চোরাই গরু-মহিষ বাণিজ্য নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে

57

মো. শাফায়েত হোসেন, বান্দরবান
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মিয়ানমারের চোরাই গরু-মহিষ ও মাদক বাণিজ্য দিন দিন বাড়ছে। প্রতিদিন সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে চোরাই গরু এনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর সীমান্তের এই চোরাকারবারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততায় সব সিন্ডিকেট এখন আরও বেশি সক্রিয়। এতে সীমান্ত এলাকার আইন শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি চোরাচালান ঠেকাতে বিভিন্ন প্রান্তে টহল ও চেকপোস্ট স্থাপন করলেও থেমে নেই গরু-মহিষের চোরাই বাণিজ্য। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার পূর্ব-দক্ষিণে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের সীমানা। ঘুমধুম থেকে শুরু করে আলীকদম পর্যন্ত প্রায় দেড়শ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে মিয়ানমারের সাথে। এ সীমান্তে নেই বড় কোন নদী। পাহাড়ের জঙ্গল দিয়ে পায়ে হেঁটেই পার হওয়া যায় মিয়ানমারের ওপারে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গত কয়েক মাসের অধিক সময় ধরে নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা, ফুলতলি, আশারতলি, জামছড়ি, কম্বনিয়া, চেরারকুল, সোনাইছড়ি, বাইশফাড়িসহ বিভিন্ন স্থান দিয়ে চোরাই পথে মিয়ানমারের গবাদী পশুর রমরমা বাণিজ্য চলে আসছে। পার্শ্ববর্তী গর্জনিয়া, নাইক্ষ্যংছড়ি ও আশপাশের বাজার ইজারাদার ও স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিদের দ্বারা এই অবৈধ বাণিজ্য চলছে। এতে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। তেমনিভাবে মাদক বিস্তারের সুযোগও তৈরি হচ্ছে। স্থানীয়দের প্রশ্ন, কয়েক মাস ধরে মিয়ানমার সীমান্তে দেশটির সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী কয়েকটি গ্রæপ সক্রিয় থাকার পরও মিয়ানমার থেকে কীভাবে অবাধে চোরাই গরু বাংলাদেশে আসছে।
স্থানীয়রা জানান, গরু চালানের আড়ালে মাদককারবারীরাও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সীমান্ত এলাকা থেকে প্রতিদিন কোন কোন এলাকা থেকে চোরাই গরু ও মাদক উদ্ধার হলেও অধিকাংশ চোরাচালান আইন শৃংখলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে যাচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিয়ানমার সীমান্তের কোথাও বিজিপি, আবার কোথাও আরাকান আর্মি এবং আরসার সদস্যদের সঙ্গে আঁতাত করেই চোরাকারবারীরা সীমান্তের এপারে চোরাই গরু ও মাদক নিয়ে আসছে।
নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা আমতলীমাঠ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মাওলানা মোহাম্মদ ইউনুছ জানান, সীমান্ত এলাকার মানুষগুলো অসহায়, গরীব শ্রেণির এবং বেশির ভাগ শ্রমিক। তারা মনে করে সারাদিন শ্রমিকের কাজ করার চেয়ে সীমান্তে একটি গরু নিয়ে আসলে ৪-৫ হাজার টাকা বাড়তি আয় করতে পারবে। এই লোভে গরু বা মাদক পাচার বেড়েছে। আর এই চোরাচালানে যুক্ত অনেকে মাইন বিস্ফোরণে আহত বা নিহত হয়েছে। ধর্মীয় আলেম হিসেবে এসব বিষয় নিয়ে মসজিদে জুমার নামাজে সচেতনতা মূলক বক্তব্য রাখেন তিনি।
ইউপি মেম্বার সাবের হোসেন বলেন, মিয়ানমারের গরু ও মহিষ জামছড়ি ফুলতলি, ৪৬, ৪৭ ও ৪৮নং পিলার দিয়ে এনে বিভিন্নস্থানে পাচার হচ্ছে। তবে গরু পাচারের সিন্ডিকেটগুলো আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে তোয়াক্কা করছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা বলেন, নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ও রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন জনপ্রতিনিধি এবং তাদের আত্মীয়-স্বজন গরু ও মাদক পাচারে জড়িত। যার কারণে তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ প্রতিবাদও করতে পারে না। কেউ তাদের কাজে বাঁধা দিলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। প্রভাবশালী এই সিন্ডিকেট কৌশলে প্রশাসনের নজরের বাইরে থাকলেও গরু আনা নেওয়ার কাজে জড়িত সাধারণ শ্রমিকরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
চোরাচালে জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নরুল আবছার ইমন বলেন, সদর ইউনিয়নের কিছু যুবক মাদক পাচারে জড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে আইন শৃঙ্খলা বৈঠকে উত্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সেমিনারে মানুষের মাঝে সচেনতামুলক বক্তব্য রাখা হচ্ছে। তবে একশ্রেণির শ্রমিক রয়েছে, তারা কিছু টাকার লোভে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে চোরাইপথে গরু আনতে গিয়ে মাইন বিস্ফোরণে নিহত ও আহত হয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ টান্টু সাহা বলেন, দোছড়ি ও ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা। ঘুমধুমে পুলিশের তদন্তকেন্দ্র রয়েছে। সম্প্রতি গরু চোরাচালান বেড়েছে। চোরাচালান ঠেকাতে তদন্তকেন্দ্রের মাধ্যমে আগের তুলনায় টহল জোরদার করা হয়েছে। চোরাচালানের খবর পেলেই আমরা এ্যাকশানে যাই। চোরাকারবারীদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে।