চেয়ারম্যানের ভাই খুনের পর পরিস্থিতি থমথমে

31

পটিয়া প্রতিনিধি

গত ইউপি নির্বাচনের রেশ ধরে পটিয়ায় ছুরিকাঘাতে নিহত কাশিয়াইশ ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাসেমের ছোট ভাই মোহাম্মদ সোহেল (৩৬) এর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। পটিয়ায় ছুরিকাঘাতে নিহতের ঘটনায় উপজেলাজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এলাকায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সামাল দিতে মোতায়ের রয়েছে পুলিশ। আশেপাশের দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুললেও বুধপুরা বাজার এলাকার অধিকাংশ দোকানপাট গতকালও (শনিবার) বন্ধ ছিল।
এদিকে ওই ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় পুলিশ ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছেন পটিয়া থানার ওসি রেজাউল করিম মজুমদার। ওই ঘটনায় প্রধান আসামি শরীফের পিতা মোহাম্মদ মনছুর ও ফুফাত ভাই মোহাম্মদ জনিকে গ্রেপ্তার করেছে পটিয়া থানা পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার বিকালে কাসেম চেয়ারম্যানের ভাই সোহেল ও তার লোকজন মোহাম্মদ মনছুরের ছেলে মোহাম্মদ শরীফ (৩৫) নামের একজনকে মারধর করে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবার রাত ১১ টায় আহত শরীফ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাসেমের ছোট ভাইসহ ৪-৫ জনকে ছুরিকাঘাত করে। পরে তাদের চমেক হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে সোহেল মারা যায়। ওই একই ঘটনায় গুরুতর আহত হয় মোহাম্মদ সাজ্জাদ (২০), সাদ্দাম হোসেন (৩০) ও জয়নাল আবেদীন (৩৪)। আহতরা বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ছুরিকাঘাতের ওই ঘটনার পর চেয়ারম্যানের লোকজন গত নির্বাচনে প্রতিপক্ষ বিএনপি নেতা মোহাম্মদ কাইছ ও তার কয়েক সমর্থকের ঘর ভাঙচুর করে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কাশিয়াইশ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনকে কেন্দ্র নৌকার প্রার্থী আবুল কাসেম ও একই এলাকার বিএনপি সমর্থিত মোহাম্মদ কাইসের মধ্যে বিরোধ ছিল। গত ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে গোলযোগ ও কয়েকটি কেন্দ্রে দখল বেদখলের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় মোহাম্মদ কাইছ হাইকোর্টে একটি রিট মামলা করেন। নির্বাচনের সকল কার্যক্রম চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়। স্থগিত কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর গত ৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান আবুল কাসেমকে শপথ পাঠ করান। এরপরও নির্বাচন নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্ব›দ্ব লেগে থাকে।
মামলার প্রধান আসামি শরীফের মা জানান, দুই পক্ষের বিরোধের জেরে মোহাম্মদ কাইসের সমর্থক তার ছেলে মোহাম্মদ শরীফকে চেয়ারম্যানের ভাই মোহাম্মদ সোহেল ও তার লোকজন মারধর করে। কিন্তু হাসপাতালে যেতে দেয়নি। ওই ঘটনার পর রাতে নির্জনে হাপাতালে যাওয়ার পথে বাজার এলাকায় আহত শরীফের পথরোধ করে শরীফকে আরেক দফা মারধর করলে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, ওই ঘটনায় রাতে শরীফের ছুরিকাঘাতে চেয়ারম্যানের ভাইসহ ৪ জন আহত হয়। চমেক হাসপাতালে নেয়ার পর সেখানে চেয়ারম্যানের ভাই সোহেল মারা যায়। সোহেলের দুই পুত্র সন্তান রয়েছে।
কাশিয়াইশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নের পরাজিত প্রার্থী মোহাম্মদ কায়েস তার ছোট ভাইকে নিজ হাতে ধরেছেন এবং সন্ত্রাসী মোহাম্মদ শরীফ ছুরিকাঘাত করে খুন করেছেন। একইভাবে মোহাম্মদ সাজ্জাদ, সাদ্দাম হোসেন ও জয়নাল আবেদীনকে ছুরিকাঘাত করে রক্তাক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় আমি বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছি।
পরাজিত প্রার্থী মোহাম্মদ কাইস বলেন, ঘটনার সময় তিনি এলাকায় ছিলেন না। শরীফকে মারধর করার পর তাকে হাসপাতালে পর্যন্ত যেতে দেয়া হয়নি। রাতে চুপিসারে হাসপাতালে যাওয়ার পথে তাকে বাজার এলাকায় আবারও গতিরোধ করে মারধর করে সোহেল ও তার লোকজন। এ সময় শরীফ ছুরিকাঘাত করার ঘটনা ঘটতে পারে। তবে এ বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন।
পটিয়া থানার ওসি রেজাউল করিম মজুমদার জানিয়েছেন, খুনের ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা রেকর্ড হয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশ অভিযান চালিয়ে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং মামলার প্রধান আসামি মোহাম্মদ শরীফ ও কায়েসকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে গতকাল শুক্রবার বিকালে আছরের নামাজের পর নিহত সোহেলের নামাজে জানাযা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। নিহতের লাশ দাফন না হওয়া পর্যন্ত এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিলো। পরে পুলিশের সংখ্যা কমানো হলেও ঘটনাস্থলের আশেপাশে একটি টিম মোতায়েন রয়েছে।