চুরি বন্ধে প্রয়োজন কঠোর আইনি পদক্ষেপ

18

গো গোমস্তরা হাজারো তত্ত¡ উপস্থাপন করেও রাজার পায়ের ধূলি নিতে পারেনি, শেষ পর্যন্ত পদচরণ ধূলামুক্ত করতেই জুতার আবিস্কার করতে হয়েছিল তাদের। কবিগুরুর এ ‘জুতা আবিষ্কার’ কবিতাটি এখনও শ্রেষ্ঠত্বেও আসনে আছে। তবে হ্যাঁ, তিনি যদি জানতেন একদিন এ জুতা চুরি করার জন্য চোর বাবুরা উপাসনালয়ে ওঁতপেতে ধর্মচর্চার আড়াতে জুতা চুরির উৎসবে মাতবে-সম্ভবত কবিগুরু জুতা আবিষ্কারের সাথে ‘জুতা চুরি’ নামক একটি কবিতা লিখে ফেলতেন। তবে কবি গুরু লিখেন নি, তাতে কি কবি সায়মুজ্জমান সম্প্রতি ‘জুতা চোর’ শীর্ষক একটি কবিতা লিখেছেন- ‘জুতার নহে দেখা,/ ভাবছি বসে একা-/ কেমন করে বাক্সে রাখা জুতা চোরে ধরল?/এত লোকরে সামনে থেকে কেমনে সরে পড়ল?/আমি ছিলাম একই ধ্যানে ফরজ নামাজ পড়তে/ আট মিনিট লেগেছিল চার সেজদা করে/জুতা ছিল আমার থেকে বাক্সে তিন হাত দূরে/কার জাদুতে জুতাজোড়া হাওয়ায় গেল উড়ে?/ ফরজ নামাজ পড়া শেষে কোন লোকটা উঠল?/ ভদ্র বেশে জুতা নিয়ে মসজিদ থেকে ফুটলো’। নামাজের উদ্দেশ্য হচ্ছে, যাবতীয় অনাচার ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা। কিন্তু আজকাল তাই কি হচ্ছে? যেখানে মুসল্লিরা নামাজের অন্তর্নিহিত যে পবিত্র উদ্দেশ্য তা থেকে ক্রমান্বয়ে সরে যাচ্ছে, সেখানে মুসল্লিবেশে জুতা চুরি করতে যাওয়া লোকটিকে কিভাবে বারণ করা যাবে? তাতো কল্পনাই করা যায় না। মসজিদে জুতা চুরির ঘটনা নতুন নয়, তবে চোরদল এবার আরো দামি জিনিসের প্রতি নজর দিয়েছে। তারা দামি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ও মোটরসাইকেল চুরির প্রতি ঝুকছে অধিকহারে। আগে জুতা চুরি কিংবা পকেট কাটার বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও এখন মোবাইল, মোটর সাইকেল, কার-মাইক্রো এমনকি মালবোঝাই বড় বড় কারগো লরিও ঢাকা ট্রাঙ্করোড থেকে চুরি হয়ে যাচ্ছে। ব্যাপারটা খুবই ভাবনার। সম্প্রতি এ চুরি ঠেকাতে হাইওয়ে পুলিশ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে সিসি ক্যামরার আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে। এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়, তবে দেখার বিষয় এতে চোরকে কতটুকু দমানো যাবে। জামালখান ও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব নগরীর একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। সাংবাদিকপাড়া হিসেবে খ্যাত এ এলাকায় নগর পুলিশ ছাড়াও প্রেসক্লাবের সিসি ক্যামরা রয়েছে। এরপরও স্বয়ং সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের মোটর সাইকেলটি দিনে-দুপুরে চুরি হয়ে গেছে। আর মোবাইল! সেতো মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে অনেক পুলিশ অফিসারেরও মোবাইল খোয়ার ঘটনা সংবাদপত্রে কিংবা সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে দেখা গেছে। গতকাল রবিবার দৈনিক পূর্বদেশে এ সংক্রান্ত