চীনের উত্থানে আবারও স্নায়ুযুদ্ধের আশঙ্কা

20

এখন এমন এক সময় চীনের কমিউনিস্ট পার্টি তাদের শতবার্ষিকী উদযাপন করছে, যখন চীন হয়ে উঠেছে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। জন সাডওয়ার্থ লিখছেন, চীনের এই সাফল্যের একেবারে কেন্দ্রস্থলে রয়েছে এই কমিউনিস্ট পার্টির একক শাসন এবং তার একচ্ছত্র ক্ষমতার মূল্যবোধ, যা বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সময় আরও জোরালো হচ্ছে। একই সাথে পশ্চিমা দুনিয়াতেও এ বিতর্ক ক্রমশ তীব্র হচ্ছে যে এই মূল্যবোধের মোকাবিলা কীভাবে করা হবে।
অবশ্য চীনা কমিউনিস্ট পার্টির জন্য আজকের দিনটি নতুন স্নায়ুযুদ্ধের কথা বলার সময় নয়। তাদের কাছে আজকের দিনটি হলো গণমানুষের বন্দনায় স্নাত হওয়ার দিন।
সাবেক মার্কিন ডেমোক্র্যাট সেনেটর ম্যাক্স বাওকাস এ ব্যাপারে পুরোপুরি একমত। তিনি বলেন, চীনের বিশাল জনগোষ্ঠীর বড় অংশই এই পার্টিতে কোন পরিবর্তনের ব্যাপার নিয়ে তেমন মাথা ঘামায় না… তারা অনেক বেশি চিন্তা করে তাদের নিজেদের জীবন নিয়ে।
চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমদ বলেন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি পরিস্থিতির পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজেকে পাল্টেছে। তবে তাদের মুল লক্ষ্য চীনা জনগণের উন্নতি, তা থেকে তারা সরে যায়নি। সেই জন্য এই পার্টির ওপর চীনা জনগণের আস্থা এখনও অটুট আছে। যতদিন কমিউনিস্ট পার্টি চীনের মানুষকে উন্নয়ন-সমৃদ্ধি এনে দিতে পারবে, ততদিন তারা অন্য কোন বিকল্পের কথা ভাববে না এটাই স্বাভাবিক।
ফয়েজ আহমদের মতে অবশ্য চীনের রাজনৈতিক পদ্ধতিতে গণতন্ত্র নেই এমন কথা পুরোপুরি ঠিক নয়। চীনা সিস্টেমে গণতন্ত্র নেই এটা যারা বলে তারা ভুল করে,। এটা পশ্চিমা ধাঁচের গণতন্ত্র নয় ঠিকই, কিন্তু পার্টির ভেতরে গণতন্ত্র আছে। কমিউনিস্ট পার্টির সবচেয়ে নিচের স্তরে ভোটের মাধ্যমেই নেতৃত্ব তৈরি হয়। এর ওপরের স্তরে প্রত্যক্ষ নির্বাচন না হলেও পরোক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব ওপর দিকে উঠে আসে।
প্রশ্ন হচ্ছে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির শতবার্ষিকী উপলক্ষে এই যে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান, এ কি শুধুই আনুষ্ঠানিকতা মাত্র? না-কি কোটি কোটি সাধারণ চীনা জনগণের জন্য ব্যক্তিগত উন্নতি আর সমৃদ্ধির এটাই আসল গল্প?
চীনের সমৃদ্ধি আর মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান দেশটিতে ক্রমান্বয়ে রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে আসবে। এটা যদি অতি ধীরে ধীরে হয়, বা কখনও নাও হয়, তাহলেও এটা চীনকে সামনাসামনি মোকাবিলা করার চাইতে ভালো বিকল্প। এছাড়া চীনের দরজা যখন বিশ্বের জন্য খুলে গেল, তখন চীন আশা করেছিল যে তারা তাদের নিজের ক্ষমতাকে আরও জোরদার করতে বিশ্বব্যবস্থাকে ব্যবহার করবে। এটাই ছিল তাদের আসল ইচ্ছা। একারণেই তারা বাইরের বিশ্বের কাছে নিজেদের বন্ধুসুলভ ও উন্মুক্ত বলে তুলে ধরে, কিন্তু পার্টির স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতা কখনও বদলায়নি।
ফয়েজ আহমদ অবশ্য বলেন যে প্রথম যখন চীন উন্নতি করছিল, তখন কমিউনিস্ট পার্টি একে বলতো রাইজ অব চায়না, কিন্তু পরে তারা একে নমনীয় করে বলতে শুরু করে পিসফুল ডেভেলপমেন্ট অব চায়না।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির একটি প্রভাবশালী পত্রিকা দি স্টাডি টাইমসের সাবেক সম্পাদক দেং ইউয়েন হচ্ছেন চীনের রাজনীতির অন্দরমহলের আরেকজন লোক, যিনি এখন নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন। তিনি মনে করেন, চীনের অর্থনৈতিক পরিবর্তন এক সময় রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে আসতে পারে, এমন সম্ভাবনা এক সময় ছিল। পার্টি এখন উত্তর-দক্ষিণ পূর্ব-পশ্চিম সবখানেই দেশকে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করছে।
তিনি বলছেন, যেহেতু চীন এখন ক্ষমতাধর, তারা সারা বিশ্বের সাথে ব্যবসাবাণিজ্য করছে, তাই অন্য দেশগুলোকেও চীনের রীতিনীতি এবং আবেগ সম্পর্কে সাবধান থাকতে হচ্ছে। এর ফলে ওই সব দেশের ওপর এর একটা প্রভাব পড়বে। চীনের পদ্ধতি এবং তার যুক্তি গ্রহণ করে হয়তো পশ্চিমা বিশ্বই এক সময় ধীরে ধীরে বদলে যেতে পারে, যা হবে তাদের জন্য একটা বিপদ।