চারুকলা ইন্সটিটিউট ও চমেকের দুই হল বন্ধ ঘোষণা

18

নিজস্ব প্রতিবেদক

চবি চারুকলা শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশনের হুমকির মুখে চারুকলা ইন্সটিটিউট এক মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইন্সটিটিউট সংস্কারের কথা বলে গতকাল বৃহস্পতিবার সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় শিক্ষার্থীদের রাত ১০টার মধ্যে ক্যাম্পাস ও হোস্টেল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়।
অন্যদিকে মেস পরিচালনার দ্বন্দ্বে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে গতকাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের লুৎফুস সালাম ও হাফিজুল্লাহ বশির ছাত্রাবাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে নগরের শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাস ছাড়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। বিবদমান দুই গ্রুপের একটি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন ও অপর গ্রæপ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
আমাদের চবি প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশনের হুমকির মুখে ইন্সটিটিউট এক মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ইন্সটিটিউট সংস্কারের কথা বলে গতকাল বৃহস্পতিবার সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় শিক্ষার্থীদের বৃহস্পতিবার রাত ১০ টার মধ্যে ক্যাম্পাস ও হোস্টেল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। আগামী একমাস সশরীরে ক্লাস, পরীক্ষা বন্ধ থাকলেও অনলাইনে চলবে ক্লাস। এই একমাস ইনস্টিটিউটের সংস্কার কাজ চলবে বলে সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘চারুকলা ইন্সটিটিউট একমাস বন্ধ থাকবে। এসময় অনলাইনে ক্লাস নিবেন শিক্ষকরা। পাশাপাশি আজ (বৃহস্পতিবার) রাত ১০টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের চারুকলা ক্যাম্পাস ত্যাগের নির্দেশনাও দিয়েছে সিন্ডিকেট।’
উল্লেখ্য, দাবি আদায় না হলে ও সমস্যার সমাধানে শিক্ষকরা আলোচনায় না বসলে গত বুধবার আমরণ অনশনে যাওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ হুশিয়ারির পর রাত সাড়ে বারোটায় চারুকলায় হুট করে পুলিশসহ অভিযান পরিচালনা করে প্রক্টরিয়াল বডি।
দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে শুরু হওয়া এ অভিযান চলে রাত প্রায় দুইটা পর্যন্ত।
জানা গেছে, রাত সাড়ে ১২টার সময় ইনস্টিটিউটের দুই পাশের ফটকের তালা ভেঙে প্রায় ৫০ পুলিশ সদস্য ভেতরে প্রবেশ করেন। পুলিশের সাথে প্রক্টরিয়াল বডিও ছিলেন। তারা ইনস্টিটিউটের ভেতরে অবস্থিত শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলের প্রতিটি কক্ষ ও শিক্ষক ক্লাবে তল্লাশি চালান। এসময় আন্দোলনকারীদের ব্যানার ফেস্টুন ছিড়ে ফেলা হয় বলে অভিযোগ করেন আন্দোলনকারীরা।
প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা এ অভিযানে শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলের (ছাত্র) ১০৫নং কক্ষ থেকে এক ছাত্রীকে আটক করে প্রক্টরিয়াল বডি। পরে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয় ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ওই ছাত্রীকে। আটককৃত ওই ছাত্রী কোনোরূপ অনুমতি ছাড়াই ছাত্র হোস্টেলে অবস্থান করছিলেন বলে প্রশাসন জানিয়েছে। নিয়মানুযায়ী হোস্টেল ওয়ার্ডেনের অনুমতি ব্যতিত রাতে কিংবা দিনে কোনো সময়ই ছাত্রীরা ছাত্রদের হোস্টেলে প্রবেশ করতে পারবেন না।
এছাড়াও অভিযানে হোস্টেলের ১০৪ নম্বর কক্ষ থেকে কয়েক গ্রাম গাঁজা উদ্ধার ও তল্লাশির সময় ভিডিও করায় বহিরাগত এক যুবকের মোবাইলফোন জব্দ করেছে বলে জানিয়েছেন প্রক্টর।
তবে আন্দোলনকারীদের দাবি, চলমান আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এবং আন্দোলনকে দুর্বল করতে এ অভিযান চালিয়েছে প্রশাসন।
এ বিষয়ে ইনস্টিটিউটের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আল মাশরুল ফাহিম বলেন, ‘এক জুনিয়র মেয়েকে এখান থেকে রিসিভ করে মেসে তুলে দিতেই আপুটি এখানে এসেছিলেন। আমাদের হোস্টেলের গঠনগত অবস্থানের কারণে হোস্টেলের ভিতর দিয়ে ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের চলাচল করতে হয়। গভীর রাতে অনাকাঙ্খিতভাবে প্রক্টরিয়াল বডি প্রায় অর্ধশতাধিক পুলিশ নিয়ে তালা ভেঙে ভিতরে আসায় আপুটি ভয় পেয়ে সামনের ১০৫ নম্বর কক্ষে ঢুকে পড়ে। পরে প্রশাসন এসে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। প্রশাসন আমাদের আন্দোলন থামাতেই বিষয়টি অতিরঞ্জিত করছেন।’
