চর্যাপদ বিষয়ক ওয়েবিনার

16

 

চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্র (সিএইচআরসি) আয়োজনে ‘বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদ’ বিষয়ক সেমিনার গত ১ আগস্ট রোববার রাতে এফবি লাইভে অনুষ্ঠিত হয়। ইতিহাসবেত্তা ও সিএইচআরসির সভাপতি সোহেল ফখরুদ-দীনের সভাপতিত্বে এই সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্যভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিনবোধি ভিক্ষু। প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রবীন শিক্ষাবিদ আবদুল আলীম। বিশেষ আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন অধ্যাপক জিতেন্দ্র লাল বড়ুয়া, সাংস্কৃতিক সংগঠক কবি উদয়ন বড়ুয়া, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ। সেমিনারে বক্তারা বলেন, চর্যাপদ বাংলা ভাষার প্রাচীনতম পদ সংকলন তথা বাংলা সাহিত্যের প্রধান নিদর্শন। ভারতীয় আর্য ভাষারও প্রাচীনতর রচনা এটি। খ্রিষ্টীয় অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত এই গীতিপদাবলির রচয়িতারা ছিলেন সহজিয়া বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণ।
বৌদ্ধ ধর্মের গূঢ় অর্থ সাংকেতিক রূপের আশ্রয়ে ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যেই তাঁরা পদগুলো রচনা করেছিলেন। সেমিনারে বিজ্ঞ বক্তারা আরো বলেছেন, উনিশ শতকের শুরুর দিকেও বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস ছিল প্রায় পুরোটাই অন্ধকারে। ১৮৮২ সালে রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র ‘ঝধহংশৎরঃ ইঁফফযরংঃ খরঃবৎধঃঁৎব ওহ ঘবঢ়ধষ’ গ্রন্থে সর্বপ্রথম নেপালে বৌদ্ধ তান্ত্রিক সাহিত্যের কথা উল্লেখ করেন। এর পরই এ নিয়ে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়। ১৯০৭ সালে কলকাতার সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক পন্ডিত মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজ দরবারের গ্রন্থাগার থেকে ‘সরহপাদের দোহাকোষ’, ‘কৃষ্ণপাদের দোহাকোষ’, ‘ডাকার্ণব’, এবং ‘চর্যাচর্যবিনিশ্চয়’ নামে চারটি প্রাচীন গ্রন্থ আবিষ্কার করেন। এর পরই সূচিত হয় বাংলা সাহিত্যের নতুন এক প্রাচীন অধ্যায়। এই গ্রন্থথেকে জানা যায় বাংলা ভাষার প্রাচীন ইতিহাসের কথা। ১৯১৬ সালে গ্রন্থগুলো একত্রে করে ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’ থেকে সম্পাদকীয় ভূমিকাসহ ‘হাজার বছরের পুরাতন বাংলা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা’ নামের একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়। ‘চর্যাচর্যবিনিশ্চয়’-এর নাম দেন চর্যাপদ। অন্য তিনটি গ্রন্থের ভাষা অপভ্রংশ হলেও চর্যাপদ ছিল প্রাচীন বাংলায় রচিত।