চিকিৎসকের কাছে যেতে না চাইলে আপেল খান

16

হাসিনা আক্তার লিপি

পাশ্চাত্য দেশগুলোতে প্রচলিত আছে ‘এন আপেল এ ডে, কিপস দ্য ডক্টর অ্যাওয়ে’। অর্থাৎ দিনে একটি আপেল খেয়ে চিকিৎসককে দূরে রাখুন। গুণাগুণ না থাকলে কোনো ফলকে ঘিরে একটি প্রবাদ তৈরি হওয়ার কথা নয়। বুঝতেই পারছেন প্রতিদিন আপেল খাওয়ার গুরুত্ব কতখানি? আপেলে এত সব পুষ্টি উপাদান আছে, যা অন্য কোনো ফলে নেই। আপেল ফল হিসেবে অতুলনীয়। তবে শিশুদের জন্য আপেলের পাই, কাস্টার্ড কিংবা কেক তৈরি করা যায় খুব সহজে। আইসক্রিম বা ডেজার্টের সঙ্গে আপেল যোগ হলে স্বাদও বাড়ে আবার খাবারের মানও বাড়ে। বাজারের প্রিজারভেটিভ দেওয়া ফলের রস না খেয়ে বাড়িতে আপেলের রস করে রাখা যেতে পারে। গরমের দিয়ে ঠান্ডা আপেলের রস পানিশূন্যতা দূর করার পাশাপাশি শরীর সুস্থ রাখতেও সাহায্য করবে। দিনে এক থেকে দুটি আপেল খেলে হৃদ্রোগের সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যায়। সহজে খিদে মেটাতে আপেলের জুড়ি নেই। ক্যালরি কম থাকে বলে কাজের বা পড়ালেখার ফাঁকে আপেল খাওয়া যেতে পারে। প্রচুর আঁশ থাকায় এটি হজমের জন্যও ভালো। পেট পরিষ্কার রাখে বলে এটি কোলন ক্যানসারও প্রতিরোধ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে একটি করে আপেল খেলে রক্তের ক্ষতিকর এলডিএল কোলেস্টেরল কমে যায় ও উপকারী এইচডিএল কোলেস্টেরল বাড়ে। আপেলে শর্করা, চিনি, ফলিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি, লোহা ও ম্যাগনেশিয়াম আছে। এটি রক্তচাপ ও রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই হৃদ্রোগী ও ডায়াবেটিস রোগীরা আপেল খেলে উপকার পাবেন। এটি হজমের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়া তৈরিতে সাহায্য করে। হজমশক্তিও বাড়ায়। আপেলের খোসায় পলিফেনলস নামে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে, যা শরীরের কোষ রক্ষা করে।
আপেলে কোয়েরসিটিন নামের ফ্ল্যাভেনয়েড আছে। যা বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার হতে শরীরকে রক্ষা করে। পাশাপাশি এই পুষ্টি উপাদান শরীরের অভ্যন্তরে মুক্ত অণু (ফ্রি র‌্যাডিক্যাল) ধ্বংস করে শরীরকে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।
আপেলে প্রচুর বিটা ক্যারোটিন আছে, যা মস্তিষ্ক ভালো রাখে, ফুসফুসও সতেজ রাখে। হাঁপানি ও আলঝেইমারস রোগও প্রতিরোধ করে এই ফল। আপেলে থাকা ভিটামিন ‘সি’ রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে। এটি যকৃৎ ভালো রাখে। জ্বর হলে এই ফল খেলে তা কমাতে সাহায্য করে। তাই জ্বরের রোগীরা আপেল খেলে ভালো বোধ করেন। আপেলের রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে কফ দূর হয়। প্রচুর পানি থাকায় আপেল ডায়রিয়া হলে সারাতে সাহায্য করে। আপেলের রস দাঁতের জন্যও ভালো। কারণ, আপেলের রস দাঁতের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে। সবুজ, সোনালি, লাল, যেকোনো রকম আপেল থেকেই উপকারিতা পাওয়া যায়।

লেখক: ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট ল্যাব এইড লিমিটেড (ডায়াগনস্টিক) ও পার্ক ভিউ হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক লিমিটেড, চট্টগ্রাম।