চাঙা হয়ে উঠছে দেশের অর্থনীতি

20

পূর্বদেশ ডেস্ক

প্রায় দুই মাস ধরে ডলারের বাজারে আগের মতো অস্থিরতা নেই। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফুরিয়ে যাচ্ছে বলে যে ‘প্রচারণা’ চলছিল, সেটাও ভুল প্রমাণিত হচ্ছে। বিশেষ করে নতুন বছর শুরুর পরপরই অর্থনীতির বেশ কিছু সূচকে সুখবর পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া সরকারের রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের তথ্য বলে দিচ্ছে বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও দেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে চাঙা হয়ে উঠেছে। চলতি বছরজুড়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি যে চাঙা থাকবে তার ইঙ্গিত পাওয়া যায় বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের প্রতিবেদনেও। সংস্থা দুটি মনে করে, বৈশ্বিক মন্দায় ২০২৩ সাল ইউরোপের কিছু দেশের জন্য যতটা খারাপ যাবে, বাংলাদেশ সেই তুলনায় অনেক ভালো থাকবে। ঋণ দাতা সংস্থা দুটির ধারণা, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ওপরেই থাকবে। যদিও সরকারের আশা ৭ শতাংশের বেশি। খবর বাংলা ট্রিবিউন।
বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিট্যান্স প্রবাহের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স বেশ খানিকটা বেড়েছে। এই মাসে ১৭০ কোটি (১.৭০ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা; যা চার মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর গত বছরের ডিসেম্বরের চেয়ে বেশি ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। আগের তিন মাস নভেম্বর, অক্টোবর ও সেপ্টেম্বরে এসেছিল যথাক্রমে ১৫৯ কোটি ৫২ লাখ, ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ এবং ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৪৯ কোটি ৩২ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ২৩ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। সে হিসাবে এ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ২৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার বেশি এসেছে।

সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় ডিসেম্বরে
চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ২৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি। এরমধ্যে তৈরি পোশাক পণ্যের দাম ছিল ২৩ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ রপ্তানি আয়ের নতুন রেকর্ড অর্জনে সহায়তা করেছে তৈরি পোশাক খাত। একইসঙ্গে, তা নভেম্বরে হওয়া রেকর্ডকেও ভেঙ্গেছে। ডিসেম্বর মাসে ৯ শতাংশের কিছু বেশি প্রবৃদ্ধি নিয়ে রফতানি হয়েছে ৫ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যা একক মাসের হিসাবে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ।

কমে এসেছে বৈদেশিক বাণিজ্যের ঘাটতি
চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে প্রথমবারের মতো দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের ঘাটতি– আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৪১ শতাংশ কমে ১১ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১২ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার। দেশের রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি ও আমদানি কমে আসায় বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

মূল্যস্ফীতির হার কমেছে
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, দেশের মূল্যস্ফীতিতেও বিরাজ করছে নিম্নমুখী ধারা। গত ডিসেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। নভেম্বর মাসে এ হার ছিল ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। তবে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে এই হার ছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এ ছাড়া গত মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ৭ দশমিক ৯১ শতাংশ, যা নভেম্বর মাসে ছিল ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ। এ ছাড়া খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশে, যা নভেম্বরে ছিল ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। অন্যদিকে গড় মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এক বছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ।

রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ২৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত রিটার্ন দাখিল করেছেন ২৮ লাখ ৫১ হাজার করদাতা। এদের কাছ থেকে আয়কর বাবদ এসেছে ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় এবার এখন পর্যন্ত রিটার্ন দাখিলে প্রবৃদ্ধির হার ২৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আর রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ। গত বছর এই সময় পর্যন্ত রিটার্ন দাখিল করেছিলেন ২২ লাখ ৯৯ হাজার ৬২৫ করদাতা। বিপরীতে আয়কর এসেছিল তিন হাজার ২৮১ কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদরা যা বলছেন
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতি চাঙা থাকবে এবং বেশ স্বস্তি বিরাজ করবে। তাদের ধারণা ২০২৩ সালের অর্থনীতি থাকবে যথেষ্ট গতিশীল। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, বিশ্ব বাজারে পণ্যমূল্য আগামী দিনগুলোতে আরও কমবে। ফলে আমাদের অর্থনীতিতেও আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ কমে আসবে।
তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্বখাদ্য সংকট যাই থাকুক না কেন আমাদের দেশে খাদ্য সংকট তীব্র হবে না। কারণ, কৃষিখাতে সরকার যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়ার ফলে এই সক্ষমতা আমাদের তৈরি হয়েছে। এছাড়া আমনের ভালো উৎপাদন হয়েছে। আশা করছি বোরো উৎপাদনও ভালো হবে।
পিআরআইবি নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুরের মতে, নতুন বছরে মূল্যস্ফীতির চাপ খানিকটা কমে আসবে। কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে।