চীনারা নাকি করছে মানা আর নয় কুকুর খানা

57

মছিউদ্দৌলা জাহাঙ্গীর

গত লিখায় কচুরিপানা খানা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। আমাদের পরিকল্পনা মন্ত্রী বিশদ পরিকল্পনা করে একটি প্রস্তাব করেছেন, দেখলাম অতি চমৎকার প্রস্তাব। বড়ই যুগোপযোগী চিন্তা, সবাই এখন শুধু বিকল্প খুঁজছেÑ বিকল্প জ্বালানী, বিকল্প কর্মসংস্থান, বিকল্প বুদ্ধি। ঠিক তেমন বিকল্পখাদ্য, কারণ খাদ্যের উপর যে চাপ পড়ছে, এক খাদ্যে এখন আর পোষায় না। তাই বিকল্প খাদ্যের ব্যবস্থা হিসেবে মন্ত্রী কচুরিপানার সন্ধান দিয়েছেন, বাহ্ অতি উত্তম। আশা করছি কচুরিপানা একদিন উত্তম খানা হয়ে আমাদের খাবারের তালিকায় স্থান করে নেবে। কিন্তু খটকা লাগল চীনাইয়্যাদের নিয়ে, যে সময় আমাদের মন্ত্রী খাদ্যসংকটের কথা ভেবে কচুরিপানাকে খাদ্য বানাতে চাইছেন, সে সময় চীনাইয়্যারা খাদ্যকে অখাদ্য ঘোষণা দিচ্ছে। আসলে চীনাইয়্যারা চারদিকে খালি প্যাঁচ লাগায়, তাদের চেহারাটা এমন, হাসছে না কাঁদছে বুঝা যায় না। ভাবছে না রাগছে, কিছুই আন্দাজ করা যায় না। তাদের মুখটা হচ্ছে ট্যারাদের মত, ট্যারাদের দেখলে যেমন বুঝা যায় না আপনাকে দেখছে না আমাকে দেখছে, ঠিক তেমন চীনাইয়্যাদের দেখলে বুঝা যায়না, তারা ডাকছে না ভাগছে। কথা হল তাদের মুখ দেখে বুঝার উপায় নেই, তারা আপনাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে না আপনার মঙ্গল কামনা করছে। ফলে চীনাইয়্যারা কখন কি করে তা বুঝার সাধ্য কারো নাই। তাই তো এত অনুসন্ধান করেও কেউ বের করতে পারছে না, করোনা কি চীনের আবিষ্কার না বহিস্কার? অর্থাৎ করোনার এ প্রাদুর্ভাব কি চীনের অভিসন্ধি না তাদেরউপর প্রকৃতির অভিসম্পাত, এ কথা আজও কেউ বুঝতে পারছে না!
কথা রিখতে বসলে কত কথা যে চলে আসে তার হিসাব নাই। বসলাম খাদ্যের কথা বলার জন্য, চীনে কুকুর খাওয়া নিষিদ্ধ হয়েছে। কি কাÐ দেখুন পৃথিবী যেখানে বিকল্প খাদ্য সন্ধান করছে, চীন সেখানে চলমান খাদ্য নিষিদ্ধ করছে! এমন হলে তো সেখানে হাহাকার শুরু হবে। ১৪০ কোটি মানুষ, এত মানুষের খাবারের যোগান আসবে কোত্থেকে? ভাবছিলাম কুকুরের খামার করব, এখন সেটা তো দেখছি মাঠে মার খেল। এমন আরো কতজন আরো কতই না স্বপ্ন দেখে বসে আছে চীনকে নিয়ে। আমাদের মত গরিব দেশগুলার বেকার যুবকরা কেউ সাপের খামার, কেউ কাকের খামার, কেউ বাদুড়ের খামার ও কেউবা বনরুইয়ের খামার করার কথা ভেবে বসে আছে। আর এত যুবকের আশায় দাগা দিয়ে চীন কিনা সেসব খানা বাদ দিয়ে বসে আছে? আমরা আজ অপ্রচলিত খানাকে খাদ্য তালিকায় স্থান দিতে যাচ্ছি, আর চীন প্রচলিত খানাকে তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দিচ্ছে। কি তামাশা এ খবরে চারিদিকে শুরু হবে হতাশা, সবাই তাতে হয়ে পড়বে বেদিশা। কারণ কাক আবর্জনা খায় বলে আমরা অনেক নোংরা-আবর্জনা থেকে মুক্ত আছি। অনুরূপ চীনারা সাপ, কুকুর, বাদুড় খায় বলে আমরা সেসবের যন্ত্রণা থেকে মুক্ত আছি। এখন যদি তারা সেসব খাওয়া বন্ধ করে দেয় তাহলে সেসব প্রাণীর সংখ্যা বেড়েযাবে। মানুষের তখন অনেক সমস্যা দেখা দেবে, মানুষের খাবারে তারা ভাগ বসাবে, সেসাথে সময়-অসময় মানুষকে কামড়াবে। আরো আছে পঙ্গপালের উপদ্রব, সম্প্রতি পাকিস্তানে পঙ্গপালের আক্রমণের কথা শুনে চীনের কথা ভেবে মনে স্বস্তি পেয়েছিলাম।
