চসিক নির্বাচন স্থগিত

58

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবশেষে স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে নির্বাচন কমিশনারদের এক বৈঠক থেকে চসিক নির্বাচনসহ বগুড়া-১ ও যশোর-৬ আসনের নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। নির্বাচন স্থগিতের খবরে জনমনে স্বস্তি নেমেছে। বিতর্ক এড়িয়ে দুইদিন ধরে চলতে থাকা ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণও নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের পর স্থগিত করা হয়েছে। সপ্তাহকাল ধরে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বাড়তে থাকলে বন্দরনগরীর বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ নির্বাচন স্থগিতের দাবি জানিয়ে আসছিল। আগামী ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান পূর্বদেশকে বলেন,‘নির্বাচন স্থগিত হওয়ার বিষয়টি কমিশন থেকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। স্থগিতাদেশের চিঠি এখনো হাতে পাইনি। চিঠি আগামীকাল (আজ) হাতে পেতে পারি। এ চিঠি হাতে পেলেই গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। তবে পরবর্তীতে কখন, কিভাবে নির্বাচন হবে সে বিষয়েও নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হবে।’
ভোট স্থগিতের ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই বন্দরনগরীতে স্বস্তি নেমে আসে। নির্বাচনের স্থগিতের পর প্রার্থী, ভোটার ও ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তারাও যেন হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন। করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকার পর থেকে প্রার্থীদের প্রচারণায় হঠাৎ ছন্দপতন ঘটে। স্বাস্থ্য বিভাগ এবং নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মেনে গত বৃহস্পতিবার থেকে চট্টগ্রাম নগরীতে কার্যত গণসংযোগ, জমায়েত বন্ধ করে দেন প্রার্থীরা। নির্বাচন কমিশনারের সাথে প্রার্থীদের নির্ধারিত বৈঠকও বাতিল করা হয়। এরমধ্যে গত শুক্রবার থেকে ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শুরু হলে নগরজুড়ে ইসির কর্মকান্ড নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নির্বাচন পেছানোর দাবি জোরালো হয়। প্রার্থীরাও ভোট পিছিয়ে দেয়ার দাবিতে গণমাধ্যমে মত প্রকাশ করতে থাকেন।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেনের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট দলটির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান নির্বাচন স্থগিতের দাবি জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দেন। শাহাদাত হোসেন স্থগিত না করলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীও নির্বাচন স্থগিত বা পেছানো নিয়ে কমিশন কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা ইতিবাচকভাবে দেখার কথাও বলেছিলেন। তবে নৌকার প্রার্থী সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ভোট দেয়ার আহবান জানালে তা নিয়ে প্রতিপক্ষ শিবিরে ব্যাপক আলোচনা হয়। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী জান্নাতুল ইসলাম নির্বাচন স্থগিতের জন্য ইসিকে ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছিলেন।
বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন জানান, করোনার পরিস্থিতি দেখে নির্বাচন স্থগিত রাখার কথা বলেছিলাম। কিন্তু আমাদের দাবি আমলে নেয়নি নির্বাচন কমিশন। ঢাকা-১০ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি দেখে তড়িঘড়ি করেই নির্বাচন কমিশন ভোট স্থগিত করেছে। আমরা নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। এখন উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দলাদলি বাদ দিয়ে সকলে মিলেমিশে নগরবাসীর পাশে দাঁড়ানো উচিত।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী জান্নাতুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বলেছিলাম, নির্বাচন স্থগিত করুন। অন্যথায় ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন বর্জন করবো বলেছিলাম। অনেক পরে হলেও নির্বাচন কমিশনের যে বিষয়টা বোধগম্য হয়েছে, সেজন্য তাদের ধন্যবাদ।’
জামালখান এলাকার ভোটার রাজু চৌধুরী বলেন, ‘প্রার্থীরা ভোটারের কাছে গেলেও ভোটাররা দরজা খুলেনি। যা প্রার্থীদের জন্য বিব্রতকর। এমন অবস্থায় নির্বাচন হওয়াটা শোভনীয় ছিল না। যেখানে মানুষ আতঙ্কিত সেখানে ভোটের আমেজে ভাটা পড়াটাই ছিল স্বাভাবিক। এমন পরিস্থিতিতে ভোট আয়োজনে নির্বাচন কমিশনের উপর ক্ষোভ বাড়তো। যে সিদ্ধান্ত আরো দু’একদিন আগে নিতে পারতো তা পরে হলেও নেয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি নেমেছে।’
দক্ষিণ হালিশহর এলাকার ভোটার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে স্বস্তি নেমেছে। এ সিদ্ধান্তকে নগরবাসী সাধুবাদ জানিয়েছি। এতদিন আতঙ্কের মধ্যেই ভোটারদের দুয়ারে গেছেন প্রার্থীরা। এখন প্রার্থীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সবকিছু বিবেচনায় নিলে ভালো সিদ্ধান্তই নিয়েছে ইসি।’
চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও চসিক নির্বাচনের সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা মুনীর হোসাইন খান বলেন, ‘নির্বাচন স্থগিত হয়েছে মৌখিকভাবে সিদ্ধান্ত পেয়ে প্রশিক্ষণ বন্ধ থাকার কথা জানিয়ে দিয়েছি। কমিশন পুনরায় যখনই সিদ্ধান্ত নিবে আমরা তখনই নির্বাচনের পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করবো।’