চমেকের ৩১ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

32

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে ৩১ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া সম্প্রতি ছাত্রলীগের দু’পক্ষের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা ক্যাম্পাস আগামী শনিবার (২৭ নভেম্বর) খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার চমেক একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কলেজ অধ্যক্ষ সাহেনা আক্তারের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
গত দুই বছরে কলেজে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ও শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বহিষ্কৃত ৩১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রলীগের বিবদমান দু’পক্ষের নেতা-কর্মী রয়েছেন। এর মধ্যে ২৩ জন এমবিবিএস বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থী এবং ৮ জন বিডিএস বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থী।
চমেকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৯ ও ৩০ অক্টোবরের সর্বশেষ সংঘর্ষ এবং এর আগের বিভিন্ন সময় সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৩১ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আগের সংঘর্ষের ঘটনায় দুটি তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে গত সোমবার দুপুরে অধ্যক্ষ সাহেনা আক্তারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। এতে জড়িতদের চিহ্নিত করে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়নি। তবে ঘটনার জন্য ছাত্রলীগের বিবদমান দুটি পক্ষকেই দায়ী করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের তদন্ত প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের চলমান সংকট নিরসন করা সম্ভব হবে না। তবে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কলেজের চলমান সংকট নিরসনে রাজনৈতিক নেতাদের এগিয়ে আসতে হবে।
৩১ জনের মধ্যে দুই বছরের জন্য বহিষ্কৃত হলেন এমবিবিএস ৬২তম ব্যাচের এইচ এম আসহাব উদ্দিন, সৌরভ ব্যাপারী ও সাদ মোহাম্মদ গালিব, অভিজিৎ দাশ (৬০তম ব্যাচ), সাইফ উল্লাহ (৬১তম ব্যাচ), সাজেদুল ইসলাম (৩০তম বিডিএস), জাহেদুল ইসলাম (বিডিএস ৩১তম) ও ইমতিয়াজ আলাম (বিডিএস ৩০তম ব্যাচ)। আর দুজনকে দেড় বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। তারা হলেন রিয়াজুল ইসলাম (এমবিবিএস ৫৯তম) ও অভিজিৎ দাস (এমবিবিএস ৬০তম)।
এক বছরের জন্য বহিষ্কৃতরা হলেন সাজু দাস (এমবিবিএস ৬২তম), রকিব উদ্দিন আহমেদ (৬২তম), জাকির হোসেন (৬২তম), জুলকাফল মহাম্মদ শোয়েব (৬২তম), ইব্রাহিম খলিল (৬২তম), চমন দাশ (৬২তম), ফারহান রহমান (৬২তম), মাহিন আহমেদ (৬২তম), শেখ ইমাম হাসান (৬২তম), সৌরভ দেবনাথ (৬২তম), মইনুল হোসেন (বিডিএস ৩১তম), আরাফাত ইসলাম (৬২তম), হাবিবুল্লাহ হাবিব (বিডিএস ৩০তম), মো. আনিস (বিডিএস ৩১তম), এহসানুল কবির (বিডিএস ৩১তম), মাহতাব উদ্দিন (বিডিএস ৩১তম), মো. শামীম (৬০তম), মো. সাব্বির (৬০তম), মইন ভূঁইয়া (৬১তম), তৌফিকুর রহমান (৫৮তম) ও আল আমিন ইসলাম (৫৮তম)।
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা আগামী ছয় মাসের মধ্যে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণের জন্য কোনো আবেদন করতে পারবেন না বলেও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় সভায়।
বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ২৭ নভেম্বর শনিবার কলেজ খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্তের কথাও জানানো হয়। তবে মেডিক্যালের প্রধান ছাত্রাবাস ও নাসিরাবাদের ছাত্রাবাস বন্ধ থাকবে। দুই ছাত্রাবাসের আসন বরাদ্দ বাতিল করা হয়। ছাত্রাবাসে নতুন করে আসন বরাদ্দের জন্য পুনরায় আবেদন করতে হবে বলে জানানো হয়। তবে ছাত্রীদের কান্তা হোস্টেল খোলা থাকবে। এছাড়া আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্যাম্পাসে সভা-সমাবেশে নিষিদ্ধ থাকবে।
এদিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে ছাত্রলীগ চমেক শাখার একটি পক্ষ।গতকাল মঙ্গলবার ছাত্রলীগ চমেক শাখার তৌফিকুর রহমান ও কে এম তানভীরসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করে প্রেরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ বিতর্কিত সিদ্ধান্তের প্রতি তীব্র প্রতিবাদ এবং সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে ৬২ তম এমবিবিএসের শিক্ষার্থী মাহাদী আকিবের ওপর হামলার সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট মোট ১৬ জনের বিরুদ্ধে সিসিটিভি ফুটেজ ও দায়েরকৃত মামলায় প্রমাণ থাকা সত্তে¡ও মাত্র ৭ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বাকীদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। কিন্তু ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এমন ২৩ জনের বিরুদ্ধে কোন রকম স্বাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়া শুধুমাত্র মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এমনকি তাদেরকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগ দেওয়া হয়নি।
এছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা এবং বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার এক চিকিৎসক নেতার প্রণীত শিক্ষার্থীর তালিকা অনুসারে ও ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে অধ্যক্ষ ডা. সাহেনা আকতার, অধ্যাপক ডা. মনোয়ারুল হক শামীম ও ডা. প্রণয় দত্তের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে একাডেমিক কাউন্সিল এরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। তাই অবিলম্বে এ একপাক্ষিক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার ও সঠিক তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৯ অক্টোবর রাতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রলীগের দু’গ্রæপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর পরদিন ৩০ অক্টোবর সকালে কলেজের ফটকের সামনে দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে মাহাদি আকিব গুরুতর আহত হলে তাকে হাসপাতালের রেখে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। আহত আকিবের মাথার খুলি থেঁতলে গিয়েছিল। মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এজন্য তার মাথায় অস্ত্রোপচারও হয়।
সংঘর্ষের পর ওইদিন বিকেলে জরুরি একাডেমিক কাউন্সিলের সভা করে অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। ওইদিন সন্ধ্যার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়।