চারুকলা কি ফিরছে মূল ক্যাম্পাসে?

18

চবি প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইনস্টিটিউটকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে আন্দোলন চলমান রয়েছে। গত ২ নভেম্বর চারুকলা ইন্সটিটিউটের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করলেও পরবর্তীতে তা চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের আন্দোলনে রূপ নেয়। গতকাল মঙ্গলবার ২০ দিনে গড়িয়েছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। এতদিন পেরিয়ে গেলেও শিক্ষার্থীদের মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেয়ার এক দফা দাবি থেকে অনড় তারা।
এদিকে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টায় চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিতে এলে চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনা বিষয়ক কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয় সহকারী প্রক্টর মোহাম্মদ ইয়াকুবসহ বেশকয়েকজন শিক্ষককে আটকে রাখেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। প্রায় ১০ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ও শিক্ষক সমিতির নেতাকর্মীদের হস্তক্ষেপে মুক্ত হন তারা।
জানা গেছে, এদিন বিকাল তিনটায় চারুকলা স্থানান্তরের জরুরি কাগজপত্র নেওয়ার কথা বলে চারুকলা ইনস্টিটিউটে প্রবেশ করেন শিক্ষকদের একটি দল। পরে বের হবার সময় শিক্ষকদের হাতে ব্যক্তিগত কাজের ফাইল-পত্র দেখলে শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং শিক্ষকদের বাইরে আসতে বাধা দেয়।
এ বিষয়ে চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনা বিষয়ক কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয় সহকারী প্রক্টর মোহাম্মদ ইয়াকুব বলেন, এ নিয়ে আমরা কাজ করছি। কিন্তু আমাদেরকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদি শিক্ষার্থীরা আমাদের সহযোগিতা না করে তাহলে আমরা কিভাবে এ সমস্যার সমাধান করবো? গতকাল আমরা কিছু ফাইলপত্র নিতে এসেছিলাম। কিন্তু আমাদের বের হতে দেয়নি তারা।
তিনি বলেন, আমরা তাদেরকে শত বুঝানোর চেষ্টা করছি যে এভাবে হুট করে বিষয়টি সমাধান করা সম্ভব না। এটা করার জন্য নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। কিন্তু তারা তাতে কোনো কর্ণপাত করছে না। আমরা তাদের এটাও বলেছিলাম যে, তারা যাতে একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরে যায় এবং পাশাপাশি আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখে। যদি নির্দিষ্ট সময়ের পরে কোনো অগ্রগতি তারা দেখতে না পায় তাহলে তারা আবারো আন্দোলনে যেতে পারে। তারা তাতেও রাজি হচ্ছে না। তারা চাচ্ছে এখনই চারুকলাকে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসতে। হুট করে কিন্তু তা তো সম্ভব না। এটার জন্য নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আসতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূইঁয়া বলেন, আমরা বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান চাই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের বিষয়টি নিয়ে আন্তরিক। তবে আমাদের একটু সময় দিতে হবে। যেহেতু আইনী বিষয় রয়েছে, তাই বিশ্ববিদ্যালয় সবকিছু যাচাই বাছাই করেই ব্যবস্থা নিবে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে বলেন, শিক্ষকরা চারুকলা স্থানান্তরের জরুরি কাগজপত্র নিতে এসেছেন বলে ইনস্টিটিউটে প্রবেশ করেন। কিন্তু বের হওয়ার সময় ব্যক্তিগত এবং অফিসিয়াল কাগজপত্র নিয়ে বের হলে শিক্ষার্থীরা বাধা দেয়। আমাদের একমাত্র দাবি, চারুকলা ইনস্টিটিউটকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের যে সুযোগ সুবিধা আছে তা আমরা পাচ্ছি না। তাছাড়া এখানকার বেশিরভাগ অবকাঠামো ব্যবহার অনুপযোগী। এখানকার শিক্ষার্থীরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। টানা ২০ দিন ধরে আমাদের আন্দোলন চলছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দৃশ্যমান কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত দাবি না মানা হবে, ততক্ষণ আন্দোলন চলবে।
শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের স্বার্থে ও এ ইনস্টিটিউটের কয়েকজন শিক্ষকের স্বার্থে এখানে ফেলে রেখেছে তাদের। কয়েকজন শিক্ষক চান না এ ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে ফিরুক। তাদের বিভিন্ন সুবিধার জন্য এখানেই রয়ে যেতে চান। তাছাড়া চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাত্রাবাস ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গার ওপর। যদি আমরা এখানে থাকি তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় জায়গাটি দখলে রাখতে পারবে। আমরা চাই না কারও উদ্দেশ্য হাসিলে হাতিয়ার হতে।
এদিকে এ সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে গতকাল সোমবার বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। আজ সকাল সাড়ে এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও চারুকলার শিক্ষকরা সহ সে বৈঠল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।