প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নগরীতে নগরজুড়ে পুলিশের অভিযানে একাধিক চোর গ্রেপ্তার এবং বেশকিছু চোরাই ফোনসেট ও মোটরসাইকেল জব্দ হলেও চোরচক্রের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি পথে চোখের পলকেই হাওয়া হয়ে যাচ্ছে মোবাইল ফোন। আর পার্কিং স্পেস থেকে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মাস্টার চাবি দিয়ে লক খুলে মোটরসাইকেল নিয়ে উধাও হয়ে যাচ্ছে চোরচক্রের সদস্যরা। পুলিশ সুত্রে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এ দুটি পণ্য যেমন বেশি খোয়া যাচ্ছে তেমনি ধরাও পড়ছে একাধিক চোরচক্র। একেকটি চক্রের কাছ থেকে আট-নয়টি চোরাই মোটরসাইকেল জব্দ হওয়ার নজিরও রয়েছে। প্রতিবেদনে সিইউজের সাধারণ সম্পাদকের মোটরসাইকেল চুরির ঘটনাটি উল্লেখ করে বলা হয়, গত ১৫ মার্চ দিবাগত রাত পৌনে ১২ টার দিকে নগরীর ব্যস্ততম জামালখান সড়কের প্রেসক্লাব ভবনের সামনের পার্কিং স্পেস থেকে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সাধারণ সম্পাদক দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ম. শামসুল ইসলামের মোটরসাইকেল চুরি হয়। প্রেসক্লাব ভবনের প্রধান ফটকের সামনে প্রবেশমুখে লাগানো সিসি ক্যামেরায় তার মোটরসাইকেল চুরির দৃশ্যটি ধরা পড়ে। ধারণকৃত ফুটেজে দেখা যায়, দুই তরুণের একজন প্রথমে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে মোটরসাইকেলের পাশ দিয়ে হেঁটে যায়। অন্যজন বিপরীত দিকে নিরাপত্তা কর্মী ও লোকজনের ওপর নজর রাখে। কিছুক্ষণ পর পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া তরুণ ফিরে এসে পার্কিং স্পেস থেকে মুহূর্তেই মোটরসাইকেলটি ঘুরিয়ে নিয়ে স্টার্ট দিয়ে সড়কে দাঁড়ায়। এরপর নিরাপত্তা কর্মীর ওপর নজর রাখা তার সহযোগী এসে মোটরসাইকেলে চড়ে বসতেই চালকের আসনে থাকা ব্যক্তি সেটি চালিয়ে খাস্তগীর স্কুলের দিকে চলে যায়। সামনে রমজান ও ঈদের কেনাকাটা শুরু হবে। এ সময় মলমপার্টি সহ সংঘবদ্ধ চোরের উপদ্রব আরো বেড়ে যাবে। অভিযোগ রয়েছে, চোর চক্রকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও দুর্বল ধারায় মামলার নথিভুক্তিকরণের ফলে গ্রেফতাকৃত চোর অর্থবিত্ত খরচ করে নানা তদ্বিরে সহজে জেল থেকে বেরিয়ে আসে। এছাড়া এযাবৎ চুরির ঘটনায় হাতেনাতে ধরাপড়া কোন চোরের কঠিন কোন শাস্তি হয়েছে-এমনটি নজির খুব একটা পাওয়া যায় না। আমরা মনে করি, চুরি একটি জঘন্য অপরাধ। এ অপরাধের সাথে যারাই জড়িত তাদের কঠোরভাবে দমন না করলে এসব চোর একসময় দেশে বড় ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি করার উৎসাহ পেতে পারে। অতীতে বড়বড় ডাকাতদের জীবনবৃত্তান্তে তাই উঠে এসেছে। এছাড়া যাদের মোবাইল, মোটরসাইকেল বা অন্য কোন জিনিস চুরি হয়-তারাই বুঝে চুরির পর কী পরিমান ক্ষতি হয়েছে তাদের। সুতরাং যাই চুরি হোক চোরকে সনাক্ত করে দ্রæত আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি।