চলে গেলেন ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধির প্রবক্তা মুশতাক

43

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেওয়ার প্রবক্তা রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক আর নেই। রাজধানীর একটি হাসপাতালে গত বুধবার দিবাগত রাত পৌনে ১টায় তার মৃত্যু হয় (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)। তার ছেলে সাদীদ আর চৌধুরী বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গতকাল বাদ মাগরিব গুলশান আজাদ মসজিদে মরহুমের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়। রেজাউল হক এক ছেলে ও দুই মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
১৯৫০ সালের ১১ আগস্ট চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানার ভিংরোল গ্রামের মিয়া বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন রেজাউল হক মুশতাক। চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম হাইস্কুলে অধ্যয়নকালে ১৯৬৫ সালে তিনি ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। স্কুলের ছাত্র অবস্থায় তিনি ১৯৬৬-৬৭ সালে নির্বাচিত হন চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের নির্বাহী কমিটির কনিষ্ঠতম সদস্য। পরে ১৯৬৭-৬৮ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ, ঢাকা কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক হন তিনি।
রেজাউল হক মুশতাক ১৯৬৮ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কলেজ শাখা, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের প্যাডে ‘আজব দেশ’ শিরোনামে নিজের সারথী (ছদ্মনাম) নামে প্রথম ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি ব্যবহার করেন। ১৯৬৮ সালে যখন আগরতলা মামলার প্রহসনমূলক বিচারে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান মৃত্যুদন্ডাদেশের রায় শোনার জন্য অপেক্ষায়, সেই সময়ে ঢাকা কলেজের এক ছাত্র, তাঁর পুত্র শেখ কামালের সহপাঠী রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক বঙ্গশার্দুল শেখ মুজিবের জন্য নতুন এক উপাধির প্রস্তাব দিলেন। সেই উপাধি ‘বঙ্গবন্ধু’। এরপরই মূলত ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রæয়ারি রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমানকে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। ওই সভায় ডাকসুর তৎকালীন ভিপি তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
রেজাউল হক মুশতাক পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য ছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তীতে তিনি ১৯৭২ সালে সফলতার সাথে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
প্রধানমন্ত্রীর শোক : মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এক শোকবার্তায় বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
তথ্যমন্ত্রীর শোক : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘বঙ্গবন্ধু’ নামকরণের প্রথম প্রণেতা এবং ’৬৯ এর গণআন্দোলনের অন্যতম সেনানী বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল হক চৌধুরীর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
তার মৃত্যুর সংবাদে শোকাহত তথ্যমন্ত্রী প্রয়াতের আত্মার শান্তিকামনা করেন এবং তার শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তথ্যমন্ত্রী তার শোকবার্তায় বলেন, দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন এবং রাজনীতি বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আজীবন ধারণকারী রেজাউল হক চৌধুরী চিরভাস্বর হয়ে থাকবেন।
এছাড়াও বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাকের ইন্তেকালে শোক প্রকাশ করেছেন ভ‚মিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, কেএন হারবার কনসোটিয়াম লিমিটেডের পরিচালক জুবায়ের হাসান চৌধুরী, চট্টগ্রাম সমিতি ঢাকার সভাপতি আব্দুল মোবারক, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মাবুদ, চান্দগাঁও আবাসিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি এডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমেদ, সাবেক সহ-সভাপতি লায়ন আহসানুল করিম, সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার ইসমাইল প্রমুখ।