চা শ্রমিকদের ঘর করে দেবেন প্রধানমন্ত্রী

18

ঢাকা প্রতিনিধি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চা শ্রমিকদের ঘর করে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। গতকাল শনিবার গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে চা শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ আশ্বাস দেন তিনি।
বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মৌলভীবাজারের পাত্রখোলা চা বাগানের শ্রমিকদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা প্রধানমন্ত্রীর কাছে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন।
পাত্রখোলা চা বাগানের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ, মৌলভীবাজার-আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নেছার আহমদসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধরা। তাদের আনন্দঘন এ মুহূর্ত স্মরণীয় করে রাখতে নানা আয়োজন করে জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসন।
মতবিনিময়ে প্রথমে শ্রমিকদের কথা শোনেন শেখ হাসিনা। পরে বক্তব্যে বলেন, যারা শ্রম দেয়, কষ্ট করে তাদের দিকে আমাদের তাকানো দরকার। আমি এটুকু বলতে পারি, আমার বাবা তো কৃষক-শ্রমিক-মানুষের জন্য রাজনীতি করে গেছেন এবং দেশ স্বাধীন করে গেছেন। তাঁর বাংলাদেশে মানুষ কষ্টে থাকবে, এটা হতে পারে না। সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি আমি।
চা শ্রমিকরা সবসময় নৌকা মার্কায় ভোট দেন বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছুদিন আগে আন্দোলন হয়েছে। আমি সেই সময় মালিকদের সঙ্গে বসে আপনাদের দৈনিক মজুরি ও অন্যান্য সুবিধা নির্ধারণ করে দিয়েছি। আমার মনে হয় সেখানে আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী করতে পেরেছি।
চা-শ্রমিকদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ব্রিটিশরা আপনাদের পূর্বপুরুষদের নিয়ে এসেছিল। তখন আপনাদের কোনও নাগরিক অধিকার ছিল না। কোনও সুযোগ-সুবিধা ছিল না। আজ আপনারা এদেশের নাগরিক। বঙ্গবন্ধু আপনাদের নাগরিকত্ব দিয়েছেন। তার কন্যা হিসেবে আপনাদের প্রতি আমার একটি দায়িত্ব রয়েছে। আমি চেষ্টা করি সবসময় এই দায়িত্বটা যথাযথভাবে পালন করতে। মালিকরা যাতে আপনাদের যথাযথভাবে মর্যাদা দেয় ও দেখে সেই উদ্যোগ নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চা শিল্প আমাদের দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত। চা বাগান দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি এই চা শিল্প আমাদের অর্থখাতের জন্যও ভীষণ দরকারি। তাই এই চা শিল্প যেন ধ্বংস হয়ে না যায় সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। এজন্য আমি সব চা শ্রমিক ভাইদেরও অনুরোধ জানাবো এই চা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভূমিহীন থাকবে না। যারা ভূমিহীন তাদের ঘর করা দেয়া হচ্ছে। এটা তো জাতির পিতা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি শেষ করে যেতে পারেননি। ঘাতকের নির্মম বুলেট তাকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়। তাঁর মেয়ে হিসেবে এটা আমার কর্তব্য, দায়িত্ব। আমরা সেটা করেছি। তিনি চা শ্রমিকদের ভূমির অধিকার, চিকিৎসা, বাসস্থান, অ্যাম্বুলেন্স, চা-শ্রমিক সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা, শ্রমিকদের গ্র্যাচুইটি, মাতৃত্বকালীন পূর্ণ ছুটি ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করার আশ্বাসও দেন।
এ সময় চা-শ্রমিকরা ভূমির অধিকার, পেটভরে খেতে পারার জন্য মজুরি, মালিকদের ৪০২ টাকা সুবিধা প্রদানের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি করেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
উল্লেখ্য, দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে টানা ২০ দিন কর্মবিরতি পালন করেন চা শ্রমিকরা। পরে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ১৭০ টাকা মজুরিতে কাজে ফেরেন তারা।
দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন দেশের ২৪১টি চা বাগানের প্রায় সোয়া লাখ শ্রমিক। প্রথম চারদিন শ্রমিকরা প্রতিদিন দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন। এরপর ১৩ আগস্ট থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন শুরু করেন শ্রমিকরা। এরপর ২৭ আগস্ট গণভবনে চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকের পর নতুন মজুরির ঘোষণা আসে। এরপর শ্রমিকরা নিজ নিজ বাগানে কাজে ফিরেছেন।
চা-শ্রমিকরা তাদের সুখ-দুঃখ ও দাবি দাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার দাবির প্রেক্ষিতে গতকাল শনিবার এই ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়।