চমেক বার্ন ইউনিট প্রকল্প এলাকায় দেড় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

30

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের গোঁয়াছি বাগান এলাকায় দেড়শো শয্যার বার্ন ইউনিট নির্মাণ হতে যাচ্ছে চীনের অর্থায়নে। স্থান চ‚ড়ান্ত হলেও প্রকল্প এলাকায় স্থাপনা থেকে যাওয়াতে এখনো চুক্তি সম্পন্ন করেনি চীনা প্রতিনিধি দল। স্থাপনা সরিয়ে নিতে ২০ মার্চ পর্যন্ত সময়ও বেঁধে দিয়েছিল চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারপরও দখলদাররা নিজ থেকে সরে না যাওয়ায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় চমেকের ছাত্রাবাসের পাশে গোঁয়াছি বাগান প্রকল্প এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। তা শেষ হয় দুপুর আড়াইটায়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ রানা। অভিযানে দেড় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।
স্থাপনা সরানোর প্রসঙ্গে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, ২০ মার্চের মধ্যে স্থাপনা সরাতে নোটিশ দেওয়া হয়। সরে না যাওয়ায় জেলা প্রশাসন থেকে উচ্ছেদ অভিয়ান পরিচালনা করা হয়। চীনারা দ্রæত কাজ শুরু করতে চায়। জায়গা দখলমুক্ত হলে তারা কাজ শুরু করবেন।
সকালে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলে অনেককে আসবাবপত্র নিয়ে রাস্তায় দাঁড়াতে দেখা যায়। অনেকে দীর্ঘদিনের মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে কাঁদতে থাকেন। তবে বেশিরভাগকে ঘরের জিনিসপত্র সরাতে ব্যস্ত দেখা যায়। গুুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি থাকায় তাদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কাউকে কাউকে ট্রাক এনে ঘরের জিনিসপত্র নিয়ে যেতে দেখা যায়। কেউবা আবার সরিয়ে নিচ্ছিলেন নিজের ঘরের টিন, ইট ইত্যাদিও।
মর্জিনা আক্তার নামে এক বাসিন্দা বলেন, বার্ন ইউনিট হোক সেটা আমরাও চাই। কিন্তু তার আগে আমাদের জন্য একটা থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া যেতো। আমার স্বামী মেডিকেলের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। অল্প বেতনে কিভাবে বাইরে থাকবো তা বুঝে উঠতে পারছি না। আর মাসের মাঝামাঝিতে আমাদের ঘর ভাঙ্গা হচ্ছে। নতুন বাসা নিতেও কষ্ট হচ্ছে আমাদের।
ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ রানা বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উচ্ছেদ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, তাদের নাকি সময় দেওয়া হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছে, তাদের ২০ মার্চের মধ্যে অবৈধ বসতঘরগুলো ছেড়ে চলে যেতে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। এরপর সোমবার মৌখিকভাবে বাসিন্দাদের আজকের (মঙ্গলবার) উচ্ছেদ অভিযানের বিষয়ে জানানো হয়েছিল।
গত ৭ বছর ধরে চমেক হাসপাতালে চীনের অর্থায়নে একটি বার্ন হাসপাতাল নির্মাণ করতে একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রকল্প স্থানও পরিদর্শন করা হয়। কিন্তু জায়গা বরাদ্দসহ নানা প্রতিকূলতায় সেই নির্মাণ কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। ২০১৬ সালে চমেক হাসপাতাল এলাকায় সম্ভাব্য জায়গা পরিদর্শন করে চীন সরকারের একটি প্রতিনিধি দল। পরিদর্শনে তারা হাসপাতালের বর্তমান বার্ন ইউনিটের পেছনের খালি জায়গায় বিশেষায়িত এ ইউনিট নির্মাণ করার কথা জানালে তখন সম্মতি দেওয়া হয়েছিল। এরপর ২০১৮ সালের ২৮ মার্চ বাংলাদেশে অবস্থিত চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে একটি চিঠি দিয়ে সম্মতির কথা জানানো হয়। পরে হাসপাতালের নকশাও তৈরি করে তারা। কিন্তু দ্বিতীয়বার এসে পরিমাপ করে জায়গা কম পাওয়ায় এ নিয়ে নানা জটিলতা দেখা দেয়। সর্বশেষ গত ২৮ ফেব্রæয়ারিতে চমেক হাসপাতালে প্রকল্প স্থান পরিদর্শন করে ৫ সদস্যের চীনা প্রতিনিধি দল। তারা প্রকল্প এলাকায় পরিদর্শনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। এতে সন্তুষ্টিও প্রকাশ করে চীনা দল। এদিন বার্ন হাসপাতালের জন্য নির্ধারিত গোঁয়াছি বাগানের জায়গাটি পরিদর্শন করে প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করে। বাকি শুধু চ‚ড়ান্ত চুক্তি হওয়ার। চুক্তি হলেই অবকাঠোমো নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
চ‚ড়ান্ত চুক্তি বিলম্বে হওয়ার প্রসঙ্গে সারা দেশে বার্ন চিকিৎসা সম্প্রসারণে সমন্বকের দায়িত্বে থাকা ডা. সামান্ত লাল সেন বলেন, এখনো চূড়ান্ত চুক্তি সম্পন্ন হয়নি। গত সপ্তাহের ১৩ মার্চ হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়েছে। চীনা প্রতিনিধি দল তার জন্য তাদের দেশে কাজ করছে। সব শেষ করে তারা আবার ঢাকা আসবেন। আশা করা যাচ্ছে আগামী সপ্তাহে ফিরবেন। তারপরই চুক্তি সম্পন্ন হবে।
প্রায় এক একর জায়গায় নির্মিত হবে বার্ন ইউনিটটি। ১৫০ শয্যার হাসপাতালটি ৬তলা ভবনের করা হবে। প্রথম তলায় থাকবে ইর্মাজেন্সি ওর্য়াড এবং ওপিডি, দ্বিতীয় তলায় তিনটি ওটি (অপারেশন থিয়েটার) এবং তলায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), তৃতীয় তলায় পুরোটা হাই ডিপেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ), ৪র্থ এবং ৫ম ওর্য়াড, ৬ষ্ঠ তলায় ওয়ার্ড এবং অফিস।