চালসহ সকল ভোগ্যপণ্যের বাজার তদারকি প্রয়োজন

20

অসাধু ব্যবসায়ীদের চাল নিয়ে চালবাজি নতুন কোন বিষয় নয়। সরকার ও প্রশাসন ইতোপূর্বে সয়াবিন তেল নিয়ে তৈলাক্তকাণ্ড যা বাণিজ্য মন্ত্রীর দপ্তর পর্যন্ত গড়াতে দেখা গেছে। পেঁয়াজ নিয়ে ঝাঁঝালো তেলেসমাতি যা তুরস্কের বাজার পর্যন্ত পৌঁছতে হয়েছে। অথচ সয়াবিন তেল মাটির নীচে গুদামে, পেঁয়াজ চাক্তাই খালে ফেলে দেয়া হয়েছে। আর বাজারে গ্রাহকদের ত্রাহী মধুসূদন অবস্থা সহ্য করতে হয়েছে। এ দেশ যেন অসাধু ব্যবসায়ী আর গণপরিবহনের মালিক শ্রমিক সংগংঠনের কাছে জিম্মি! তারা দেশটাকে সন্দেশ বানিয়ে গোগ্রাসে গিলছে। অথচ সরকার ও প্রশাসন তাদের বিষয়ে খুব একটা সরব হতে দেখা যাচ্ছে না। উল্লেখ্য দুই শ্রেণির সিন্ডিকেট সরকারকে বিচিত্র অজুহাত দেখিয়ে দেশের সাধারণ মানুষে মাথায় কাঠাল ভেঙে খাচ্ছে। দেশে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে আর গরিবের সংখ্যা, স্বল্প আয়ের মানুষের সংখ্যা ভয়ানক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাধারণ মানুষের আয় ও দৈনিক-মাসিক বেতন বৃদ্ধির কোন উদ্যোগ সরকারি বেসরকারী কর্তৃপক্ষের নজরে আসছে না। এমতাবস্থায় এক দুর্বিসহ জীবন যাপন করতে হচ্ছে দেশের সিংহভাগ মানুষকে। মুষ্টিমেয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, কর্মচারী, ঘুস, সুদ এবং অনৈতিক অসাধু গণপরিবহন ও ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ীরা দিব্বি আরাম আয়েশে দিন পার করছে। এদের সংখ্যা সাধারণ স্বল্প আয়ের মানুষের তুলনায় খুবই নগণ্য। দেশের মানুষের মাথা পিছু আয়ের পরিসংখ্যানে যথেষ্ট শুভংকরের ফাঁকি আছে, বলছে দেশের সিংহভাগ নাগরিক। সুন্দর মিষ্টি কথায় চিঁড়ে ভেজে না, তা আমরা জানি। এদেশে যারা সাধারণ মানুষকে শোষণের নেটওয়ার্কে বন্দী করে ব্যবসা করছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার ও প্রশাসন সততা, নিষ্ঠা ও দায়বদ্ধতার সাথে এগিয়ে না আসলে সাধারণ ভোক্তাদের পক্ষে ত্রাণকর্তা সহায়ক আর কোথায় পাওয়া যাবে? ভোক্তাসংরক্ষণ অধিদপ্তর, দুর্নীতি দমন কমিশন, বিএসটি আই ইত্যাদি সংস্থার কাজ খুবই সীমিত। কালে ভদ্রে তাদের তৎপরতা দেখা গেলেও তাতে ভোক্তা সাধারণ প্রকৃত পক্ষে কোন সুবিধা পেতে দেখা যায় না।
দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার এক প্রতিবেদন হতে জানা যায় দেশের জেলা প্রশাসকদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে চালের বাজার মনিটরিংয়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শুধু চালের বাজার মনিটরিং করে দেশের বাজার ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে না। শুধু চাল, তেল, গাড়িভাড়া নয়, জনগণকে জিম্মি করে অসাধু গুদামজাতকারী, হতে শুরু করে ভোগ্যপণ্য বিক্রেতা ও ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থিরকারী সকল পক্ষকে মনিটরিংয়ে আওতায় আনা জরুরি। দেশের পণ্যবাজার অস্থিরতার পেছনে যারাই জড়িত, তাদের সার্বিকভাবে শায়েস্তা করা না হলে দেশে স্বল্প আয় ও দরিদ্র মানুষের জীবন অচল হয়ে পড়বে।
ব্যবসায়ীরা যে সকল অজুহাত বাণিজ্যের সাথে জড়িত সরকারি কর্তৃপক্ষকে দেখাতে থাকে তাতে সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ লাঘবের কোন চিন্তা থাকে না। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সাথে গাড়ি ভাড়াসহ চাল, ডাল, তেল, নুন, মরিচসহ সকল নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে অসাধু এবং ব্যক্তিগত লাভের আশায় বোঁদ হয়ে থাকা অনৈতিক ব্যবসায়ী সমাজ। লিটার প্রতি জ্বালানি তেলের (ডিজেলের) দাম বেড়েছে চৌত্রিশ টাকা। প্রতিবস্তা চাল পরিবহনে পরিবহন খরচ অতিরিক্ত ৩০০ টাকা পারে না। অথচা ৫০ কেজির চালের বস্তায় ৩০০ টাকা মূল্য বৃদ্ধি কিভাবে হয়, তা আমাদের মাথায় আসে না। মোদ্দা কথা পরিবহন ও ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীদের অজুহাত গুলো নিচক অজুহাত মাত্র। অসাধু ব্যবসায়ীরা বিগত সাত/আট বছর ধরে অহেতুক অজুহাতে গণপরিবহন ও নিত্যপণ্যের দাম হরদম বাড়িয়ে চলেছে। আমরা আশা করবো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে দেশের জেলা প্রশাসকরা এদেশের সকল প্রকার অসাধু ব্যবসায়ীদের অসাধু ব্যবসাকাÐ দমনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে দেশের বাজার ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবেন। জেলা প্রশাসক মহোদয়রা অনুরাগ বিরাগের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের সকল পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে এদেশের অসাধু ব্যবসায়ীদের ব্যবসাকাÐের বিরুদ্ধে কার্যকর ও যৌক্তির শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে দেশের বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে এমন প্রত্যাশা সমগ্র দেশবাসীর।