চেনারূপে নগরী, স্বাস্থ্যবিধি উধাও

21

সবুর শুভ

কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করার প্রথম দিনেই চিরচেনা রূপে ফিরেছে নগরী। রাস্তায় গাড়ির স্বাভাবিক ছোটাছুটি আর মানুষজনের চলাচল লাগাম ছাড়া। সরকারি-বেসরকারি অফিসে ভিড়। চট্টগ্রাম আদালতে শুধু মানুষ আর মানুষ। দিনভর নগরজুড়ে ব্যস্ততা। মানুষজন কেউ ছুটছেন অফিস আদালতে, কেউবা টিকা নিতে। আবার অনেকের গন্তব্য সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কিনতে টিসিবি’র ট্রাকের দিকে। ব্যাংকের সামনে গ্রাহকদের দীর্ঘ লাইন। মার্কেট ও দোকানপাটে কেনাকাটায় ব্যস্ত মানুষজন। একেবারে স্বাভাবিক সময়কার পরিস্থিতি। এ যেন নগর জীবনের চিরায়ত রূপ। এ রূপের এতদিন শ্রীহানি ঘটিয়েছিল লকডাউন। সেই লকডাউন গতকাল বুধবার থেকে উঠে যায়। এর পরপরই নগরীর সার্বিক পরিস্থিতি দেখা গেল ঠিক এ রকমই। ব্যস্ত নগরীতে কিছু মানুষকে মাস্ক পরতে দেখা গেলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। এতে সংক্রমণ আরও বাড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নগরীর সবচেয়ে বেশি জনসমাগমের স্থান আদালত ভবনে গিয়ে দেখা যায় সকাল থেকেই হাজার হাজার মানুষের ভিড়। দীর্ঘদিন আদালত নিয়মিত বিচারিক কার্যক্রমের বাইরে থাকার পর গতকাল খোলার দিনেই বিচারপ্রার্থী, আইনজীবী ও আদালত সংশ্লিষ্টরা আসতে থাকেন। মামলার হাজিরা ও বিচার কার্যক্রমে অংশ নিতে সকলেই ছিল তৎপর। এ কারণে আইনজীবীদের চেম্বারগুলোও ছিল মক্কেলে পরিপূর্ণ। আদালত এলাকার প্রায় ৩০০ ছোট-বড় দোকানের মালিক-কর্মচারিরাও এসেছেন নিজেদের জীবন-জীবিকার তাগিদে। সব মিলে আদালতপাড়ার ব্যস্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো। এ বিষয়ে আইনজীবী এনেক্স-১ এ চেম্বারে থাকা এডভোকেট আবু বকর সিদ্দিকী আজিম জানান, অনেক দিন আবার হাজার হাজার মানুষের পদচারণা দেখলাম আদালত অঙ্গনে। এ যেন মানুষের মিছিল। করোনা সংক্রমণের ভয় একদিকে, বেঁচে থাকার তাগিদ আরেকদিকে। সামনের দিনগুলো যাতে ভাল যায় এ প্রত্যাশাই করছি আমরা।
এদিকে নগরীর শপিংমল, দোকানপাট, মার্কেট, হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ সবস্থানেই ছিল মানুষের সরব পদচারণা। এখানে মানুষের আনাগোনা দেখে স্বাস্থ্যবিধিকে অস্তিত্বহীন মনে হয় বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে নগরীর টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান জানান, লকডাউন উঠে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খুলেছেন। এতদিন তাঁরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মার্কেটে লোকসমাগম বাড়ছে। তবে তাঁরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন। সামনে যাতে আর বিধিনিষেধ না আসে এ প্রত্যাশাও করলেন তিনি।
এদিকে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে করোনা সংক্রমণ কমার কোনো আভাস নেই। করোনার বর্তমান ভ্যারিয়েন্টও (ডেল্টা) অতিউচ্চ সংক্রমণপ্রবণ। তাই লকডাউনবিহীন ‘স্বাভাবিক পরিস্থিতি’ এ সংক্রমণকে ‘অস্বাভাবিক তকমায়’ নিয়ে যাওয়ার ভয়ের কথা জানালেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের আবাসিক চিকিৎসক করোনা রোগী ব্যবস্থাপনায় দক্ষহস্ত ডা. পুস্পল দত্ত। এ কারণে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি সতর্কতা অবলম্বনের জন্য পরামর্শ এ চিকিৎসকের।
প্রসঙ্গত: করোনা সংক্রমণ রোধে ১ থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত কঠোর লকডাউন দেয় সরকার। পরে ঈদুল আজহা ঘিরে ১৪ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল রাখা হলেও ২৪ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট পুনরায় গণপরিবহন চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এরপর আজই সারা দেশে অফিস আদালত, মার্কেট শপিংমল ও গণপরিবহন চালু হল।