চাপের মুখে সংসদ নির্বাচনে যায় জাপা : জি এম কাদের

6

পূর্বদেশ ডেস্ক

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিলেও চাপের মুখে তা পাল্টাতে বাধ্য হয় বলে জানিয়েছেন দলটির চেয়ারপারসন জি এম কাদের। তিনি জানিয়েছেন, কোন্দল করে দল ভেঙে দেওয়া হবে- এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়। এছাড়া ‘কিছু শক্তিশালী দেশ এই সরকারকে বিজয়ী করতে চায়’- এমন কথা জানতে পারে দলটি। তাই ভোটে আসে।
গতকাল শনিবার রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বর্ধিত সভায় জাতীয় পার্টির নেতা এসব কথা বলেন জি এম কাদের। খবর বিডিনিউজের।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পরে দলের প্রথম বর্ধিত সভাটি ডাকা হয়েছে জাতীয় পার্টিতে নতুন করে ভাঙনের পরিপ্রেক্ষিতে। সাবেক সেনা শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতনের পর বারবার ভাঙনের মুখে থাকা দলটি সবশেষ ব্র্যাকেটবন্দি হয়েছে নির্বাচনের পর।
এরশাদপতœী রওশন এরশাদের নেতৃত্বে আলাদা কমিটি গঠন হয়েছে, যে কমিটিতে বেশ কয়েকজন নেতার নাম রয়েছে যারা জি এম কাদেরের নেতৃত্বে কমিটিতেও আছেন। এই অবস্থায় এই সভা ডাকা হয়। একই দিন রওশনের কমিটির পরিচিতি সভা হওয়ার কথা ছিল। তবে গরমের কারণ দেখিয়ে সেই সভা স্থগিত করা হয়।
৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টি নতুন করে ভেঙেছে। রওশন এরশাদের নেতৃত্বে আলাদা কমিটি গঠন হয়েছে
সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, (২০২৩ সালের) ১৬ ডিসেম্বর রাতে সবাইকে (দলের প্রার্থী) জানিয়ে দিলাম নির্বাচনে যাব না। কিন্তু ১৭ ডিসেম্বর সকালে আমার উপরে প্রত্যক্ষভাবে ও পরোক্ষভাবে চাপ আসল।
প্রত্যক্ষভাবে সেটা বলব না, কিন্তু পরোক্ষভাবে হল, আমাদের দলের ভেতরে কোন্দল তৈরি করে দল ভেঙে দেওয়া হবে।
আর তখন আমার মত ওয়েল ইনফর্মড নেতা দেশে কমই ছিল। আমি জেনে গিয়েছিলাম, কিছু শক্তিশালী দেশ এই সরকারকে জয়ী করতে চায়। তাই আমি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। পরবর্তীতে সরকার আমাদের সঙ্গে নেগোসিয়েশনে গেল।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়ে জাতীয় পার্টির নেতা বলেন, ২৬ জনের তালিকা দেওয়া হল। কিন্তু আওয়ামী লীগ যেখানে জাতীয় পার্টির ক্যান্ডিডেট দিল সেখানে স্বতন্ত্র পাওয়ারফুল প্রার্থীও রেখেছে।
কেবল কয়েকটি আসনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, সরকার যাকে পাস করাতে চায়, তাকে পাস করানো হয়েছে। আমি যেই আসনে নির্বাচন করেছি, সেখানেও আমাকে হারানোর জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। আমাকে ধ্বংস করা মানে জাতীয় পার্টিকে ধ্বংস করা।
জাতীয় পার্টি না গেলে নির্বাচনের ‘গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না’ বলে আওয়ামী লীগ তাদেরকে চেয়েছে বলেও মনে করেন সংসদে বিরোধী দলটির নেতা। এবারের জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-১৮ আসনে স্ত্রী শেরীফা কাদেরকে প্রার্থী করা নিয়ে জাতীয় পার্টিতে যে বিরোধ তৈরি হয়েছে তা নিয়েও কথা বলেন জি এম কাদের। দলের একাংশের নেতাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের কাছ থেকে এই আসনটিতে ছাড় নিশ্চিত করার জন্যই ভোটে না যাওয়ার কথা বলছিলেন জি এক কাদের। পরে এই আসনটি পেয়ে ঢাকায় দলের দুই জন সংসদ সদস্যের আসন ছেড়ে দেন তিনি।
গত নির্বাচনের আগে ঢাকা-১৮ আসনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী করে জি এম কাদেরের স্ত্রী শেরীফা কাদেরকে। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সরে গেলেও আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী তাকে হারিয়ে দেন। দলে মনোনয়ন বাণিজ্য হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, আমাকে কমপক্ষে ১০০ জন নেতাকর্মী দিনরাত ফোন দিয়ে বলে, ‘টাকা দেন, টাকা দেন’। অথচ তারা নির্বাচনে নাই, রাজনীতির মাঠেও নাই।
আওয়ামী লীগ প্রজাতন্ত্রের জায়গায় রাজতন্ত্র কায়েম করছে বলেও মন্তব্য করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, জনগণ ভোট দিতে চায় না, এটা হচ্ছে বিরাজনৈতিকরণ। এসব করে আওয়ামী লীগ বর্তমানে রাজনৈতিক দলের চরিত্র হারিয়েছে।
জি এম কাদের বলেন, আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে কথা বলে যাচ্ছি, কিন্তু আমাদের স্পেস দেওয়া হচ্ছে না। ক্ষমতা সব এককেন্দ্রিক। উনার (প্রধানমন্ত্রী) ইচ্ছায় ভোট হয়। কেউ ভোট করলে উনার অনুমতি নিয়ে করতে হবে। এভাবে চললে দেশে কোনো দলই টিকবে না। এখন এমন অবস্থা করা হয়েছে যে, রাজনীতি করলে হয় ফুলের মালা না হয় ফাঁসির দড়ি গলায় নিতে হবে।
আন্দোলন করতে নেমে বিএনপি কিছু ভুল করেছে বলেও মনে করে জাতীয় পার্টির নেতা। তিনি বলেন, আমি জানতাম বিএনপির আন্দোলনে সরকার পতন সম্ভব না। ১০ লক্ষ নয়, ১ কোটি মান্ষুও রাস্তায় নামলে নির্বাচন বন্ধ হবে না। ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর নয়া পল্টনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে পন্ড হয় বিএনপির সমাবেশ। জি এম কাদের মনে করে সেদিন ভুল করেছে বিএনপি।
দলের কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, সালমা ইসলাম ও মুস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, প্রেসিডিয়াম সদস্য নাজমা আক্তার, ফখরুল ইমাম, নাসরিন জাহান রতœা এবং চেয়ারম্যানের স্ত্রী শেরীফা কাদের বর্ধিত সভায় অংশ নেন।