চসিক আইডি হ্যাক সাইবার নিরাপত্তায় সর্বাত্মক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিন

31

স¤প্রতি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ৫টি ওয়ার্ডে আইডি হ্যাক করে জালিয়াতির মাধ্যমে ৫৪৭টি জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করার ঘটনায় তোলপাড় চলছে দেশব্যাপী। চসিকসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এ ঘটনায় সাইবার নিরাপত্তায় ব্যাপক সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র নিশ্চিত করেছে। এঘটনার সাথে জড়িত পাঁচজনকে আইনশৃঙ্খরা বাহিনী গ্রেফতার করেছে। গতকাল দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এঘটনায় পুলিশ দাবি করেছে ইতোমধ্যে হ্যাকার চক্রটি ৫ হাজার জন্মসনদ তৈরি করেছে। অন্যদিকে চসিক বলছে- গত দুই সপ্তাহ ধরে ৫৪৭টি সনদ ইস্যু করেছে চক্রটি। সংখ্যা অমিল হলেও প্রশ্ন উঠেছে, হ্যাকের মাধ্যমে নাকি কাউন্সিলরের আইডি-পাসওয়ার্ড বেহাত হওয়ায় এমন জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে অধিকতর তদন্তের দাবি তুলে পুলিশ সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা না দিলেও কাউন্সিলর কার্যালয়ের যোগসূত্র খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রতিবেদনে চসিকের আইটি শাখার সূত্রে উল্লেখ করা হয়, গত ৮ জানুয়ারি ৩৮নং দক্ষিণ-মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডেই প্রথম এ সমস্যা দেখা দেয়। পরে ১১ জানুয়ারি জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ে চিঠি দেয় চসিক। ওইদিন থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত একই সমস্যা পাঁচটি ওয়ার্ডে দেখা মেলে। ওয়ার্ডগুলো হলো নগরীর ১১নং দক্ষিণ কাট্টলি, ১৩নং পাহাড়তলী, ৩২নং আন্দরকিল­া, ৩৮নং দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর, ৪০নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ড। এসব ওয়ার্ড থেকে ৫৪৭টি জন্মসনদ জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে থানায় সাধারণ ডায়েরি, মামলা পর ছায়া তদন্ত শুরু করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। এরপরেই মূলত চক্রের চার সদস্য ধরা পড়ে। একইসাথে আপদকালীন প্রতিরোধ হিসেবে আক্রান্ত পাঁচটি ওয়ার্ডের জন্মনিবন্ধন আইডি বøক করে রেখেছে সিটি কর্পোরেশন। বাকি ওয়ার্ডগুলোতেও সতর্কতার সাথে কাজ করার পাশাপাশি আইডি-পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের নির্দেশ দিয়েছে চসিক। মঙ্গলবার দুপুরে সিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সন্মেলনে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার ডা. মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, জন্মসনদ ইস্যুর ঘটনায় আটককৃত চক্রটিসহ আরও একাধিক গ্রæপ জালিয়াতি কার্যক্রম দীর্ঘদিন যাবৎ সক্রিয়। এ পর্যন্ত তারা ৫ হাজারেরও অধিক জন্ম নিবন্ধন সনদ ইস্যু ও বিতরণ করেছে। সারাদেশে সক্রিয়ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তাদের মতো এমন একাধিক জন্মসনদ জালিয়াত চক্রের সন্ধান আমরা পেয়েছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘জন্ম নিবন্ধন সেবা’ ‘জন্মনিবন্ধন সংশোধন সেবা’ ‘জন্ম নিবন্ধন হেল্প সেন্টার’ ইত্যাদি নামে বেনামে গ্রæপ খুলে তাতে স্বল্প সময়ে ও স্বল্পমূল্যে জন্মসনদ প্রদানের পোস্ট করেন জালিয়াত চক্রের সদস্যরা। দৈনিক পূর্বদেশের সংবাদ বিশ্লেষণে বলা হয়, হ্যাকের চেয়ে কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে পাসওয়ার্ড বেহাত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে দাবি সংশ্লি­ষ্ট অনেকের। কেননা সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরের জন্য নির্দিষ্ট আইডি থাকলেও অনেক সময় তা তাদের ব্যক্তিগত সহকারী ও জন্মনিবন্ধন সহকারীরা ব্যবহার করে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ওয়ার্ড কাউন্সিলরের আইডির পাসওয়ার্ড তাদের ব্যক্তিগত সহকারী ও জন্মনিবন্ধন সহকারীর কাছে থাকে। সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা মনে করেন। এই কারণে আইডি হ্যাকের ঝুঁকি তৈরি হয়।
সম্প্রতি আমরা লক্ষ করেছি, সরকারের ই-গভর্নমেন্ট কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিমের (সার্ট) সাইবার ডায়াগনসিস ল্যাবে দেশের আর্থিক খাতের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানসহ মোট ১৯টি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার ওয়েবসাইট থেকে ‘ক্যাসাবø্যাঙ্কা’ নামের একটি ম্যালওয়্যার ভাইরাস কর্তৃক তথ্য চুরির বিষয়টি ধরা পড়েছে। জানা গেছে, তথ্য চুরির নেপথ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক একটি হ্যাকার গ্রæপ, যারা চুরি করা তথ্য হ্যাকার গ্রæপের কাছে পাঠাচ্ছে। হ্যাকার গ্রæপটি চুরি করা তথ্য দিয়ে ওইসব প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলা চালালে তা ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবন ইন্টারনেটনির্ভর হয়ে পড়ছে। কেনাকাটা, ব্যাংক লেনদেন থেকে শুরু করে একান্ত গোপনীয় ব্যক্তিগত তথ্য-সবকিছুই এখন হাতের মুঠোয় থাকা স্মার্টফোন, কম্পিউটার ও অন্যান্য ডিভাইসে স্থান পাচ্ছে। ফলে একে কেন্দ্র করে নানা ধরনের অপরাধও পর্যায়ক্রমে বাড়ছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। দেশে ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে অর্থ চুরিসহ নানা অপরাধ বাড়ছে। ইন্টারনেট মানবজীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ হয়ে পড়ায় এ সংক্রান্ত অপরাধ রোধে সচেতনতাই হতে পারে সবচেয়ে বড় রক্ষাকবচ। তবে কেবল সচেতনতা তৈরিই যথেষ্ট নয়, পাশাপাশি সাইবার অপরাধ দমনে কঠোর আইন ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থাও থাকতে হবে। সাইবার ক্রাইম ইউনিট নামে পুলিশের একটি ইউনিট আছে বটে, তবে এর জনবল খুবই অপ্রতুল। যে হারে সাইবার অপরাধ বাড়ছে এবং মানুষ যে হারে ইন্টারনেটনির্ভর হচ্ছে, তা বিবেচনায় নিয়ে এ খাতের জনবল বাড়ানো জরুরি। পাশাপাশি চসিকের মত প্রতিষ্ঠনগুলোতে প্রতিটি ওয়ার্ডে ডিগ্রিধারী অভিজ্ঞসম্পন্ন কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ সময়ের দাবি।