চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু : সত্যাগ্রহ আদর্শের প্রবহণ

12

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী

১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সাল। শুধু বাংলাদেশ নয়; সভ্যতার ইতিহাসে নিকৃষ্ট এক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের পরিশিষ্ট। দানবরূপী হিংস্র ঘাতক সৃষ্ট বর্বরতা ও নৃশংসতায় অভিশপ্ত হত্যাযজ্ঞের আচ্ছাদনে নিষ্ঠুর-নির্মমতায় আবৃত এক কঠিন শোকের দিন। মুক্তির মহানায়ক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা ও পরিবারের প্রায় সকল সদস্যদের শাহাদাত বরণের দিন। শোকাবহ আগস্টের এই দিনে তাঁদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন এবং মহান ¯্রষ্টার দরবারে তাঁদের আত্মার অফুরন্ত শান্তি প্রার্থনা করছি। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কদর্য বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু হত্যার সম্ভবত প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবী নামক এই গ্রহের মানচিত্রে লালসবুজের পতাকাবাহী প্রাণবিসর্জন ও ত্যাগের মহিমায় অবিনশ্বর ইতিহাসকে পাল্টে দিয়ে বাংলাদেশের সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রাকে রুদ্ধ করা। নির্বোধ ঘাতকচক্রের বোধদয়ে অধীত ছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে অন্ধকারের শক্তির কুৎসিত অবগাহনে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী শক্তিকে পরাভূত করে প্রতিশোধপরায়নতা কার্যকর করবে। তারা স্বপ্নেও ভাবেনি; বঙ্গবন্ধু কালান্তরে বিশ্বজয়ী নেতার মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়ে নিরন্তর বাংলাদেশসহ বিশ্বকে সামগ্রিক উন্নয়ন পরিক্রমায় অকৃত্রিম পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন।
বাঙালি কবি ও লেখক অজয় দাশ তাঁর ‘বঙ্গবন্ধু: আদিগন্ত যে সূর্য’ কবিতায় বঙ্গবন্ধুকে যে সব সহজ সরল পংক্তিতে চিত্রায়িত করেছেন, তা হলো “বাঙালি কি বাঙালি হয় শাড়ি, ধুতি, লুঙ্গি ছাড়া/ থাকে না তার বর্গ কিছুই না থাকলে টুঙ্গিপাড়া/ সুর-অসুরে হয় ইতিহাস, নেই কিছু এ দু’জীব ছাড়া/বাংলাদেশের ইতিহাসে দেবতা নেই মুজিব ছাড়া/ …………….. বাংলাদেশের মুক্তিও নেই মুজিব নামের সূর্য ছাড়া”। আর ১৯৭৫ এর ২৮ আগস্ট তারিখে লন্ডনের ‘দি লিসনার’ পত্রিকায় বিবিসির সাংবাদদাতা ব্রায়ান ব্যারন এর ভবিষ্যতবাণী – “বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের হৃদয়ে উচ্চতর আসনেই অবস্থান করবেন। তাঁর বুলেট-বিক্ষত বাসগৃহটি গুরুত্বপূর্ণ ‘স্মারক-চিহ্ন’ এবং কবরস্থানটি ‘পুণ্যতীর্থে’ পরিণত হবে”।
এটি সর্বজনবিদিত যে চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু একজন শহীদ নেতার চেয়েও সময়ের বিবর্তনে কতবেশি শক্তিমান হতে পারেন আজ পুরোবিশ্ব অবাক বিস্ময়ে তা সদাদীপ্ত অক্ষয় জ্যোতির মতো উপলব্ধি করতে পারছে। সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারকার্য পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশসহ জঘন্য পন্থা অতিক্রান্তে কত যে দুরাক্রম পথ পাড়ি দিতে হয়েছে তা দেশবাসী সম্যক অবগত আছেন। সত্যের কাঠিন্যে আরাধ্য বিচার কাজ সম্পন্ন ও বিচারের রায় কার্যকর করে বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে আইনের শাসনই সভ্যসমাজ প্রতিষ্ঠার অপ্রতিবন্ধ মানদন্ড। এই সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা লিখিত ‘সত্যের জয় অনিবার্য’ নিবন্ধের কিছু বিষয় প্রণিধানযোগ্য। তিনি লিখেছেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে একটা অপপ্রচার চলছে। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর তথাকথিত সিপাহি জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণ প্রসঙ্গে মিথ্যা অপপ্রচার করা হতো যে, সিপাহি-জনতা জিয়াকে ক্ষমতায় বসিয়েছে, তার সঠিক চিত্র এতদিন পর এ রায়ের মাধ্যমে দেশবাসী জানতে পারলো।’
তাঁর উল্লেখ্য নিবন্ধে সংযুক্ত ছিল, ‘১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি সায়েম জিয়াকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। যদিও সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সায়েমকে অস্ত্র দেখিয়ে বাধ্য করেছিল পদত্যাগ করতে এবং তাকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করতে। এ কথা বিচারপতি সায়েমের বই – ইধহমধনযধনধহ : খধংঃ চযধংব-এ উল্লেখ করা হয়েছে। একজন ক্ষমতালিপ্সু উচ্চাভিলাষী সামরিক কর্মকর্তা ক্ষমতা দখলের জন্য উন্মাদ হয়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করে, আর এক রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে অস্ত্র দেখিয়ে ক্ষমতা কেড়ে নেয়। অথচ তাকেই প্রচারমাধ্যমের বরাতে “গণতন্ত্রের প্রবক্তা” বানানো হয়েছে। এই মিথ্যা বয়ান শুনতে শুনতে জাতি যখন অতিষ্ঠ তখন এ রায় একটা ধ্রæব সত্যকে উদ্ভাসিত করেছে। এজন্য দেশবাসীর পক্ষ থেকে বিচারপতিদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি যে, একটা মিথ্যার হাত থেকে তারা জাতিকে বাঁচিয়েছেন। অন্তত আগামী প্রজন্ম সত্যতে জানতে পারবে, কারণ ইতিমধ্যেই একটা প্রজন্ম এই মিথ্যা শুনে শুনে এটাকেই বিশ্বাসযোগ্য বলে ধরে নিয়েছে। জানি না, তারা পেছনে ফিরে আবার সব বিশ্লেষণ করে দেখবে কিনা বা তাদের আত্মোপলব্ধি হবে কিনা!’
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা-মেধা-দূরদর্শিতার চৌহদ্দি এতবেশি বিস্তৃত ছিল, তার সীমা-পরিসীমা নির্ধারণেও বিশেষ বিশ্লেষণ ও গবেষণার দাবী রাখে। উক্ত সত্যপ্রকাশ যথার্থ অর্থে প্রণীত হয়েছে ভারতের প্রয়াত মাহামান্য রাষ্ট্রপতি ও বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্র ও জনগণের অকৃত্রিম অভিভাবক শ্রী প্রণব মুখার্জী মহোদয়ের ‘বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে এশিয়া অন্যরকম হতো’ নিবন্ধে – ‘ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করলেও বাঙালিত্ব কখনো ভুলতে পারি না। রাইসিনা হিলসের রাষ্ট্রপতি ভবনে এ প্রথম একটি বাংলা বইয়ের গ্রন্থাগার তাই গড়ে উঠেছে আমার আমলে। সেখানে বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত বহু পুস্তক রয়েছে। এ গ্রন্থাগারে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। আমার কাছে মনে হয়, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে হলে এ গ্রন্থটি একমাত্র প্রামাণ্য দলিল। আজও আমি বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শন থেকে অনুপ্রাণিত হই, বাঙালি হিসাবে তাঁকে নিয়ে গর্ববোধ করি। আসলে নিজের জাতিসত্তা সম্পর্কে গর্ববোধ না থাকলে কোনো জাতি বড় হতে পারে না। সেটিই বঙ্গবন্ধুর জীবন থেকে নেওয়া আমার প্রথম শিক্ষা।’
