চেতনার পুনর্জাগরণে একুশে বইমেলার আয়োজন : মেয়র

6

নিজস্ব প্রতিবেদক

উন্মুক্ত হয়েছে চট্টগ্রামের বইমেলা। গতকাল বুধবার বিকেলে উদ্বোধনের পর থেকে বইপ্রেমী, উৎসুক জনতা ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। শুরুর দিনে বই গোছানো ও উপস্থাপন কৌশল ঠিক করতেই ব্যস্ত সময় পার করেছেন প্রকাশক এবং স্টলের কর্মীরা। নগরীর কাজীর দেউড়িস্থ এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত অমর একুশে বইমেলায় ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। তবে দুই-একদিনের মধ্যে বইমেলা জমে উঠবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
২১ দিনব্যাপী এ বইমেলা প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা ও ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। দেশের খ্যাতিমান কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ প্রতিদিনের বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেবেন।
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুনর্জাগরণের জন্য একুশে বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র বলেন, একাত্তরে যে চেতনার ভিত্তিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে পুরো জাতি এক হয়ে লড়েছিল, সে চেতনার ধারা আজ দুর্বল হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুর অকাল প্রয়াণের পর স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি ক্ষমতা দখল করে, জনগণ বিশেষ করে শিশুদের মগজধোলাই করে তাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। মিথ্যার প্রাসাদ ভেঙ্গে জনগণের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুনর্জাগরিত করতে এই বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে। বইমেলার প্রতিটি বই হয়ে উঠুক মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের অস্ত্র, লড়–ক স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। ভাষা আন্দেলনের তাৎপর্য থেকে শুরু করে স্বাধীনতাযুদ্ধের পরিকল্পনা সমস্তটাকেই জনগণের কাছে পৌঁছাতে সহযোগিতা করেছে বই। এজন্য চট্টগ্রামবাসীর হাতে-হাতে বই তুলে দিতে এই বইমেলার আয়োজন। ব্যবসায়ীদের আহবান জানাচ্ছি, যারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে বাংলা ব্যবহার করছেন না তারা বাংলা ব্যবহার করুন। চট্টগ্রামবাসীকে আহবান জানাচ্ছি, আপনারা মেলায় আসুন, নতুন প্রজন্মের হাতে মোবাইল নয়, বরং বই তুলে দিন।
প্রধান বক্তা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার বলেন, রাষ্ট্রের উন্নয়নে চাই শিক্ষার উন্নয়ন। আর, ভালোমানের বই ছাড়া ভালো শিক্ষা ব্যবস্থা গড়া সম্ভব নয়। এই বইমেলা চট্টগ্রামের হাজারো বইপ্রেমীর পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে, যা আমাদের একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লড়াইয়ে সাহস যোগাবে। সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বই বর্তমানের সাথে অতীত আর ভবিষ্যতের মধ্যে ব্রিজের কাজ করে। ভাষার মাসে এই বইমেলার আয়োজনে যুক্ত সংশ্লিষ্ট সকলকে আমি ধন্যবাদ জানাই।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন-বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাহ্উদ্দিন মো. রেজা, বইমেলার আহব্বায়ক কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমেদ (মঞ্জু), কাউন্সিলর গাজী মো. শফিউল আজিম, হাসান মুরাদ বিপ্লব, নাজমুল হক ডিউক, আবদুস সালাম মাসুম, মো. শেখ জাফরুল হায়দার চৌধুরী, মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, সংরক্ষিত কাউন্সিলর তছলিমা বেগম নুরজাহান, রুমকি সেনগুপ্ত, চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ, শিক্ষা কর্মকর্তা উজালা রানী চাকমা, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম, স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মনীষা মহাজন, উপ-সচিব আশেক রসুল চৌধুরী (টিপু), নির্বাহী প্রকৌশলী মীর্জা ফজলুল কাদের, জনসংযোগ ও প্রটোকল কর্মকর্তা আজিজ আহমদ, সিবিএ সভাপতি ফরিদ আহমদ, সিনিয়র সহ সভাপতি জাহিদুল আলম চৌধুরী, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক বিপ্লব কুমার চৌধুরী প্রমুখ।
এবারের মেলার অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে নজরুল দিবস, মাতৃভাষা দিবস-২১ ফেব্রæয়ারি, লোক উৎসব, রবীন্দ্র উৎসব, তারুণ্য উৎসব, নারী উৎসব, বসন্ত উৎসব, মরমী উৎসব, আবৃত্তি উৎসব, নৃগোষ্ঠী উৎসব, লেখক সমাবেশ, যুব উৎসব, শিশু উৎসব, পেশাজীবী সমাবেশ, মুক্তিযুদ্ধ উৎসব, ছড়া উৎসব, কুইজ প্রতিযোগিতা, চাটগাঁ উৎসব, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, বইমেলার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান।