চূড়ান্ত পর্যায়ে ড্রোন ওড়ানোর নীতিমালা

21

ড্রোন পরিচালনার জন্য অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে ‘ড্রোন নিবন্ধন ও উড্ডয়ন নীতিমালা-২০১৯’। এটির অনুমোদন হলে সহজেই মিলবে ড্রোন ওড়ানোর অনুমতি। এমনকি ছোট, হালকা ওজনের ড্রোন নির্ধারিত কিছু জায়গায় ওড়াতে পূর্বানুমতিরও প্রয়োজন হবে না। নীতিমালা অনুসারে ছোট ড্রোন ব্যতীত ভারি ড্রোনগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে। শিগগিরই এ নীতিমালা অনুমোদন হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, ‘নানা কাজে ড্রোন ব্যবহার হয়। ড্রোনের ব্যবহার কোনও ভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই। কিন্তু একই সঙ্গে নিরাপত্তার জন্য ড্রোনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্যই ড্রোন নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে। দ্রুত এ নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে ড্রোন ব্যবহার শৃঙ্খলিত থাকবে।’
‘ড্রোন নিবন্ধন ও উড্ডয়ন নীতিমালা-২০১৯’ খসড়ায় বলা হয়েছে, ওড়ানোর অনুমতি দেওয়ার জন্য ড্রোনের ব্যবহার চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এ চারটি শ্রেণি হচ্ছে: ক. বিনোদনের জন্য, খ. শিক্ষা, গবেষণার মতো অ-বাণিজ্যিক কাজে সরকারি-বেসরকারি সংস্থার ব্যবহার, গ. সার্ভে, স্থিরচিত্র, চলচ্চিত্র নির্মাণ, উন্নয়ন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই ইত্যাদি বাণিজ্যিক ও পেশাদার কাজে ব্যবহার, ঘ. রাষ্ট্রীয়, সামরিক প্রয়োজনে ব্যবহার। নীতিমালায় বিনোদন বলতে বোঝানো হয়েছে, আমোদ-প্রমোদ, গ্রূপ বা ব্যক্তিগত ছবি তোলা, শিশুদের খেলনা, অপেশাদার পরিচালনা প্রশিক্ষণ, শখ ইত্যাদি কারণে ব্যবহার। এক্ষেত্রে গণমানুষের ক্ষতি ও রাষ্ট্রের গোপনীয়তা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
বর্তমানে দেশে ড্রোন ওড়ানোর অনুমতি মিললেও ড্রোন আমদানি নিষিদ্ধ। ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ড্রোন আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, সরকারের আমদানি নীতিমালা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত পদ্ধতিতে ড্রোন আমদানি করা যাবে। তবে ১৫ কেজির বেশি ওজনের ড্রোন হলে আমদানির ছয় মাস আগেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিপত্র নিতে হবে।
নীতিমালা অনুসারে আমদানি করা ড্রোন বেবিচক নিবন্ধন করে পরিচিতি নম্বর প্রদান করবে। যা ড্রোনের গায়ে দৃশ্যমানভাবে প্রর্দশন করতে হবে। তবে নীতিমালায় রাষ্ট্রীয়, সামরিক প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য ড্রোন আমদানি অনুমতি ও নিবন্ধনের বিধান রাখা হয়নি। একই সঙ্গে ক- শ্রেণির ( বিনোদনের জন্য) ড্রোন ১৫ কেজির বেশি ওজন বা ২০০ ফুটের বেশি উপরে উড়তে সক্ষম না হলে নিবন্ধন দেওয়া হবে না।
সারা দেশে ড্রোন ওড়ানোর এলাকাকেও তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, গ্রিন জোন, ইয়েলো জোন ও রেড জোন। দেশের কোন এলাকা কোন জোনের আওতায় পড়বে তা সুনির্দিষ্ট করে বেবিচক। যা একটি মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে।
নীতিমালা অনুসারে গ্রিন জোনভুক্ত এলাকায় ড্রোন ওড়াতে কোনও অনুমতি লাগবে না। তবে সেক্ষেত্রে কিছু শর্ত মানতে হবে ব্যবহারকারীকে। বিমানবন্দর/কেপিআই এলাকার তিন কিলোমিটার বাইরে ৫০ ফুটের অধিক উচ্চতায় ড্রোন ওড়ানো যাবে না। বিমানবন্দর/কেপিআই এলাকার পাঁচ কিলোমিটার বাইরে ১০০ ফুটের অধিক উচ্চতায় ড্রোন ওড়ানো যাবে না। বিমানবন্দর/কেপিআই এলাকার ১০ কিলোমিটার বাইরে ২০০ ফুটের অধিক উচ্চতায় ড্রোন ওড়ানো যাবে না।
ইয়োলো জোনে ড্রোন ওড়াতে অনুমতি লাগবে। নীতমালায় সংরক্ষিত এলাকা, সামরিক এলাকা, জনসমাগমের স্থানকে ইয়োলো জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া, রেড জোনে ড্রোন ওড়াতেও বিশেষ অনুমতি প্রয়োজন হবে। নীতিমালায় এয়ারপোর্ট, কেপিআই, নিষিদ্ধ স্থান, বিপজ্জনক স্থানকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ড্রোন ওড়ানোর অনুমোদন প্রসঙ্গে নীতিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, ছয়টি সংস্থার অনাপত্তি পাওয়ার পর বেবিচক ড্রোন ওড়ানোর অনুমতি দেবে। সংস্থাগুলো হচ্ছে– আকাশ প্রতিরক্ষা পরিচালন কেন্দ্র, সামরিক গোয়েন্দা মহাপরিদফতর, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা, বিমান গোয়েন্দা পরিদফতর, পুলিশ সদর দফতর, বর্ডার গার্ড সদর দফতর। নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, সম্ভাব্য জটিলতা এড়াতে অপারেটর ড্রোন উড্ডয়নের আগেই নিজ দায়িত্বে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে উড্ডয়নের বিষয় জানাবেন। একই সঙ্গে ড্রোন উড্ডয়নের আগে পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও ভিভিআইপি মুভমেন্ট রয়েছে কিনা, এ বিষয়টি নিজ দায়িত্বে জেনে নেবেন অপারেটর। ভিভিআইপি মুভমেন্টের তারিখের এক ঘণ্টা আগে থেকে মুভমেন্ট সম্পূর্ণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের ড্রোন উড্ডয়ন করা যাবে না।
এদিকে, নিয়ম না মেনে ড্রোন আমদানি বা ওড়ালে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে নীতিমালায়। বলা হয়েছে, বেবিচক, পুলিশ, র‌্যাব ও সরকারের নিরাপত্তা, গোয়েন্দা সংস্থার কাছে কোনও এলাকায় নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে বা বেবিচকের অনুমতি ছাড়া ড্রোন উড্ডয়ন করা হচ্ছে বলে মনে হলে পুলিশ স্ব-উদ্যোগে অথবা পুলিশের সহযোগিতায় বেবিচক এবং সরকারি নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থা ড্রোন উড্ডয়ন বন্ধসহ উড্ডয়নকারী ব্যক্তিকে সঙ্গে সঙ্গে আটক করতে পারবে। অনুমতি ছাড়া বা নীতিমালা ভঙ্গ করে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, গোপনীয়তা, রাষ্ট্রের সম্পত্তি, গোপনীয়তা, নিরাপত্তা, বিমান চলাচলের সুরক্ষা বিঘ্নিত করলে ড্রোনের মালিক, পরিচালনাকারী দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দেশের প্রচলিত আইনে শাস্তিযোগ্য হবেন।
ড্রোন ওড়ানোর অনুমতি প্রসঙ্গে বেবিচকের সদস্য (ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলোশন) গ্রূপ ক্যাপ্টেন চৌধুরী মো. জিয়াউল কবীর বলেন, ‘বর্তমানে ড্রোন ওড়াতে ৪৫ দিনে আগে আবেদন করতে হয়। বিভিন্ন সংস্থার অনাপত্তি পাওয়ার পর ড্রোন ওড়ানোর অনুমিত দেওয়া হয়। এ প্রক্রিয়াটি অনেক সময় সাপেক্ষ। আমরা নীতিমালার পাশাপাশি উড়ানোর অনুমতির প্রক্রিয়া অটোমেশন করছি। কেউ অনুমতির জন্য অনলাইনে আবেদন করলে সব সংস্থার কাছে একসঙ্গে আবেদনটি পৌঁছে যাবে। সবাই অনলাইনেই অনাপত্তি দিলে আমরা অনুমতি দেব। ফলে ম্যানুয়ালি অনপত্তির জন্য আর বিভিন্ন সংস্থার অফিসে আবেদন পাঠাতে হবে না। এতে দ্রুত সময়ে অনুমতি দেওয়া সম্ভব হবে।’