চমেক হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্যের অবসান ও সেবার মান বৃদ্ধি জরুরি

18

 

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বৃহত্তর চট্টগ্রামের বৃহত্তম সরকারি হাসপাতাল। চট্টগ্রামের অন্য কোন সরকারি- বেসরকারি হাসপাতাল চিকিৎসার ক্ষেত্রে চমেক হাসপাতালের মতো সমৃদ্ধ নয় । এখানে অনেকগুলো বিভাগ রয়েছে। তৎমধ্যে হার্ট ও গাইনী ওয়ার্ড দুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উল্লেখ্য যে, ওয়ার্ড দুইটিতে রোগীর ভিড় বেশি। সার্জারি, নিউরো- সার্জারিসহ অন্যান্য ওয়ার্ডেও তেমন একটা সিট খালি পাওয়া যায় না। কেননা দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা নেয়ার আশ্রয়স্থল চমেক। দেশে যাদের অর্থবিত্ত আছে তারা প্রাইভেট হাসপাতালগুলো এবং বিশেষ ক্ষেত্রে বিদেশে চিকিৎসাসেবা নিতে সক্ষম। গরিব, অসহায় মানুষ আর্থিক অসংগতির কারণে প্রাইভেট হাসপাতাল কিংবা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারে না । এজন্যে বৃহত্তর চট্টগ্রামের অধিকাংশ মানুষ বাধ্য হয়ে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার জন্য ছুটে যায়। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অনিয়ম, দুর্নীতি, দালালদের দৌরাত্ম্য, রোগী ও রোগীর স্বজনদের হয়রানি এবং দুভোর্গের বিষয়ে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রায়ই প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে দেখা যায়। কিন্তু কার্যত চমেক হাসপাতালের সেবার মান বাড়তে দেখা যায় না। রোগী ও রোগীর স্বজনদের দুর্ভোগেরও কোন পরিবর্তন আজও লক্ষ করা যাচ্ছে না।
দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার এক প্রতিবেদন হতে জানা যায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগী, রোগীর স্বজন এবং দর্শনার্থীদের পদে পদে হয়রানি, দুর্ভোগ এখানে চরম আকার ধারণ করেছে। পাকিস্তান আমলে দরিদ্র মানুষের সুচিকিৎসা প্রদানের লক্ষে এ হাসপাতাল তৈরি হয়েছিল। তখন হতে চমেক হাসপাতালটি এতদঅঞ্চলের দরিদ্র মানুষের একমাত্র চিকিৎসার আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করেছে। স্বাধীনতার পর এ হাসপাতালে নতুন নতুন বিভাগ খোলা থেকে শুরু করে বহুগুণে চিকিৎসার সুযোগ বৃদ্ধি করেছে অতীতের সরকারগুলো। বিশেষ করে বর্তমান সরকার চমেক হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা বৃদ্ধি এবং উন্নতিকল্পে বহু পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তারপরও কার্যত চমেক হাসপাতালের দীর্ঘ দিনের দুর্নীতি, কর্মচারীদের অশোভন আচরণ, দালালি, রোগীদের আর্থিকভাবে হয়রানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে টাকা ছাড়া সময়মতো সুচিকিৎসা প্রাপ্তি হচ্ছে না রোগীদের। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অনিয়ম-দুর্নীতি তো আছেই, তার ওপর ক্যাজুয়াল স্টাফ বা উমেদাররাও নির্লজ্জভাবে টাকা আদায় করে এই হাসপাতালে। যা পূর্বদেশ পত্রিকার প্রতিবেদনে বিস্তারিত ওঠে এসেছে। এ অবস্থা আর কতদিন চলবে জানে না ভুক্তভোগীরা।
চমেক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসে অধিকাংশ হতদরিদ্র মানুষ। আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল কিংবা আন্দরকিল্লা মেটারনিটি হাসপাতালসহ প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর খরচ মেটানোর সামর্থ্য যারা রাখেনা তারাই মূলত বাধ্য হয়ে চমেক হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ভিড় করতে বাধ্য হয়। এ জন্যে বর্তমান সময়ে চমেক গরিবের হাসপাতাল হিসেবে তার পরিচিতি অস্বীকার করতে পারছে না। অথচ এখানে যাদের অর্থবিত্ত আছে তারা অর্থের জোরে সুচিকিৎসা হয়তো পায়। দরিদ্রদের কোন রকম মূল্যায়ন এখানে নেই। মূল্যায়ন কল্পনা দূরের কথা, দুর্ভোগের কথা শুনারও কেউ নেই। অনেকে গ্রাম হতে বাড়ি-ভিটা বন্ধক দিয়ে স্বজনের চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে আসে। ঠিকমতো ওষুধপত্র কেনার সামর্থ্য তাদের থাকে না। তাদের যেভাবে কর্মচারীরা হয়রানি করে এবং এটাসেটা বলে টাকা দিতে বাধ্য করে, তা খুবই অমানবিক। সরকারি এ হাসপাতালে গরিব মানুষের চিকিৎসা পাবার ক্ষেত্রে অব্যাহত বিড়ম্বনা ও হয়রানির পরিবেশের পরিবর্তন জরুরি। সরকার এখানে দরিদ্র রোগীদের ফ্রি চিকিৎসা ও ওষুদের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা ভর্তুকি দেয়। অথচ দরিদ্র সাধারণ মানুষ তা যথাযথভাবে পায় না। কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে অবশ্যই এমন অবস্থার উন্নতি হবে। সরকার দালালদের হয়রানি হতে রক্ষার জন্য অনেকগুলো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। ব্যবস্থাগুলো কার্যকর করার জন্য কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা, নিষ্ঠা এবং কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। গরিব মানুষ চমেক হাসপাতালে শান্তিতে চিকিৎসা সেবা পাক এমন আশা সংশ্লিষ্ট রোগী ও রোগীর স্বজনদের। শারীরিক জ্বালা যন্ত্রণায় অপারগতাবশত রোগীরা এখানে আসে। সাথে তাদের সাহায্যে স্বজনরা আসে। চরম বিপদের সময়ে তাদের আর্থিক ও মানসিক হয়রানি বড়ই অমানবিক। চিকিৎসা একটি মানবিক পেশা এবং তার সাথে সংশ্লিষ্টরা মানবিকতার পরিচয় দেবে এটাই সভ্য সমাজের দাবি। সভ্য সমাজে হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের অমানবিক আচরণ নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে এমন দাবি সমগ্র চট্টগ্রামবাসীর।