চমেক হাসপাতালে ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধি অসহায় রোগীদের প্রতি মানবিক হোন

10

কিডনি রোগীদের বেঁচে থাকার একমাত্র চিকিৎসা ডায়ালাইসিস। নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে পারলে নিয়তিতে হায়াত থাকলে তবে রোগী শত দুঃখের মধ্যেও জীবনকে উপভোগ করতে পারেন। অন্যথায় জীবন প্রদ্বীপ জ্বালিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তবে দেশে এ ডায়ালাইসিস সহজলব্দ নয়। সরকারি হাসপাতালগুলোতে সীমিত আকারে গরিব, অসহায় এবং মুক্তিযোদ্ধারা সামান্য ফি কিংবা একেবারে বিনা ফিতে এ চিকিৎসা পেয়ে থাকলেও অন্যান্য সাধারণ রোগীদের প্রতি ডায়ালাইসিস করতে প্রায় ৩ হাজার টাকা ফি গুণতে হয়। এটি বেসরকারি সেশান ফি। এ ফি আগে ছিল ২৭৯০ টাকা আর চমেক কর্তৃপক্ষ অসহায় ও গরিবদের ভতুর্কি দিয়ে ৫৩০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয় যা আগে ছিল ৫১০ টাকা। কিন্তু চমেক হাসপাতালে ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধিতে সাধারণ রোগী ও তাদের স্বজনরা চরম অসন্তোষ প্রকাশ করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ফি কমানোর আবেদন করে কোন সুফল না পাওয়ায় সর্বশেষ তারা আন্দোলনে নামে। গত শনিবার থেকে শুরু হওয়া এ আন্দোলন এখনও অব্যাহত আছে। এরমধ্যে আন্দোলনকারীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে পুলিশের সাথে তাদের সংঘাত সর্বশেষ একজনকে গ্রেফতারও করা হয়। জানা যায়, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে জামিন না দিয়ে সর্বশেষ জেলে পাঠানো হয়। চমেক কর্তৃপক্ষ সংক্ষুব্ধ রোগীদের প্রতি সদয় না হয়ে আন্দোলন দমনের চেষ্টা এবং ক্ষুব্ধ রোগীর স্বজনকে গ্রেফতার করার বিষয়টি সাধারণ মানুষ ভালোভাবে অনিয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চয় জানেন, দেশের অনেক কিডনি রোগী আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে ব্যয়বহুল ডায়ালাইসিস নিতে না পারায় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন। সরকারি হাসপাতালগুলোতে যারা চিকিৎসা নিতে আসেন তাদের অধিকাংশই অসহায়-গরিব, নি¤œ আয়ের বা মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। সুতরাং এখানে এসেই যদি তাদের কাছ থেকে বড় অংকের ফি নির্ধারণ করা হয় অথবা পূর্বের কোন ঘোষণা ছাড়া ফি ধার্য্য করা হয়, তাতে রোগী বা তাদের স্বজনরা সংক্ষুব্দ হতেই পারেন। কিন্তু তাই বলে দমন-পীড়নের আশ্রয় নেয়া কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি, চমেকের বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ প্রায় গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। কর্তৃপক্ষের উচিৎ স্বল্প মূল্যে সাধারণ রোগীদের সেবা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া। কারণে দেশের সাধারণ মানুষের চিকিৎসার সর্বশেষ আশ্রয় সরকারি হাসপাতাল। এখানে যদি চিকিৎসা করতে এসে হয়রানীর শিকার হতে হয়, মায়ের ডায়ালাইসিস করতে এসে যদি জেলে যেতে হয়, তবে তাদের আর ভরসার স্থান কোথায়? আমরা আশা করি, এ বিষয়ে চমেক কর্তৃপক্ষকে আরো সংযত ও মানবিক হতে হবে। আশার কথা, ডায়ালাইসিস ফি নিয়ে আন্দোলনের মাঝেই চমেক কর্তৃপক্ষ সরকারিভাবে কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস সেবা দিতে নতুন ১০টি মেশিন পেয়েছে। জানা গেছে, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এসব মেশিন কিডনি ওয়ার্ডে স্থাপন করা হবে। তখন অসহায় ও দরিদ্র রোগীদের নির্বিঘেœ কম খরচে ডায়ালাইসিস সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে। বৃহস্পতিবার দৈনিক পূর্বদেশে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গরিব রোগীদের ডায়ালাইসিস সেবা দিতে ২৫ জনের একটি তালিকা চ‚ড়ান্ত করেছে। হাসপাতালের বর্তমান সক্ষমতা দিয়ে তাদেরকে ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া নতুন করে আসা ১০টি ডায়ালাইসিস মেশিন চালু হলে আরও শতাধিক গরিব রোগীকে ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, বর্তমানে হাসপাতালের কিডনি ওয়ার্ডে চারটি ডায়ালাইসিস মেশিন চালু আছে। আরও তিনটি ডায়ালাইসিস মেশিন হাসপাতালের করোনা ইউনিট রয়েছে। এখন করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় এই তিনটি মেশিন গরিব ও মুমূর্ষু রোগীদের সেবায় ব্যবহার করা হবে। সব মিলিয়ে বর্তমানে হাসপাতালে ৭টি ডায়ালাইসিস মেশিন রয়েছে। এছাড়া গতকাল ঢাকা থেকে আরও ১০টি ডায়ালাইসিস মেশিন এসেছে। এসব মেশিন চালু হওয়ার পর মোট ১৭টি মেশিনের মাধ্যমে নির্বিঘেœ গরিব রোগীদের ডায়ালাইসিস সেবা প্রদান করা হবে। তাছাড়া এখানে সরকারিভাবে কম খরচে ডায়ালাইসিস সেবা নিতে পারবেন কিডনি রোগীরা। একজন রোগীকে ছয় মাসের জন্য একবারে দিতে হবে ২০ হাজার টাকা। প্রতি সপ্তাহে দুই সেশনে ৪১৬ টাকায় এ ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া হবে।
হাসপাতালে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় স্থাপন করা স্যান্ডর ডায়ালাইসিস সেন্টারের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে চমেক কর্তৃপক্ষ বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না। তাদের সাথে চুক্তি অনুযায়ী ফি দিয়ে রোগীদের সেবা নিতে হবে। আর সরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত ডায়ালাইসিস সেবা চালু হলে গরিব রোগীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে।