চিন্মোহন সেহানবীশ

39

বাঙালি বামপন্থী বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক ও ইতিহাসবিদ। তিনি প্রগতি লেখক সংঘ ও ভারতীয় গণনাট্য সংঘের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। শিক্ষাব্রতী ও সমাজসেবিকা উমা সেহানবীশ তার স্ত্রী। চিন্মোহন সেহানবীশের আদি নিবাস বাংলাদেশের রংপুর হলেও পিতার কর্মক্ষেত্র লাহোরে ৮ ডিসেম্বর, ১৯১৩ খ্রি. জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন অধ্যাপক বিনয়মোহন সেহানবীশ। পিতামহ বিপিনমোহন ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। রানীগঞ্জের স্কুল থেকে কৃতিত্বের সংগে বৃত্তি সহ ম্যাট্রিক পাশ করেন। সেন্ট জেভিয়ার’স কলেজ, কলকাতা থেকে বিএসসি ও ১৯৩৫ সালে অর্থনীতিতে এম এ পাশ করেন তিনি। ৫০ এর দশকে স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউটের সাথে যুক্ত ছিলেন।
সেহানবীশ কৈশোরে গান্ধীবাদের আদর্শে প্রানিত ছিলেন। ছাত্রজীবনে সেন্ট পল কলেজ হোস্টেলে থাকার সময় প্রফেসর একরয়েড ও পিসতুতো দাদা, সিপি আই নেতা অজয় ঘোষ এর প্রভাবে মার্কসবাদী দর্শনে আকৃষ্ট হন। ১৯৪১ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। এম এ পাশ করে হিন্দুস্থান কর্পোরেশনে চাকরি নেন ও নিজে বুকম্যান প্রকাশন সংস্থা স্থাপন করে চাকরি ছেড়ে দেন। পরে এই সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল পাবলিশিং হাউসের সাথে মিলিত হয়ে যায়। ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে তিনি গ্রেপ্তার হন ও প্রেসিডেন্সি জেল, বক্সা দুর্গ বন্দীশিবির ইত্যাদি জায়গায় কারারুদ্ধ থাকেন। ১৯৫১ সালে মুক্তি পান চিন্মোহন সেহানবীশ। বিশ্বশান্তি আন্দোলন ও ভারত – সোভিয়েত ইউনিয়ন মৈত্রী আন্দোলনে, ফ্যাসিবিরোধী লেখক শিল্পী সংঘের কাজে তার ভূমিকা ছিল। প্রগতি লেখক সংঘের প্রধান সংগঠক ও ভারতীয় গননাট্য সংঘের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। ৩০-৪০ এর দশক থেকে অগ্রণী, পরিচয়, নতুন সাহিত্য, আন্তর্জাতিক ইত্যাদি পত্রিকায় প্রগতিমূলক রচনা লিখেছেন। রবীন্দ্রসাহিত্য ও রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকর্ম সম্পর্কে তিনি আগ্রহী ছিলেন। রবীন্দ্র শতবার্ষিকী কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত রবীন্দ্র মেলা কমিটির সম্পাদক হন। এই কমিটিতে ছিলেন গোপাল হালদার ও মৈত্রেয়ী দেবী। অর্থনীতির ছাত্র হলেও তার গবেষণার বিষয় ছিল ইতিহাস। স্বাধীনতা সংগ্রামী ও ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের বিপ্লবীদের নিয়ে অজানা তথ্য তিনি গ্রন্থভুক্ত করে গেছেন। মহাজাতি সদনে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিয়ে স্থায়ী প্রদর্শনী গড়ে তোলার উদ্যোক্তা ও প্রধান সংগঠক ছিলেন তিনি। তার তত্ত¡াবধানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক মুক্তির সন্ধানে ভারত বইটি প্রকাশিত হয়। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাস রচনায় ড. গঙ্গাধর অধিকারী কে তিনি সাহায্য করেন। চিন্মোহন সেহানবীশ বিদ্যাসাগর পুরস্কার ও সোভিয়েত ল্যান্ড নেহরু পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছিলেন। ১৯ মে, ১৯৮৭ সালে মারা যান চিন্মোহন সেহানবীশ। সূত্র: বাংলাপিডিয়া