১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডকে ঘিরে প্যারিসের বিখ্যাত ’লা মঁদে’ পত্রিকার রবার্ট এসকারপি, লন্ডনের ’দি ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস’, ’দি লিসনার’ পত্রিকার সংবাদদাতা ব্রায়ন ব্যারনসহ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে খ্যাতির শীর্ষে অধিষ্ঠিত বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, সাময়িকী এবং খ্যাতিমান সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও সম্মানিত রাজনীতিক/রাষ্ট্রনায়কদের মন্তব্য এতই হৃদয়গ্রাহী ও আবেগঘন ছিল যা শুধু বাঙালি নয় বিশ্বের সমগ্র শুভ, মঙ্গল ও কল্যাণকামী বিবেকবান জনগোষ্ঠীকে অজ¯্র কাঁদিয়েছে। এই ক্রন্দন ধ্বনি এতবেশি সঞ্চারিত ও প্রবল বহমান যা শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে বাঙালি জাতিকে নিগূঢ় ব্রত গ্রহণে অপরিমেয় প্রমুদিত করেছে। আজ বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে এবং বিশ্বপরিমন্ডলে উঁচুমাত্রিকতায় উন্নয়ন অধ্যায় নির্মাণে সফল ও সার্থক হয়েছে। ।
বাংলাদেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় প্রগতিশীল সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী আবুল ফজলের ভাষায়, “বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ও সর্বাধিক উচ্চারিত নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের ইতিহাসের তিনি শুধু নির্মাতা নন, তাঁর প্রধান নায়কও। ঘটনাপ্রবাহ ও নিয়তি তাঁকে বার বার এ নায়কের আসনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বলা যায়, যেন হাত ধরে টেনে নিয়ে গেছে। শত চেষ্টা করেও তাঁর নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা যাবে না। ইতিহাস দেয় না তেমন কিছু করতে। ইতিহাস নিজের অঙ্গ নিজে করে না ছেদন। শেখ মুজিব ইতিহাসের তেমন এক অচেছদ্য অঙ্গ। বাংলাদেশের শুধু নয়, বিশ্ব-ইতিহাসেরও:।” দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবী প্রয়াত অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদ তাঁর লিখিত নিবন্ধে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিশ্বখ্যাত শিল্পী, দার্শনিক ও সাংবাদিক অঁন্দ্রে মারলো’র অমিয় কিছু বক্তব্য তুলে ধরেছেন। অঁন্দ্রে মারলো বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করেছেন এইভাবে যে, ‘এক অশ্বারোহী সেনানায়ক যিনি ক্রুসেডের কালে অনায়াসে সালাহউদ্দীনের সেনাবাহিনীতে স্থান পেতে পারতেন। সেই পুরনো দিনের সেনানায়কদের মতোই তিনি মর্যাদামন্ডিত, উদারমনা এবং ভাবপ্রবণ।’
ধারাবাহিকতায় অঁন্দ্রে মারলোকে উপস্থাপনে প্রযোজ্য বিষয়সমূহ বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। ১৯৭১-এর সেপ্টেম্বরে ভারতের সর্বোদয় আন্দোলনের নেতা জয়প্রকাশ নারায়ন বাংলাদেশের সমস্যার যথাযথ আন্তর্জাতিক উপলব্ধির জন্য আয়োজিত সম্মেলনে অঁন্দ্রে মারলো ছিলেন একজন আমন্ত্রিত অতিথি। তিনি সম্মেলনে যোগদান না করে বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এক অসাধারণ চিঠিতে বাঙালিদের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তাঁর অঙ্গীকারের প্রকৃতি ব্যক্ত করেছেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘সম্মেলনে আলোচনা হবে, প্রবন্ধের মালমশলা সৃষ্টি হবে, কিন্তু ততক্ষণে পাকিস্তানি ট্যাঙ্কগুলি আরো অনেকদূর অগ্রসর হবে। আর বাংলাদেশের পক্ষে সে সব বুদ্ধিজীবীই কথা বলতে পারেন যাঁরা বাংলাদেশের জন্য যুদ্ধ করতে প্রস্তুত। আমি মুক্তিবাহিনীর অধীনে একটি দল পরিচালনার দায়িত্ব চাই।’ তিনি এক খোলা চিঠিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন, ‘আপনার বিমানবাহী রণতরী কলকাতাকে বিপন্ন করতে পারলেও যুক্তরাষ্ট্র ওখানকার মৃত্যুমুখী শরণার্থী মানবগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করতে পারে না। পৃথিবীর সবচেয়ে পরাক্রমশালী সেনাবাহিনী যদি নগ্নপদ ভিয়েতনামিদের গুঁড়িয়ে দিতে সক্ষম না হয়, আপনি কি বিশ্বাস করেন ইসলামাবাদের সেনাবাহিনী ১২ শত মাইল দূর থেকে স্বাধীনতায় উদ্দীপ্ত একটি দেশকে আবার দখল করতে পারবে? পৃথিবীর ভাগ্য যখন ঝুঁকির মুখে, বঙ্গোপসাগরে বিমানবাহী রণতরী পাঠানো কোন নীতি নয় – অতীতের ধ্বংসাবশেষ মাত্র।’
বঙ্গবন্ধুর জীবনচরিত-জীবনদর্শন-আদর্শিক চিন্তা-চেতনার পূর্ণাঙ্গ আবিষ্কার কারো পক্ষেই স্বল্পপরিসরে সহজসাধ্য নয়। দিন বদলের সাথে সাথে ধরিত্রীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পরিবর্তন পরিক্রমায় বঙ্গবন্ধু অনুসন্ধানলব্ধ পাঠ্যক্রমের নবতর অংশে সংযোজিত হচ্ছেন। তাঁর দৃঢ়চেতা-সাহসীক-অকুতোভয় নেতৃত্বের বীরত্বগাঁথা বিশ্ব নাগরিকবৃন্দের অতিশয় কৌতুহলী মনোভাবকে প্রচন্ড উদ্বেলিত করে চলছে। বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদ নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক অমর্ত্য সেন’র ভাষায়, ‘সুচিন্তিত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে জাতীয় অধিকার প্রতিষ্ঠা যে সম্ভব শেখ মুজিবুর রহমান তার প্রমাণ সমগ্র পৃথিবীর সামনে তুলে ধরেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালির বন্ধু ও অধিনায়ক ছিলেন না, তিনি ছিলেন মানবজাতির পথপ্রদর্শক ও মহানেতা। তা ছাড়া বঙ্গবন্ধুর উৎসাহ শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, তিনি চেয়েছিলেন বহুদলীয় গণতান্ত্রিক সভ্যতা, সর্বজনীন শিক্ষা-ব্যবস্থা, সব মানুষের মানবাধিকারের স্বীকৃতি। তাঁর সাবলীল চিন্তাধারার সঠিক মূল্য শুধু বাংলাদেশ নয়, সমস্ত পৃথিবীও স্বীকার করবে এ আশা আমাদের আছে এবং থাকবে। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের মুক্তির আন্দোলনের নেতৃত্বের মধ্যে শেখ মুজিবের বিশাল মহিমার একটি প্রকাশ যেমন আমরা দেখতে পাই, তাঁর মহামানবতার আরেকটি পরিচয় আমরা পাই তাঁর চিন্তাধারার অসাধারণতায়।’
অসামান্য সাহসী মহাপুরুষ হিসেবে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা এবং বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর মতো এত আত্মত্যাগ অন্য কারো পক্ষে সম্ভব হয়নি। এই মহান আত্মবিসর্জনে সবচেয় করুণ-হৃদয়বিদারক-গভীর ক্রন্দনের যে বিষয়টি পুরোবিশ্বকে আবেগতাড়িত করে তা হলো অবুঝ-নিষ্পাপ শিশুপুত্র শহীদ শেখ রাসেলের হত্যাকান্ড। নিবন্ধের সমাপ্তিতে শেখ রাসেল স্মরণে রচিত ভারতবর্ষের সর্বাধিক জনপ্রিয় বাঙালি কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার পংক্তিগুলো উচ্চারণ করতে চাই – ‘রাসেল, অবোধ শিশু, তোর জন্য আমিও কেঁদেছি/ খোকা, তোর মরহুম পিতার নামে যারা/ একদিন তুলেছিল আকাশ ফাটানো জয়ধ্বনি/ তারাই দু’দিন বাদে থুতু দেয়, আগুণ ছড়ায়/ বয়স্করা এমনই উন্মাদ!/ তুই তো গল্পের বই, খেলনা নিয়ে সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন বয়েসেতে ছিলি/ তবুও পৃথিবী আজ এমনই পিশাচী হলো/ শিশু রক্ত পানে গøানি নেই?/ সর্বনাশী, আমার ধিক্কার নে!/ যত নামহীন শিশু যেখানেই ঝরে যায়/ আমি ক্ষমা চাই, আমি সভ্যতার নামে ক্ষমা চাই!’

লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়