চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প সরকারের আনুকূল্য প্রত্যাশা

21

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর নগর হলেও এখনও পর্যন্ত আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর কোন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেনি। সাবেক মেয়র প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরী তার দীর্ঘ সময়কালে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন এবং বর্র্জ্য রিসাইক্লিং করে সার উৎপাদনসহ নানা কাজে ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এ জন্য হালিশহর সাগরিকা এলাকায় একটি প্রজেক্টও করেছিলেন। সর্বশেষ এটি আর হয়ে উঠেনি। পরবর্তীতে যারাই মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছিলেন, প্রত্যেকে এ নিয়ে কাজ করেছেন, দৃশ্যত কোন সুফল নগরবাসী পান নি। বর্তমান মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরী দায়িত্ব নেয়ার শুরু থেকে এ খাতের আধুনিকায়ন এবং একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলাসহ বর্জ্যকে সারে রূপান্তর করে কৃষি কাজে ব্যবহার উপযোগী করার উদ্যোগের কথা বলে আসছেন। এ নিয়ে বিশ্বব্যাংক ও কোরিয়ার প্রতিনিধিদের সাথে বিভিন্ন সময় কথাবার্তাও হয় চসিক কর্তৃপক্ষের। সর্বশেষ সুখবরটা হল, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন ও স্বাস্থ্যসম্মত করতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে (চসিক) প্রায় ১৪২ কোটি ৮০ লাখ টাকা অনুদান দিতে ইচ্ছে পোষণ করেছে কোরিয়া সরকার। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সূত্রে এ খবরটি দৈনিক পূর্বদেশসহ সহযোগী সংবাদপত্রে গতকাল প্রকাশিত হয়। সূত্র জানায়, অনুদানটি পেতে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনপূর্বক আগামি ২০ ফেব্রæয়ারির মধ্যে কোরিয়ান দূতাবাসে প্রকল্প প্রস্তাবনা জমা দিতে হবে। উল্লেখ্য যে, এ প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছিল গতবছরের জুনে। বিশ্ব ব্যাংক এবং কুরিয়া সরকারের সহযোগিতায় বর্জ্য ব্যস্থাপনার উপর ফিজিবিলিটি স্ট্যাডিও চালানো হয়। গত সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে চসিক এর উপর প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। এসময় চসিক মেয়র বলেছিলেন, “পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সারা বিশ্বসহ বাংলাদেশ আজ ভারসাম্যহীন অবস্থানে আছে। এ কারণে টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে চট্টগ্রাম নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধন করতে হবে। চট্টগ্রাম হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির স্বর্ণদ্বার। এ বিবেচনায় চট্টগ্রামকে আধুনিক বিশ্বমানের নগরীতে পরিণত করতে হবে। এক্ষেত্রে কোরিয়ান ইনভারনম্যান্ট ইন্ডাস্ট্রিজ এন্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট একটি প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাই কার্য সম্পাদন করেছেন। যার মাধ্যমে আমরা অনেক কিছু অবহিত হয়েছি। এর মধ্যে যা অপূর্ণতা আছে তা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পর্যবেক্ষণ করে একটি টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। এর মধ্যদিয়ে চট্টগ্রাম নগরীতে একটি আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।” মাত্র ৬ মাসের ব্যবধানে কোরিয়ান সরকার তাদের সম্মতি প্রদান করেন। চসিক কর্তৃপক্ষকে কোরিয়ান সরকারের আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার এ আশ্বাস নগরবাসীকে আশাবাদী করেছে। মূলত কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সরেজমিনে পরিদর্শন ও প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা করতে সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর নেতৃত্বে গত ১০ জানুয়ারি থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় ভ্রমণ করেন তিন সদস্যের একটি দল। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পত্র দিয়ে চসিক। গত ২৫ জানুয়ারি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত পত্রটি প্রেরণ করা হয়। তাতে বলা হয়, বর্তমান হালিশহর টিজিতে প্রায় ৬০ ফুট উঁচু পাহাড়ের মত হয়েছে বর্জ্যরে স্তূপ। বর্জ্যগুলো আলাদা করে সঠিক ব্যবহার, সব ধরনের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপন ও জনবলকে প্রশিক্ষণ দিবে কোরিয়া। এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন কেবল জায়গা, বর্জ্য ও জনবল দিবে’।
ওই পত্র সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংক এবং বাংলাদেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল সাসটেনোবিলিটি অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন প্রজেক্টের’ অন্তর্গত ‘প্রি-ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর সারকোলার ইকোনোমি থ্রো ইন্টিগ্রেটেড সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ইন দ্য কোস্টাল রিজিয়ন অব বাংলাদেশ’ এর অংশ হিসেবে কোরিয়া সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ‘কোরিয়ান এনভায়রনমন্টাল ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড টেকনোলোজি ইনস্টিটিউট (কেইআইটিআই)’ এর আমন্ত্রণে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, মেয়রের একান্ত সচিব ও ভারপ্রাপ্ত পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা আবুল হাশেম দক্ষিণ কোরিয়া সফর করেন। সফরকালে তাঁরা কোরিয়ার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত স্থাপনাসমূহ পরিদর্শন করেন এবং কেইআইটিআই থেকে তাদের প্রিফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট এবং কোরিয়া সরকার হতে ভবিষ্যৎ সহযোগিতা সংক্রান্ত আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনায় কোরিয়া সরকার চসিককে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে ২০২৪ সালে ১৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৪২ কোটি ৮০ লাখ টাকা) অনুদান প্রদানে ইচ্ছে পোষণ করেন। কোরিয়া থেকে পাঠানো প্রোজেক্ট কনসেপ্ট প্রপোজালসহ বিষয়টি অবগত করেছে চসিক। আমরা আশা করি, প্রকল্পটি যেহেতু চট্টগ্রাম নগরের জন্য একটি প্রয়োজনীয় ও জনবান্ধব উদ্যোগ, তাই সরকার এ ক্ষেত্রে চসিককে সবধরনের সহযোগিতা প্রদানে সম্মতি দিবে। মন্ত্রণালয়ের আনুকূল্যে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকতল্পটি বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের একটি দীর্ঘদিনের ইচ্ছের প্রতিফলন ঘটবে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবে- এমনটি প্রত্যাশা নগরবাসীর।