চেয়ারম্যানকে ছাড়াই সম্মেলন করবে যুবলীগ

57

 

যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনে থাকতে পারবেন কিনা, সেই সিদ্ধান্তের জন্য সাংগঠনিক নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করবেন যুবলীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্যরা। তবে ওমর ফারুক চৌধুরীকে ছাড়াই সংগঠনটির আগামী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ।
গতকাল শুক্রবার যুবলীগের সভাপতিমন্ডলীর সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংগঠনটির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে ছাড়াই এসভা অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
সভা শেষে যুবলীগের দফতর থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত থাকাসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজে সংশ্লিষ্টতার জন্য যুবলীগের দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমানকে সংগঠনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া, আরও যাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, আজকের এ বৈঠকে সভাপতিমন্ডলীর ২৯ সদস্যের মধ্যে ১৯ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে যুবলীগের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার সম্মেলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। তবে সম্মেলনের তারিখ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্ধারণ করা হবে বলে একমত পোষণ করেন সভাপতিমন্ডলীর সদস্যরা।
যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ আনিসের বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও এ বিষয়ে তিনি আর কিছু বলতে রাজি হননি। হারুন অর রশীদ বলেন, ‘বেশ কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, যা পরবর্তীতে জানানো হবে।’ তিনি বলেন, ‘যুবলীগের সাংগঠনিক নেতা আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংগঠনের সম্মেলনসহ বড় ধরনের সিদ্ধান্ত তার মতামতের আলোকে হয়ে থাকে। তাই কেন্দ্রীয় কমিটির এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলনের বিষয়ে যুবলীগ তার সঙ্গে আলোচনা করতে যাবে।’
সূত্র জানায়, শুক্রবারের সভায় যুবলীগের চেয়ার‌্যমানের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপস্থিত নেতারা। তারা ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে সংগঠনকে কুক্ষিগত করা, তার একক সিদ্ধান্তে বিভিন্ন শাখা কমিটি ভেঙে দেওয়া ও বিভিন্ন জনকে পদ থেকে বহিষ্কার, নেতাকর্মীদের গালিগালাজ, দাপট খাটিয়ে এককভাবে কমিটি গঠন করার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। সভাপতিমন্ডলীর সদস্যরা বলেন, যুবলীগের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। তিনি (ওমর ফারুক) যুবলীগের চেয়ারম্যান থাকতে পারেন না। কিন্তু যেহেতু চেয়ারম্যানকে বহিষ্কার বা অব্যাহতি দেওয়ার এখতিয়ার সভাপতিমন্ডলীর নেই, তাই বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করা হবে। আর সম্মেলনে গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত কারও সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশ নেবেন না, তাই যুবলীগ চেয়ারম্যান সম্মেলন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারবেন না।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি যুবলীগের কতিপয় নেতার বিরুদ্ধে ক্যাসিনো, জুয়া, মাদক এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে। গোয়েন্দা রিপোর্টে এসব জানতে পেরে প্রধানমন্ত্রী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেবেন বলে ঘোষণা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার হন যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ ভূঁইয়া, কথিত যুবলীগ নেতা টেন্ডার সন্ত্রাসী জি কে শামীম। এদের মধ্যে সম্রাট ও খালিদকে গ্রেফতারের পর যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
বিভিন্ন তদন্তে উঠে আসে যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ছিলেন এসবের মূল পৃষ্ঠপোষক। তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত হয় এবং তার বিদেশ যাওয়ার ওপরে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। উদ্ভূত এ পরিস্থিতিতে শুক্রবার তাকে ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছে সভাপতিমন্ডলীর সদস্যের সভা।
হারুন বলেন, এছাড়াও বেশ কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, যা পরবর্তীতে জানানো হবে। তিনি বলেন, যুবলীগের সাংগঠনিক নেতা এবং অভিভাবক আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংগঠনের সম্মেলনসহ বড় ধরণের সিদ্ধান্ত তার মতামতের আলোকে হয়ে থাকে। তাই যুবলীগ তার সঙ্গে আলোচনা করার জন্য সময় চেয়েছে, উনি সময় দিলেই আমরা তার কাছে যাবো।
শুক্রবারের সভায় চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ বলেন, ‘যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী এ বৈঠক করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে বৈঠকে তিনি থাকবেন না বলে আগেই জানিয়েছিলেন। আজকের বৈঠকে সেই বিষয়ের সূত্র ধরে সভাপতিমন্ডলীর সদস্যরা বলেছেন, যদি কোনও কারণে চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করতে না পারেন, তাহলে তো কাউকে না কাউকে এ দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে বার বার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। পরিচয় দিয়ে তার ফোনে এসএমএস পাঠিয়ে আবারও ফোন দিলে তিনি সাড়া দেননি।