চিনের নতুন ধরন মিলেছে ভারতে

52

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনার তৃতীয় ঢেউ কেটে যাওয়ার পর বিশ্বজুড়ে ভীতি অনেকটাই দূর হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি চিনসহ বিভিন্ন দেশে আবারও করোনার প্রকোপ বেড়ে চলেছে। এতে নতুন করে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে করোনা। এরই মধ্যে চিন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, আমেরিকা ও ব্রাজিলের মতো দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
এদিকে করোনা ভাইরাসের যে নতুন ধরন চিনে মাথাচাড়া দিয়েছে, তার খোঁজ মিলেছে ভারতেও। ইতিমধ্যে ৪ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের ওই নতুন ধরনের খোঁজ মিলেছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে ওমিক্রন বিএফ.৭। আক্রান্তরা গুজরাত এবং ওড়িশার বাসিন্দা। ভারতে ওমিক্রন বিএফ.৭-এর প্রথম আক্রান্তের খোঁজ মেলে অক্টোবর মাসে। গুজরাতের বায়োটেকনোলজি রিসার্চ সেন্টারে ধরা পড়ে ওই ধরন। এর পরে গুজরাতেই আরও এক আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া যায়। এ ছাড়া, ওড়িশায় দু’জনের দেহে মেলে করোনার নতুন ধরন।
এই অবস্থায় প্রাথমিক সতকর্তা জারি করেছিল ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে একটি বৈঠকে দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার কেন্দ্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মান্ডবিয় নয়াদিল্লিতে ডেকেছিলেন সেই বৈঠক। বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এক বিবৃতিতে জানান, কোভিড এখনও যায়নি। সমস্ত ক্ষেত্রে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। গোটা দেশে কড়া নজারদারি চালানো হচ্ছে। দেশবাসীকে অনুরোধ করছি, কোভিডের ভ্যাকসিন নিন। পাশাপাশি বর্তমান পরিস্থিতিতে ত্রি-ফোল্ড মাস্ক ব্যবহার করতেও বলা হচ্ছে। লাতিন আমেরিকা ও এশিয়ার কোরিয়া, চিন, জাপানের মতো দেশ থেকে যারা আসছেন তাদের বিশেষভাবে নজরে রাখতে বলা হচ্ছে। রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এখন সামান্য, এই অবস্থায় প্রত্যেক আক্রান্তের নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে পাঠাতে হবে। বিশেষভাবে অতি সংক্রামক সার্স-কোভ-২ ভারিয়েন্ট সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। দ্রুত চিহ্নিতকরণ ও অন্যান্য ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
একইভাবে কলকাতার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে যাতে নতুন করে করোনা সংক্রমণ না ছড়ায় সেদিকে নজর রাখতে স্বাস্থ্যসচিবের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞদের কমিটি গড়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কতটা নিরাপদ তা এখনো স্পষ্ট নয়। এরইমধ্যে সংক্রমণ প্রতিরোধে গত মঙ্গলবার সারাদেশে করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। ওইদিন সারাদেশের মত চট্টগ্রামেও শুরু হয়েছে করোনা টিকার চতুর্থ ডোজের কার্যক্রম। চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও নগরের স্থায়ী টিকা কেন্দ্রগুলোতে এ কার্যক্রম শুরু হয়। মঙ্গলবার ও বুধবার চট্টগ্রামে ১৫ উপজেলা ও নগরীতে ৬৪৪ জনকে করোনার চতুর্থ ডোজ দেওয়া হয়।
জানা যায়, করোনার সম্মুখসারির যোদ্ধা, ষাটোর্ধ্ব নানা জটিল রোগে আক্রান্ত এবং অন্তঃসত্ত¡ারা এ টিকা পাবেন। তৃতীয় ডোজ নেওয়ার চার মাস পর নেওয়া যাবে চতুর্থ ডোজ। ৬০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তি, যারা ইতিমধ্যে তৃতীয় ডোজ নিয়েছেন, তাদের এ কর্মসূচির আওতায় টিকা দেওয়া হবে।
তবে এরই মধ্যে চতুর্থ ডোজ নিয়ে চলছে নানাবিধ আলোচনা। এই ডোজের প্রয়োজন আছে কি না, কাদের জন্য বেশি প্রয়োজন ইত্যাদি।
গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিড-১৯ টিকার চতুর্থ ডোজ নিরাপদ। এই ডোজ অ্যান্টিবডির ঘনত্ব এবং প্রতিরোধক্ষমতাকে যথেষ্ট বৃদ্ধি করে। গবেষণায় এখন পর্যন্ত চতুর্থ ডোজের ভ্যাকসিন-সম্পর্কিত গুরুতর প্রতিক‚ল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ইনজেকশনের জায়গায় ব্যথা এবং ক্লান্তির মতো সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছিল।
কিছু অংশগ্রহণকারীর চতুর্থ ডোজের আগেও উচ্চ অ্যান্টিবডি স্তর পরিলক্ষিত হয় এবং চতুর্থ ডোজ থেকে সামান্যই বৃদ্ধি পাওয়ার প্রমাণ দেখা যায়।
গবেষকেরা বলেছেন, এই প্রবণতা পূর্ববর্তী সময়ে কোভিডে সংক্রমিত মানুষের মধ্যেও লক্ষ্য করা গেছে, যা থেকে বোঝা যায় যে বেজলাইন মাত্রা বেশি হলে চতুর্থ ডোজ কোভিড প্রতিরোধের ক্ষমতা তেমন বাড়াতে পারে না।
সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী জানান, গত মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) থেকে চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও নগরের স্থায়ী টিকা কেন্দ্রগুলোতে করোনা টিকার চতুর্থ ডোজের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত দুই দিনে উপজেলা ও নগরীতে ৬৪৪ জন নারী ও পুরুষকে চতুর্থ ডোজ প্রদান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, তৃতীয় ডোজ প্রাপ্তির পর ৪ মাস পার হয়েছে এমন ব্যক্তিদের চতুর্থ ডোজ প্রদান করা হবে। চতুর্থ ডোজে ফাইজারের টিকা দেওয়া হবে। তবে যেখানে ফাইজার থাকবে না সেখানে সিনোব্যাকের টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর উপজেলা ছাড়াও নগরীর জেনারেল হাসপাতাল, চমেক হাসপাতাল ও সিটি কর্পোরেশন জেনারেল হাসপাতাল সহ নগরীর স্থায়ী টিকা দান কেন্দ্রগুলোতে এ কার্যক্রম চলছে।