এই রাক্ষসের দল যদি কোনমতে চীন এসে পড়তে পারে, তাহলে আর কথা নাই। সর্বভুকের দল চীনাইয়্যারা খেয়ে সবগুলাকে সাবাড় করে দেবে। এ কথা ভেবে মনে বড় শান্তি বিরাজমান ছিল। কিন্তু যখন শুনলাম চীনারা খাবারে শৃঙ্খলা আনছে, তারা আর কুকুর, বিড়াল, বাদুড়, বনরুই, ইত্যাদি খাবে না, মনে তখন অশান্তি শুরু হল। কারণ তারা সেসব খাবার ছেড়ে যদি হালাল খেতে শুরু করে, আমাদের তো জুলাল তথা পাগল হয়ে যেতে হবে। কারণ বিশ্ব এত হালাল খাবার পাবে কোত্থেকে? ১৪০কোটি মানুষ হালাল খেতে শুরু করলে হালাল খাবার তো শর্ট পড়ে যাবে, হেহেহে। তখন গরু কোথায় পাব, গরুর দাম বেড়ে যাবে। ছাগল কোথায় পাব, ছাগলের দাম বেড়ে যাবে। মুরগী কোথায় পাব, মুরগির দাম বেড়ে যাবে। কোরবানী কেমনে করব, গরু পাব না, ছাগল পাব না, এমন কি ভেড়াও পাব না, ফলে শুরু হবে হাহাকার। অতএব চীনের এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া যায় না, কুকুর তাদের খেতেই হবে। তবে আমরা রুচি পরিবর্তন করবই, দ্রæত কচুরিপানা খানা শুরু করে দেব, তখন আর চিন্তা নাই। চীনারা যা সিদ্ধান্ত, নিতে পারবে আমাদের অবজেকশন থাকবে না। গত সংখ্যায় ইঁদুর খাওয়া প্রেক্টিসের কথাও বলেছিলাম, সেটি যদি রপ্ত করে ফেলতে পারি তো আরো জুস, চীনাইয়্যারা তখন যা খুশি করুক আমাদের অমত থাকবে না। কিন্তু সে পর্যন্ত চীনের কাছে আমাদের দাবি তোমরা এখন খাওয়ার অভ্যাস পরিবর্তন করো না। যা খাচ্ছ তা খেতে থাক, আমাদের রুচি অতি শীঘ্রই পরিবর্তন করছি। তখন যত খুশি তোমরা হালাল খেও, আমরা বাধা দেব না, হাহাহাহা।
তোমাদের আশ্বস্ত করার জন্য বলছি, যদিও আমরা কচুরিপানা ও ইঁদুর খানা এখনও রপ্ত করতে পারিনি, তবে অন্য অনেক কিছু রপ্ত করে ফেলেছি। রিলিফের মাল, ত্রাণের চাল, বিছানার তলে বোতলের টাল, এই বোতল সেই বোতল নয় তেলের বোতল হাহাহা, ইত্যাদি খাওয়া শুরুকরেছি। ফলে ভরসা ছাড়া চিন্তা নাই, আমরা এখন সব খাই। মোদের খাটের নিচে তেলের খনি, আমরা এখন সবাই ধনী। অতএব আর কিছুদিন, তারপর তোমরা সাপ, বিচ্ছু, কুকুর, বিড়াল খাওয়া বাদ দিলেও আমাদের আর আসবে না আকাল। প্রতিদিন মোরা দেখতে থাকব রঙিন রঙিন সকাল। এক সময় আমাদের ছিল চোরের খনি, এখন পাচ্ছি খাটের নিচে তেলের খনি, মারহাবা। তবে আমরা সবকিছু খালি খাটের নিচে কেন পাই জানি না। কিছুদিন আগে বিছানার নিচে পেয়েছি আমরা কারি কারি টাকা, এখন আবার পাচ্ছি কেবল তেলের ঝাঁকা, হাহাহা। ত্রাণের চাল, রিলিফের মাল, বোতলের টাল, চনার ডালÑ জপতে জপতে মনে পড়ে গেল ছোট কালের সেই ‘কাজের ছেলে’ কবিতাটি। মনে হয় আমাদের ক্লাস থ্রির পাঠ্য বইয়ে ছিল, কবি যোগীন্দ্রনাথ সরকারের বিখ্যাত রম্য কবিতা। সবসময় পড়তাম তো তাই এখনো কয়েকটি লাইন মনে আছে। আসলে পড়তে ভাল লাগত, ‘দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ, দুটি পাকাবেল, সরিষার তেল, ডিমভরা কৈ। পথে হেঁটে চলি, মনে মনে বলি, পাছে হয় ভুল। ভুল যদি হয় মা তবে নিশ্চয়, ছিঁড়ে দেবে চুল।’ আর মনে নেই, তবে বিষয় বস্তু বলতে পারব। ছেলেটি বাজার করতে যাচ্ছে মা’র নির্দেশমত জিনিসগুলা কিনতে,পথে অন্য ছেলেদের খেলাধুলা আর ঘুড়ি উড়ানো দেখতে দেখতে মা কি বলেছেন সব ভুলে গেছে। ফলে আবোলতাবোল বলা শুরু করল, দাদখানি তেল, মুসুরির বেল, চিনি-পাতা চাল, ইত্যাদি। কাজের ছেলে অকাজের কাম করে আসল আরকি, হিহিহি।
আসলে দুনিয়ার রীতি এটি, করতে যাই একটি করি আরেকটি। যা করার তা করি না, যা করি তা করার না, আমরা যেমন চীনাইয়্যারা তেমন। ত্রাণ দিতে গিয়ে, নিয়ে চলে আসি। চীনাইয়্যারা তেমন অরুণা বানাতে গিয়ে করোনা বানিয়ে ফেলেছে, আর এখন দোষ ঢাকতে কুকুর খাবে না, বাদুড় খাবে নাপ্রলাপ বকছে। আরে তেলে আগুন দিয়ে জল ঢাল্লে কোন ফল হবে?দুনিয়াকে জুলাল বানিয়ে এখন সাজছ দুলাল, হয়ে অতি আলাল খাবার খুঁজছ হালাল। ভাব কি মোদের মাকাল, দায় সারিয়ে বাঁচতে চাইছ ঘটিয়ে মহা আকাল?বিশ্ববাসী আজ মহাসংকটে, আর তারজন্য দায়ী চীনÑ এ কথা প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে সবাই বলছে। চীনে সৃষ্টি হয়েছে বা চীন করোনা সৃষ্টি করেছেÑ সবার এটিই কথা। ফলে চীন পড়েছে মহাঝামেলায়, কাজেই নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চীন বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছে। বিশেষ করে করোনা তাদের সৃষ্টি- এ অপবাদ থেকে রেহাই পেতে, চীন বিবিধ অপকৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করছে। হতে পারে কুকুর খাওয়া নিষিদ্ধকরণ তাদের সেই অপকৌশলেরই একটি অংশ। গবেষণাগারে করোনা সৃষ্টি- কথাটির চাইতে খাদ্যাভ্যাসের কারণে করোনা সৃষ্টি- কথাটি অনেক বেশী মার্জনীয়। সেই মার্জনাভরা অনুকম্পা অনুকূলে পেতে চীন কুকুর, বিড়াল খাওয়া নিষিদ্ধকরণ প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে, যাতে বিশ্বদৃষ্টি ভিন্ন দিকে ফেরে। বিশেষ করে গবেষণাগারে করোনার সৃষ্টিÑ এ কথা প্রমাণিত হলে চীনের উপর বিশ্ব বৈরী হয়ে পড়বে। আর বিশ্ব বৈরী হলেই চীন হবে রাড়ি, হিহিহি…। তাই গবেষণাগারে সৃষ্টি হলেও চীনের আপ্রাণ চেষ্টা থাকবে খাদ্যাভ্যাস হেতু করোনা সৃষ্টিÑ প্রমাণ করা।
সত্য কখনো চাপা থাকেনা, একদিন তা প্রকাশ হবেই। কারণ ‘কালো যায় না ধুলে, স্বভাব যায় না ম’লে’। অতএব চীনারা তাদের খাদ্যাভ্যাস কখনো পরিবর্তন করতে পারবেনা। চাপে পড়ে যদি আজ কৌশল করে, শীঘ্রই আসল বেরিয়ে আসবে। আর আমরা সে অপেক্ষাতেই রইলাম। তবে চীনারা হল গুখাইয়্যা ময়নার মত। গুখাইয়্যা ময়না সন্ধ্যা হলে বলে, ছিঃ গু কেমনে খায়, ছিঃ গু কেমনে খায়? পরে যখন সকাল হয়, গু না খায় কি খায়, গু না খায় কি খায়? চীনাইয়্যারাও তেমনচাপে পড়ে বলছে, ছিঃ কুত্তা কেমনে খায়, ছিঃ কুত্তা কেমনে খায়? তারপর যখন চাপ চলে যাবে, কুত্তা না খায় কি খায়, কুত্তা না খায় কি খায়? তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তথা হু তো দেখি চীনা সুরে কথা কয়। চীন তাহলে তলে তলে হু’র সাথে কিছু একটা করে ফেলল! হিহিহি…?

লেখক: কলামিস্ট