চাল-তেল নিয়ে শ্রীলঙ্কা পৌঁছে যাচ্ছে ভারত

17

পূর্বদেশ ডেস্ক

খাদ্য, তেল ও বিদ্যুতের ভয়াবহ সংকটে শ্রীলঙ্কা। মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে চীন। এমন পরিস্থিতিতে বন্ধুত্ব দৃঢ় করার সুযোগ পেল ভারত। বিপুল তেল ও খাদ্য সামগ্রী নিয়ে পাশে দাঁড়াল শ্রীলঙ্কার। ভারত থেকে ৪০ হাজার টন ডিজেলভর্তি একটি জাহাজ শ্রীলঙ্কার বন্দরে পৌঁছেছে। অর্থনৈতিক সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কার জন্য ভারত ঘোষিত ১০০ কোটি ডলার ঋণসীমার আওতায় এ সহায়তা দেওয়া হয়। এদিকে দেশটিতে পাঠানোর জন্য আরও একটি জাহাজে ৪০ হাজার টন চাল বোঝাই করতে শুরু করেছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।
সংবাদসংস্থা সূত্রে খবর, গতকাল শনিবার ইন্ডিয়ান ওয়েল কর্পোরেশনের একটি জ্বালানি তেলের ট্যাঙ্ক পৌঁছে গিয়েছে শ্রীলঙ্কায়। আগেই খবর পাওয়া গিয়েছিল, সাইলন ইলেকট্রিসি বোর্ডের মজুত জ্বালানি শেষ হয়ে গিয়েছে। সেই কারণে দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মুখে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। দীর্ঘক্ষণ অন্ধকারে পড়ে থেকেছে দেশটি। সেই কারণেই জ্বালানি তেল দিয়ে প্রাথমিক সাহায্য পৌঁছে দিয়েছে ভারত। পাশাপাশি খাবার পৌঁছে দেওয়ারও ব্যবস্থা করছে। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে মোট ৪০ হাজার মেট্রিক টন চাল পৌঁছে দেওয়া হবে শ্রীলঙ্কায়। ভারতীয় বাণিজ্য সংস্থাগুলি এই পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। একটি ক্রেডিট লাইন তৈরি করার কথা ভেবেছে সংস্থাগুলি। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পৃথিবীর বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারী দেশ হিসাবে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সাহায্য করবে। এর মধ্যে রয়েছে চাল, তেল ও ওষুধ।
সংকটের মুখে শুক্রবার সন্ধ্যার পর জরুরি অবস্থা জারি করা হয় শ্রীলঙ্কায়। শেষ কয়েকদিন ধরে চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে চলছে দেশটি। পাওয়া যাচ্ছে না খাবার, চলছে না বিদ্যুৎ পরিষেবা। সেই পরিস্থিতিতে সে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করলেন প্রেসিডেন্ট গতোবায়া রাজাপাক্ষে। শ্রীলঙ্কা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী যে কোনও সময়ে যে কোনও লোককে গ্রেপ্তার করতে পারবে, কোনও রকম বিচার ছাড়াই।
এর আগে শ্রীলঙ্কার জুড়ে কার্ফু জারি করেছিল শ্রীলঙ্কার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। শুক্রবার সকালেই সেই কার্ফু তুলে নেওয়া হয়। তার পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ফের জারি করা হয় কার্ফু। এ দিকে শ্রীলঙ্কার বর্তমান সরকারের দিকে তোপ দেগে তীব্র আন্দোলন শুরু করেছে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলি। প্ল্যাকার্ড হাতে তারা প্রতিবাদে নেমেছে রাস্তায়। সরকারের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন প্রতিবাদীরা।
বিশ্লেষকদের মতে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রীলঙ্কা ভারত বা চীনের মতো বড় দেশগুলির উপর নির্ভরশীল। স¤প্রতি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুইদিনের শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়েছিলেন। অর্থনৈতিকভাবে ধুকতে থাকা শ্রীলঙ্কা চীনা মন্ত্রীর এই সফর ঘিরে আশায় বুক বেঁধেছিল। ভেবেছিল, এই সফরে চীনের কাছ থেকে নেওয়া ৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণের পুনর্বিন্যাস করা যেতে পারে। বিদেশি বিনিয়োগ সংক্রান্ত কোনও প্রতিশ্রæতি আদায় করা যেতে পারে। শ্রীলঙ্কায় কিছু মেগা প্রজেক্টে চীন সরকারের সাহায্য মিলবে। আইসিইউতে থাকা এই দ্বীপ রাষ্ট্রটি বেঁচে ওঠার স্বপ্ন দেখছিল। তবে এই চরম অবস্থাতেও চীনের কাছ থেকে কোনও আশ্বাস পায়নি শ্রীলঙ্কা।
উল্লেখ্য, স¤প্রতি চীনা সংস্থা ক্যুইংডাও সিউইন বায়োটেকের পাঠানো সার শ্রীলঙ্কা সরকার গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। শ্রীলঙ্কা অভিযোগ করে, উক্ত কনসাইনমেন্ট পরিবেশ কোয়ারেন্টাইন নিয়ম ভঙ্গ করেছে। উল্লিখিত কনসাইনমেন্টটি ৫০ মিলিয়ন ডলারের ছিল। শ্রীলঙ্কা সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুরে মামলা দায়ের করে চীনা সংস্থাটি। আদালত সেই সময় ৬.৭ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে বলে শ্রীলঙ্কা সরকারকে। এই ঘটনার পরই শ্রীলঙ্কা এবং চীনের সম্পর্কে চিড় ধরে।
এদিকে করোনা মহামারি পরিস্থিতে শ্রীলঙ্কার পর্যটন শিল্প ধাক্কা খেয়েছে। বিগত কয়েক বছরে চীনের আর্থিক সাহায্যে হাম্বানটোটা, কলম্বো পোর্ট সিটির মতো বিভিন্ন প্রকল্প করা হয়েছে শ্রীলঙ্কায়। কিন্তু এই প্রকল্পে শ্রীলঙ্কার লাভের লাভ কিছু হয়নি। এখন রীতিমতো শ্রীলঙ্কার গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই দুই প্রকল্প। বৈদেশিক মুদ্রায় প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এই প্রকল্পগুলি থেকে কোনও লাভের মুখ দেখছে না শ্রীলঙ্কা সরকার। ফলে এই প্রকল্প বাবদ ঋণের অর্থ ফেরাতে অক্ষম দেশটি। এই আবহে স্বস্তি পেতে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট চীনের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন। তবে চীনা সংস্থার সঙ্গে শ্রীলঙ্কার সরকারের সঙ্গে সা¤প্রতিক দ্ব›েদ্বর জেরে বেজিংয়ের মনোভাবে কাঠিন্য দেখা দেয়। ফলে চীন থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে নয়া দিল্লির দিকে তাকিয়ে আছে শ্রীলঙ্কা। জরুরি ভিত্তিতে খাদ্যসামগ্রী, জ্বালানি এবং ওষুধ আমদানি করার জন্য ভারতের কাছে ধার চেয়েছে শ্রীলঙ্কা সরকার। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্ব দৃঢ় করার সুযোগ পেল নয়া দিল্লি। শ্রীলঙ্কা উপকূলে চীনা বাড়বাড়ন্ত এমনিতেই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতের কাছে। এই পরিস্থিতেতে ভারত মহাসাগরে চীনা আধিপত্যে থাবা বসাতে তৎপর হয়ে উঠেছে নয়া দিল্লি। সূত্র : এনডিটিভি ও রয়টার্স।