চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ

91

চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে ৯ শিক্ষিত বেকার যুবকের কাছ থেকে ৪০ লাখ আত্মসাতের দায়ে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) টেক্সেশান অফিসার (টিও) জানে আলম জানুকে। গতকাল প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ আদেশের কথা জানানো হয়েছে।
অপরদিকে চসিক পরিচালিত ইমরাতুননেছা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার ৫৯ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এ ব্যাপারে গত রোববার তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
চসিকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ৫নং সার্কেলের টেক্সেশান অফিসার (টিও) জানে আলম জানু ৯ জন শিক্ষিত বেকার যুবককে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠে। গত রোববার নগরীর মনছুরাবাদ এলাকার আবদুল কুদ্দুছ এ অভিযোগ করেন। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, ৫নং সার্কেলের ভারপ্রাপ্ত টিও জানে আলম জানু সিটি কর্পোরেশনের ফুটবল টিমের সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে সাবেক মেয়র মনজুর আলমের আমলে স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে যোগদান করেন। সাবেক এ মেয়রের দূরসম্পর্কের আত্মীয় পরিচয়ে রাতারাতি ক্রোকি কর্মকর্তা বনে যান তিনি। সেখান থেকে ভারপ্রাপ্ত ডিটিও পদে পদোন্নতি পান। সর্বশেষ ওইপদ থেকে পদোন্নতি পেয়ে ভারপ্রাপ্ত টিও হন জানে আলম। পদোন্নতি পেয়েই ৯ শিক্ষিত বেকার যুবককে সিটি কর্পোরেশনে চাকরি দেয়ার নামে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে ৪০ লাখ আত্মসাৎ করেন।
এদিকে চসিক পরিচালিত ইমরাতুননেছা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ফেরদৌস আরা বেগম স্কুলের ৫৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তদন্ত কর্মকর্তা ও চসিকের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন বলেন, তদন্তে স্কুলের ভর্তি, মাসিক বেতন, এমপিও’র টাকাসহ প্রায় ৫৯ লাখ টাকার অনিয়ম পাওয়া গেছে। গত সোমবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষিকা এখন অবসরকালীন প্রস্তুতি ছুটিতে (এলপিআর) আছেন। তবে তার গ্র্যাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং ছুটির টাকা থেকে এসব কেটে রাখলে অনিয়মের টাকা সমন্বয় করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন এ তদন্ত কর্মকর্তা।
সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের বেতন, ভর্তি ও পরীক্ষার ফিসহ স্কুলের বিভিন্ন আয় চসিকের হিসাব বিভাগে জমা না দিয়ে গত তিন বছর ধরে নিজের কাছে রেখে দেন এ প্রধান শিক্ষিকা। বিষয়টি কর্মকর্তাদের নজর আসে ২০১৭ সালের শেষের দিকে। পরে তাকে একাধিকবার কারণ দর্শানো নোটিশ দেয় সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু তিনি কোনো জবাব দেননি। এর প্রেক্ষিতে গত বছরের ফেব্রæয়ারিতে বিভাগীয় মামলা করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। কমিটি দীর্ঘ এক বছর তদন্তের পর প্রায় ৫৯ লাখ টাকা অনিয়মের সত্যতা পায়।
সূত্রটি আরও জানিয়েছে, বিভাগীয় মামলা চলাকালীন তিনি ফিরোজশাহ কলোনি সিটি করপোরেশন স্কুলে বদলি হন। পরে সেই স্কুল থেকে এলপিআরে যান। অনিয়মের সত্যতা পেলেও এলপিআর গিয়ে চসিক থেকে মাসিক বেতন পাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামসুদ্দোহা পূর্বদেশকে বলেছেন, আমি অফিসের কাজে ঢাকায় অবস্থান করছি। তাই তদন্ত প্রতিবেদন এখনও দেখার সুযোগ পাইনি। আগামীকাল (বুধবার) প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কর্পোরেশনের
দুই শিক্ষককে
বদলি

নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালনাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুই শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে। গত সোমবার চসিকের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক পত্রে বদলির এ আদেশ দেয়া হয়। আজকের মধ্যে বদলিকৃত প্রতিষ্ঠানে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে সুমন বড়–য়া বলেছেন, জনস্বার্থে সিটি কর্পোরেশনের নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে এ বদলি করা হয়েছে।
চসিক সূত্র জানিয়েছে, কাপাসগোলা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ গোফরানুল হককে স্ববেতনে বদলি করা হয়েছে আয়ুব বিবি সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে। অন্যজন হলেন, অপর্ণাচরণ সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সহকারী শিক্ষক রিটন কুমার মুৎসুদ্দী। তাকে বদলি করা হয়েছে লামাবাজার এএএস সিটি কর্পোরেশন বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে।
প্রসঙ্গত, পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন না করে নম্বর দেওয়ায় গোফরানুল হকের অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত চলাকালীন সময়ে বদলি করার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, তদন্তের সাথে বদলির কোনো সম্পর্ক নেই। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানান এ শিক্ষা কর্মকর্তা।