‘চিৎকার করেছি একটা লোকও এগিয়ে আসেনি’

104

বরগুনা শহরে প্রকাশ্যে রাস্তায় কারা কিভাবে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করেছে, সেই বিবরণ সাংবাদিকদের জানালেন তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। গতকাল বৃহস্পতিবার বরগুনা পুলিশ লাইনস এলাকায় বাবার বাড়িতে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, স্বামীকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন তিনি। অস্ত্রের সামনেই হামলাকারীদের বাধা দিতে চেয়েছেন, চিৎকার করছেন। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। কান্না জড়ানো কণ্ঠে মিন্নি বলেন, ‘আমি অনেক চেষ্টা করছি, কিন্তু ফিরাইতে পারি নাই’।
আগের দিন বুধবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে বরগুনা শহরের কলেজ রোডে রিফাতকে (২৩) স্ত্রীর সামনেই কুপিয়ে জখম করে একদল যুবক। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। রিফাতের ওপর হামলার একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা। সেখানে দেখা যায়, দু যুবক রামদা হাতে রিফাতকে একের পর এক আঘাত করে চলেছে। আর মিন্নি স্বামীকে বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে হামলাকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা করছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জামিল হোসেন বলেন, রিফাতের দেহে আঘাতের বহু চিহ্ন ছিল। এর মধ্যে বুক, গলা আর মাথার আঘাত ছিল গুরুতর। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই মৃত্যু হয়েছে ওই তরুণের। খবর বিডিনিউজের
সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামের দুলাল শরীফের ছেলে রিফাতের সঙ্গে বরগুনা পৌর এলাকার নয়াকাটা এলাকার মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির বিয়ে হয় মাস দুই আগে। বরগুনার সরকারি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্রী মিন্নিকে বুধবার কলেজ থেকে আনতে গিয়েই প্রকাশ্য রাস্তায় খুন হন রিফাত।
মিন্নি বলেন, হামলাকারীদের সবাইকে তিনি চিনতে পারেননি। তবে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজী নামে তিনজন ছিল তাদের মধ্যে।
বরগুনার ওসি আবির মোহাম্মদ হোসেন বুধবার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মিন্নিকে নিজের স্ত্রী বলে দাবি করে আসছিলেন নয়ন। এই বিরোধকে কেন্দ্র করেই রিফাতের উপর হামলা চালানো হয়।
মিন্নি সাংবাদিকদের বলেন, নয়ন বিয়ের আগে থেকেই তাকে উত্ত্যক্ত করতো, হুমকি দিত। বিভিন্ন সময় পথেঘাটে হেনস্তাও করেছে।
বুধবারের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে মিন্নি বলেন, ‘আমি আর রিফাত কলেজ থেকে ফিরছিলাম। এ সময় কিছু ছেলে এসে রিফাতকে মারতে শুরু করে। আমি চেষ্টা করেও তাদের থামাতে পারি নাই। পরে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী আর রিশান ফরাজী এসে কোপানো শুরু করে। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছি; অস্ত্র ধরেছি; চিৎকার করছি; একটা লোকও আগায় আসেনি’।
এদিকে নয়নের মা শাহিদা বেগম সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, তার ছেলের সঙ্গে গত বছরের অক্টোবরে ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে মিন্নির বিয়ে হয়। কিন্তু সেই বিয়ে ৩ মাসের মধ্যেই ভেঙে যায়। পরে নয়নের বন্ধু রিফাতের সঙ্গে মিন্নির প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর দুই মাস আগে তাদের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়।
রিফাতকে হত্যার ঘটনায় তার বাবা দুলাল শরীফ গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় মামলা করেন। আসামিদের মধ্যে চন্দন নামের একজনকে বুধবার রাতেই জেলা শহর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে বাকি আসামিদের শনাক্ত করা হচ্ছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি তিনি।
বরিশালের ডিআইজি মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো আসামিকে ছাড় দেওয়া হবে না। সব আসামি ধরা পরবে এবং বিচার হবে’।