চলমান কঠোর লকডাউন দেশের মানুষের নিয়ম মানার মানসিকতা জরুরি

17

 

ঈদুল আযহার পর সরকারি নির্দেশনায় কঠোর লকডাউন শুরু হলো। সরকারি কড়াকড়ির আয়োজন বেশ পরিপাটি। সরকার চায় মানুষ লকডাউন মেনে ঘরে থাকুক। করোনা সংক্রমণ দেশে নিয়ন্ত্রিত হোক। দেশের নর-নারীকে করোনা ভাইরাস হতে নিরাপদ রাখতে সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রচার মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরির চেষ্টার ত্রুটি করছে না। কিন্তু ‘যার বিয়ে তার খবর নেই, পাড়াপড়শীর ঘুম নেই’- এমন অবস্থায় সরকার। সরকারি সব আয়োজন ও আর্থিক খরচ ব্যর্থতায় পর্যবশিত হচ্ছে মনে হয়। সাধারণ জনগণ কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে স্বাভাবিক ভাবে লকডাউন ভঙ্গ করছে। রোগী কিংবা বিপদ আপদের বশবতি হয়ে, হয় তো স্বল্প সংখ্যক লোকজন লকডাউনের মধ্যে ঘর থেকে বের হতে বাধ্য হয়। তাদের ব্যাপারে সরকারি নিয়মকানুন শিথিল তো আছেই। এ অজুহাতের অপকৌশলে অসংখ্য মানুষ লকডাউন ভঙ্গ করে এখানে সেখানে যানবাহন নিয়ে ঘোরাফেরা করছে। সড়কে গাড়ি চলছে অহরহ। অথচ গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও সিএনজি অটোরিক্সা, ব্যাটারি চালিত রিক্সা, রিক্স ও মালবাহী পিকআপ ব্যবহার করে মানুষ সড়কগুলোকে সচল করে রাখছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তেমন কার্যকর ভ‚মিকা পালন করতে দেখা যায় না। বিশেষ করে পুলিশ দু’পয়সা রোজগারের উদ্দেশ্যে আসকারা দিচ্ছে অবৈধভাবে চলাচলকারি যানবাহন সমূহকে। পত্রিকার প্রতিবেদন হতে জানা যায় সন্ধ্যার পর মানুষ লকডাউন পালন করছে গলিতে, নগরীর মূল সড়কের পাশে, যত্রতত্র বসে আড্ডা দিয়ে। গাড়ির অবাধ চলাচল তো আছেই, তা ছাড়া রমজানে দিনের বেলা হোটেলগুলো যেমন ছোট্টদরজা খোলা রেখে পর্দা টাঙিয়ে চায়ের দোকান, হোটেল চালু রাখে, সে ভাবে লকডাউনেও চায়ের দোকান, হোটেল, হাটবাজার সবখানে লোক সমাগম স্বাভাবিকের মতোই। দিনের বেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তারা কোন কোন জায়গায় গিয়ে লোকজন, দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মামলা ও জরিমানা আদায় করতে দেখা যায়। কঠোর লকডাউনের প্রথম তিন দিনে প্রশাসনের অভিযানে ২১৫টি মামলা হয়েছে এমন খবর দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার এক প্রতিবেদন হতে জানা যায়।
চট্টগ্রামে এসব মামলার পাশাপাশি সাড়ে ৬৩ হাজার টাকা জরিমানার খবর পাই। চট্টগ্রামে আইন লংঘনের বিপরীতে এরকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল। তা ছাড়া সন্ধ্যা ও রাতের বেলায় কোন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা তেমন স্বাভাবিক দেখা যায় না। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা তো মাঠ ছেড়ে বাসায় চলে যান। এর ফাঁকে সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত অবাধে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন হতে দেখা যায় এবং লকডাউনের কার্যকারিতা নষ্টের পথ সুগম হতে দেখা যায়। এহেন পরিস্থিতিতে সরকারের লকডাউন কর্মসূচি ব্যর্থ হতে যাচ্ছে। জনগণকে এর জন্য নিজেদের সচেতন হওয়ার পাশাপাশি প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসতে হবে। আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও দায়িত্বশীল আচরণে অভ্যস্থ হতে হবে। নয় তো সরকারের উদ্দেশ্য যেমন ভেস্তে যাবে তেমনি করোনা পরিস্থিতির কোন রকম আশানুরূপ উন্নতি হবে না। তাই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অভিমত- জনগণকে লকডাউন আইন মেনে ঘরে থেকে করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সরকারকে সহযোগিতা করা। দেশের মানুষের আইন ও নিয়ম মানার মানসিকতা বর্তমান পরিস্থিতিতে খুবই জরুরি।