চসিকের সম্পত্তির ইজারা নিয়ে ‘আয়নাবাজি’

62

টাকার বিনিময়ে এক ব্যক্তির পরিবর্তে জেল খাটতেন আরেকজন। এমন ব্যতিক্রম ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় বাংলা ছায়াছবি ‘আয়নাবাজি’। যা বেশ সাড়া ফেলেছিল দর্শক হৃদয়ে। তবে এমনই এক চাঞ্চল্যকর ‘আয়নাবাজির’ ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ভূ-সম্পত্তি শাখায়। তবে এটা জেল খাটা নয়, ইজারাদার সাজিয়ে জালিয়াতি। নিয়ম অনুযায়ী চসিক সম্পত্তির ইজারা পেয়েছেন একজন। আর নামে মিল থাকায় আরেকজন ব্যক্তি ইজারাদার সেজে হাতিয়ে নেন সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি!
এমন জালিয়াতির ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা। তাই জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, জানতে চেয়ে শোকজ করেছেন তিনি। অভিযুক্তরা হলেন সহকারী এস্টেট অফিসার এখলাস উদ্দিন এবং অফিস সহকারী মো. জাহাঙ্গীর।
এছাড়া এখলাস উদ্দিন অভয়মিত্র শ্মশান ঘাটে কর্তৃপক্ষের কোন ধরনের অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন ব্যক্তিকে ফলক লাগানোর অনুমতি দিয়েছেন, যা তিনি দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন না। এ বিষয়টি নিয়েও শোকজ করা হয়েছে তাকে। একইসাথে তিনদিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ভূ-সম্পত্তি শাখা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে চসিকের মালিকানাধীন শাহ আমানত মার্কেটের কার পার্কিং ইজারা পান হাজী আবদুল মাবুদের ছেলে দিদারুল ইসলাম। ২০১৭ ও ষ ২০১৮ সালে একই ব্যক্তি ইজারা পান। কিন্তু ২০১৯ সালে এসে ইজারা দেওয়া হয় একই নামের আরেক ব্যক্তিকে। তার পিতার নাম মৃত মোহাম্মদ হোসেন। এছাড়া ঠিকানা ও স্বাক্ষরে কোন মিল নেই। মূলত একই নামের আরেক ব্যক্তিকে ইজারাদার বানিয়েছেন সাবেক এস্টেট অফিসার এখলাস উদ্দিন। নথি পর্যালোচনা করে তারই সত্যতা পেয়েছেন প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা। শুধু তাই নয়, প্রকৃত ইজারাদার কার পার্কিংটি ইজারা প্রাপ্তির জন্য আবেদন করলেও নথি গায়েব করা হয়েছে। এছাড়া ভুয়া ইজারাদারের পক্ষে সাফাই গেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ভুল বুঝিয়েছেন। ফলে জালিয়াতির পক্ষে নিজের শক্ত অবস্থানের কারণে সিটি কর্পোরেশনের অন্যান্যদের ভুল বুঝিয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করেছেন অভিযুক্ত দুই ব্যক্তি। তাই তাদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, এ মর্মে তিন দিনের মধ্যে উত্তর জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছেন প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মুফিদুল আলম।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, এমন জালিয়াতি ও দুর্নীতি কোনভাবে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। তাছাড়া অভয়মিত্র শ্মশানে নিজে চেক রিসিভ করে ফলক লাগানোর অনুমতি দিয়েছেন। অথচ কর্তৃপক্ষের কোন অনুমোদন নেওয়া হয়নি। তদন্ত করে এসব প্রমাণিত হয়েছে। তার প্রেক্ষিতেই শোকজ করা হয়েছে। তাদের জবাবের পর সিটি কর্পোরেশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে এমন জালিয়াতির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন এ কর্মকর্তা।