চসিকের উন্নয়ন প্রকল্প কাজের গুণগত মান ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে

17

দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ নগর এ চট্টগ্রাম। বাণিজ্য নগরী হিসেবে চট্টগ্রামের খ্যাতি বিশ্বব্যাপী। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এ নগরীর উন্নয়ন ও চট্টগ্রামের দুুঃখ হিসেবে পরিচিত জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক), পানি উন্নয়ন বোর্ড (ওয়াপদা), ওয়াসা, জেলা পরিষদসহ বিভিন্ন সংস্থার নানামুখী উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রায় ৬হাজার কোটি টাকার জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সুপেয় পানি ও সুয়ারেজ প্রকল্পের অধিনে ওয়াসার ২টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। পাশাপাশি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আড়াই হাজার কোটি টাকার সড়ক উন্নয়ন, আন্ডারপাস, ফুট ওভারব্রিজ, ফুটপাত ও সড়ক সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য প্রকল্পের অনুমোদন পেয়েছে। এর পাশাপাশি বারইপাড়া খাল খননের প্রকল্পও বাস্তবায়ন করছে চসিক। গতকাল দৈনিক পূর্বদেশে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মেয়র রেজাউল করিম দায়িত্ব গ্রহণের আট মাসের মাথায় অনুমোদন পায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি। কোনো ধরনের ম্যাচিং ফান্ড ছাড়া আড়াই হাজার কোটি টাকা বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়নে ব্যয় হচ্ছে। সড়ক ছাড়াও ফুটওভার ব্রিজ, কালভার্ট, গোলচত্বর সংযোজন থাকায় নগরীর অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। ইতোমধ্যে ৩০০ কোটি টাকার টেন্ডার শেষ করে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। সঠিকভাবে প্রকল্পের অর্থ ব্যয় এবং কাজের গুণগত মান নিশ্চিত হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে বদলে যাবে চট্টগ্রাম। এমনটাই বিশ্বাস সংশ্লিষ্টদের। মেয়র নিজেই পূর্বদেশকে বলেছেন, ‘আমি মেয়র হওয়ার পরপরই প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামকে বদলে দিতে চসিকের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বরাদ্দ দিয়েছেন। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রামের মূল সড়কগুলো প্রশস্ত এবং জনবান্ধব হবে, হ্রাস পাবে যানজট। পথে হাঁটতে মানুষের যে কষ্ট, তা লাঘব হয়ে নান্দনিক চট্টগ্রামের পথগুলোতে হাঁটাও একটি বিনোদন হয়ে উঠবে।’ চসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের অধীনে ৩০০ কোটি টাকার এ কাজ এয়ারপোর্ট রোডে সড়কের সম্প্রসারণ করে চারলেনে উন্নীত করাসহ ওভানপাস নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া রাস্তা পার হতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ৩১টি মোড়ে ৩৮টি ফুটওভার ব্রিজ করার পরিকল্পনাও প্রকল্পটির অধীনে রয়েছে। অনুমোদিত প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত। একই প্রকল্পে নগরের ৭৬৯ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়ন, ১৫২০ মিটার করে ৩৮টি ফুট ওভারব্রিজ, ২২৪ মিটার করে ১৪টি ব্রিজ এবং ৮৭ মিটার করে ২২টি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। আমরা চসিক মেয়র ও সংশ্লিষ্টদের সাথে সহমত ও আশা রাখতে চাই, এ প্রকল্প সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন হলে নগরীর সড়ক নেটওয়ার্কে আমূল পরিবর্তন আসবে। নগরীর যানজট নিরসন হবে, পথচারি নির্ভয়ে হাঁটতে পারবে। সর্বোপরি নগরীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার নগরীর সেবা সংস্থাগুলোকে যেসব প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দ দিয়ে থাকে-এর পেছনে একটি মহৎ উদ্দেশ্য থাকে। প্রকল্প সঠিক ও স্বচ্চতার সাথে বাস্তবায়ন হলে নগরবাসী উপকৃত হবে, সরকারের ভাবমুর্তি উজ্জ্বল হবে। কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতা তিক্ত। প্রকল্প আসে, বাস্তবায়নও হয় কিন্তু এর পেছনে বড় ধরণের অনিয়মের অভিযোগ সংবাদপত্রে শিরোনাম হয়েছে। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি ও জনদুর্ভোগের ফলে সরকার ও নগরবাসী সুফল থেকে বঞ্চিত হন। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও অস্বচ্ছতা থাকলে তা কোনদিন টেকসই ও জনবান্ধব হবে না। বর্তমান নগর পিতা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। এ নগরীর বরপুত্র। নগরীর উন্নয়ন, আলোকায়ন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলোর তার অভিজ্ঞতা দিয়েই তিনি প্রকল্প গ্রহণ করছেন নিঃসন্দেহে। আমরা আশা করি, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ওপর যে আস্থা রেখে কোনরকম ম্যাচিং ফান্ড ছাড়া যে প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছেন তা স্বচ্ছতার সাথে যথাযথ ব্যবহার করা হবে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর আস্থার জায়গাটি যেমন দৃঢ় হবে, তেমনি চট্টগ্রামবাসীর কাছে সরকারের ভাবমূর্তিও বেড়ে যাবে। সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিকতায় প্রকল্পটি যথাসময়ে স্বচ্ছার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন হবে-এমনটি প্রত্যাশা সকলের।