চাহিদার ৯৬ শতাংশ পশু মজুদ আছে চট্টগ্রামে

50

এম এ হোসাইন

আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে চট্টগ্রামের খামারে গবাদি পশু মোটাতাজা করছেন খামারিরা। গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মিলে চট্টগ্রামে এবার ৭ লাখ ৯১ হাজার ৫০১টি পশু হৃষ্টপুষ্ট করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে এসব পশু উৎপাদন করা হয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রামে এবার মোট পশু জবাইয়ের সম্ভাব্য টার্গেট বা চাহিদা ধরা হয়েছে ৮ লাখ ২১ হাজার। চাহিদার ৯৬ দশমিক ৪০ শতাংশ পশু স্থানীয়ভাবে যোগান দেয়া সম্ভব হবে। চাহিদা আর যোগানের সামঞ্জস্য থাকায় এবারও চট্টগ্রামে কোরবানির ঈদে পশুর সংকট হবে না।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবার কোরবানিতে চট্টগ্রামে পশুর চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ লক্ষ ২১ হাজারটি। গতবছর এই চাহিদা নির্ধারিত ছিল ৭ লাখ ৪২ হাজার ৪৫৫টি। চাহিদার বিপরীতে এবছর স্থানীয়ভাবে হৃষ্টপুষ্ট করা ৭ লাখ ৯১ হাজার ৫০১টি পশু রয়েছে। অথ্যাৎ চাহিদার ৯৬ দশমিক ৪০ শতাংশ গবাদিপশু চট্টগ্রামে হৃষ্টপুষ্ট করা হয়েছে। চাহিদার বিপরীতে হৃষ্টপুষ্ট করা পশুর মধ্যে রয়েছে গরু ৫ লক্ষ ৩৫ হাজার ৮০৩টি, মহিষ ৬৬ হাজার ২৩৭টি, ছাগল ও ভেড়া ১ লক্ষ ৮৯ হাজার ৩৬২টি এবং অন্যান্য পশু ৯৯টি। গতবছর এই চাহিদা নির্ধারিত ছিলো, গরু ৪ লাখ ১৪ হাজার ৩৮৭টি, মহিষ ৪৮ হাজার ২৮৪টি ও ছাগল-ভেড়া ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৪৮টি। চাহিদার ৯৬ শতাংশ গবাদিপশু চট্টগ্রামে মজুদ থাকলেও আরো প্রায় ৪ শতাংশ পশুর ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। আর এই ঘাটতির মোট পরিমাণ ২৯ হাজার ৪৯৯টি। ঘাটতি পশুগুলো দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এনে পূরণ করা হবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, চট্টগ্রামে পশুর কোনো সংকট হবে না। চট্টগ্রামে প্রচুর হৃষ্টপুষ্ট পশু মজুদ রয়েছে। চাহিদার যে ঘাটতি সেটা সামান্য। চট্টগ্রামের পশু ছাড়াও প্রতিবছরের ন্যায় পাবনা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলা ও আমাদের তিন পাবর্ত্য জেলার পশু আসবে। ফলে অভ্যন্তীরণভাবে কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। গত কয়েকবছর ধরে স্থানীয়ভাবেই পশুর চাহিদা পুরণ হয়ে আসছে।
গত কয়েকবছর ধরে স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের মাধ্যমে কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে। ২০১৫ সালে ৪ লক্ষ ৯২ হাজার ২৫০টি পশু কোরবানিতে জবাই হয়। যার মধ্যে স্থানীয় উৎপাদন ছিল ৩ লক্ষ ২০ হাজার। ২০১৬ সালে ৫ লক্ষ ১৬ হাজার ৮৬২টি পশু কোরবানিতে জবাই হয়, যার মধ্যে স্থানীয় উৎপাদন ছিল ৩ লক্ষ ৩৬ হাজার ১১৯টি। ২০১৭ সালে ৫ লক্ষ ৯৫ হাজার ৮৩১টি পশু কোরবানিতে জবাই হয়, যার মধ্যে স্থানীয় উৎপাদন ছিল ৩ লক্ষ ৫৬ হাজার ১৬৩। ২০১৮ সালে ৬ লক্ষ ৫৫ হাজার পশু কোরবানিতে জবাই হয়, যার মধ্যে স্থানীয় উৎপাদন ছিল ৫ লক্ষ ৮১ হাজার ৬৩৪টি। ২০১৯ সালে ৭ লক্ষ ৩০ হাজার ৭৮৯টি পশু কোরবানিতে জবাই হয়, যার মধ্যে স্থানীয় উৎপাদন ছিল ৬ লক্ষ ১০ হাজার ২১৯টি। ২০২০ সালে ৭ লক্ষ ৩৫ হাজার ৫৫৬টি পশু কোরবানিতে জবাই হয়, যার মধ্যে স্থানীয় উৎপাদন ছিল ৬ লক্ষ ৮৯ হাজার ২২টি। সর্বশেষ ২০২১ সালে কোরবানিতে চট্টগ্রামে ৭ লক্ষ ৪২ হাজার ৪৫৫টি পশু জবাই হয়, যার মধ্যে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ৭ লক্ষ ৫৬ হাজার ৩৩৪টি পশু যোগান দেয়া হয়।
এদিকে প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের উপজেলা-ভিত্তিক গবাদি পশু মজুদের তালিকায় দেখা যায়, চট্টগ্রাম জেলার আওতাধীন ১৫টি উপজেলা ও ৩টি মেট্রো প্রাণিসম্পদ দপ্তরের আওতায় মোট ৮ হাজার ১৭১টি খামারে গবাদিপশু মজুদ রয়েছে। এসব খামারে ৭ লক্ষ ৯১ হাজার ৫০১টি পশু মজুদ আছে। উপজেলাগুলোর মধ্যে মিরসরাই উপজেলায় ৫৭ হাজার ৬৮০টি, সীতাকুÐে ৪৪ হাজার ২৪৮টি, স›দ্বীপে ৬৯ হাজার ২২৩টি, ফটিকছড়িতে ৫১ হাজার ২৩৫টি, রাউজানে ৩৮ হাজার ৬৫৩টি, রাঙ্গুনিয়ায় ৪৫ হাজার ৮১৮টি, হাটহাজারীতে ৪৪ হাজার ৬৪৬টি, বোয়ালখালীতে ৪৮ হাজার ১৩৩টি, পটিয়ায় ৭২ হাজার ৩১৭টি, চন্দনাইশে ৪০ হাজার ৮৫৪টি, আনোয়ারায় ৬৩ হাজার ৬৬৬টি, সাতকানিয়ায় ৪২ হাজার ১৬৯টি, লোহাগাড়ায় ৪৩ হাজার ৯৭৮টি, বাঁশখালীতে ৪১ হাজার ৭৮৩, নগরের কোতোয়ালী থানায় ৪ হাজার ৭০২টি, কর্ণফুলী থানায় ৫৪ হাজার ৯৭৯টি, ডবলমুরিংয়ে ৯ হাজার ১৬৭টি ও পাঁচলাইশে ১৮ হাজার ২৫০টি গবাদি পশু হৃষ্টপুষ্ট করা হয়েছে। পুরো চট্টগ্রামে হৃষ্টপুষ্ট করা পশুগুলোর মধ্যে ষাঁড় ৩ লক্ষ ৬৪ হাজার ৭৪টি, বলদ ১ লক্ষ ৩৬ হাজার ২৪৭টি, গাভী ৩৫ হাজার ৪৮২টি, মহিষ ৬৬ হাজার ২৩৭টি, ছাগল ১ লক্ষ ৪০ হাজার ৬৭৫টি ও ভেড়া রয়েছে ৪৮ হাজার ৬২৮টি। কর্ণফুলী, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, পটিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায় খামারের সংখ্যা বেশি হলেও সব উপজেলাতেই অনেক গৃহস্থ বাড়িতে গরু-ছাগল লালন পালন করা হচ্ছে। সম্ভাব্য পশুর তালিকায় আসবে এসব গৃহস্থ পশুগুলোও। তাছাড়া খামারির সংখ্যা কম হলেও মিরসরাই, স›দ্বীপ ও ফটিকছড়িতে বেশিসংখ্যক পশু রয়েছে।