কোনো ধরনের মাদক পাওয়া যায়নি দাবি করে তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষক ক্লাবের তালা ভাঙা ও আমাদের ব্যানার-ক্যানভাস ছিঁড়ে ফেলছে। এখানে কোনো মাদক পাননি।’
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছেন, আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চারুকলার শিক্ষার্থীরা ২ ভাগ হয়ে যাওয়ায় অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির আশংকায় ও হোস্টেলে বহিরাগত অবস্থান করেছে সন্দেহে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া বলেন, ‘আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চারুকলার শিক্ষার্থীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। তাই অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির আশংকায় ও হোস্টেলে বহিরাগত কেউ অবস্থান করছে সন্দেহে আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি।’
প্রসঙ্গত, চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা ২২ দফা দাবিতে গত বছরের ২ নভেম্বর ক্লাস বর্জন করে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। শুরুতে তাদের আন্দোলন ইনস্টিটিউটের সংস্কার কেন্দ্রীক থাকলেও পরবর্তীতে তা ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের একদফা দাবিতে রূপ নেয়।
লাগাতার আন্দোলনের এক পর্যায়ে শিক্ষামন্ত্রীর আহŸানে শর্ত সাপেক্ষে গত ২৩ জানুয়ারি শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরলেও সপ্তাহের মাথায় গত সোমবার আবারো ক্লাস বর্জন করে আন্দোলনে যান শিক্ষার্থীদের একাংশ। অপরদিকে একইদিন ইন্সটিটিউটের মূল ফটকে সংস্কার আন্দোলনকারীদের পুনরায় তালা দেওয়ার প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীদের অপর একটি অংশ। এসময় তারা ক্লাস চালু রাখার দাবি জানান।
এদিকে, খাবারের ব্যবস্থাপনা নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের দফায় দফায় হাতাহাতি ও ভাঙচুরের ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের (চমেক) হাফিজুল্লাহ বশির ও লুৎফুস সালাম ছাত্রাবাস। একই সঙ্গে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে নগরীর শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাস ছাড়তে নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।
গতকাল রাত ১০টার দিকে ছাত্রাবাসটির তত্ত¡াবধায়ক চমেকের সহকারী অধ্যাপক মাসুদ রানা সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ছাত্রাবাসে মেস চালানোর দায়িত্ব নিয়ে ছাত্রদের মধ্যে ঝামেলা হয় গতকাল (বুধবার)। এর জেরে আজও (বৃহস্পতিবার) দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে। তাই বড় কোনো ঘটনা এড়াতে ছাত্রবাস পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
চমেক সূত্র জানায়, ছাত্রাবাসগুলোর মেস চালানো নিয়ে বিবদমান দুটি পক্ষের একটি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী, অপরপক্ষটি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী।
সূত্রে আরো জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রাবাসটির খাবারের মেস পরিচালনা করতেন নাছির উদ্দীনের অনুসারীরা। কিছুদিন ধরে নওফেলের অনুসারীরা মেসের খাবার নিয়ে নানা অভিযোগ তুলে ব্যবস্থাপনা পরিবর্তনের দাবি জানান। এর জের ধরে গত বুধবার রাতে দু’পক্ষের মধ্যে বাগবিতন্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে আসবাবপত্র ও কক্ষ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। একই ঘটনার জের ধরে গতকাল বিকেলে আবারও বাগবিতন্ডায় জড়ায় দুই পক্ষ। এ সময় হাতাহাতি ও কয়েকটি কক্ষ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ সাহেনা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, মেস পরিচালনা নিয়ে বুধবার দুই পক্ষের মধ্যে বিবাদ হয়েছিল। এর জের ধরে আজ (বৃহস্পতিবার) আবারও বিবাদে জড়িয়ে পড়ে তারা। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ছাত্রাবাস দুটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাস ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।