ও ১ হাজার ২৬৩ আংশিক মিলিয়ে মোট ১ হাজার ৮০৪ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নষ্ট হয়েছে কোটি টাকার সবজি ক্ষেত। আর লন্ডভন্ড হয়ে গেছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা।
গতকাল রবিবার সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, ছদাহা ইউপি-দস্তিদারহাট সড়কটি আর চলাচলের উপযোগী নেই। সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন চলাচলতো দূরের কথা মানুুষও চলাফেরা করতে পারছেন না। এ ক্ষেত্রে বেশি সমস্যা হচ্ছে অসুস্থ রোগী নিয়ে। এ সড়ক দিয়ে অন্ততঃ ২০ হাজার মানুষের চলাচল। সড়কটির বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় মূলত এ ইউনিয়নের মানুষগুলো বন্দি অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। এ সড়কের উখিয়ারকুল এলাকার এজাহারের দোকান, কুমার পাড়া ও মিয়াজী পাড়ায় সড়কের মাঠি ও ইট বন্যার পানির ¯্রােতে তলিয়ে গিয়ে বিশাল বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ছদাহা ফকির হাট থেকে-মিঠাদিঘী যাওয়ার মধ্যেখানে স্্েরাতের তোড়ে কালভার্ট ভেঙ্গে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া স্থানে গাছ দিয়ে কালভার্ট তৈরি করে রিক্সা ও অটো রিক্সা চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর নির্দেশে ছদাহার চেয়ারম্যান মোসাদ হোসেন চৌধুরীর নিজস্ব অর্থায়নে এ কাজ সম্পন্ন হয়ে বলে জানা গেছে।
এছাড়াও একই ইউনিয়নে আরো একাধিক গ্রামীণ সড়ক চেয়ারম্যানের উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত করে যোগাযোগ স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ছদাহা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শফি সওদাগর জানান, পাহাড়ি ঢল ও প্রবল বর্ষণে আমার ওয়ার্ডের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে তিনটি স্থানে সড়কের চিহ্ন পর্যন্ত নেই। এ অবস্থায় এ সড়ক দিয়ে কোনো অবস্থাতেই গাড়ি ও মানুষ চলাচল করা যাচ্ছে না। চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ায় রোগীদের বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
ছদাহার চেয়ারম্যান মোসাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ছদাহা ইউনিয়নে এবারের বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন সড়ক বিলীণ হয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। গত শনিবার মাননীয় এমপিসহ প্রশাসনের কর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও এলাকা পরিদর্শন করেছেন। আশা করি দ্রæত সড়ক মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করতে পারব।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী পারভেজ সরওয়ার বলেন, পুরো সাতকানিয়ায় ১৭ টি ইউনিয়নে সাম্প্রতিক বন্যায় প্রায় ৭১ কিলোমিটার পাকা, সড়ক, প্রায় ১৫ কিলোমিটার ব্রিক সলিন সড়ক ও ১২০ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক মিলিয়ে মোট ২০৬ কিলোমিটার সড়ক বিধ্বস্ত হয়েছে। যার আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে সড়কে কালভার্ট ধসে যাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বেশ কয়েকটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। আমরা দ্রæত সড়ক মেরামতের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জানিয়েছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, অন্যবারের তুলনায় এবারের বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। সাতকানিয়ার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নেই ক্ষতি হয়েছে। মাননীয় এমপি মহোদয় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, কালভার্টের তালিকা চেয়েছেন। আমরা তা দ্রুত সরবরাহ করব। আশা করি দ্রæত ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারব আমরা।