চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের পাল্টাপাল্টি অবস্থান

33

চবি প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধি না থাকার বিষয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়েছেন চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক আব্দুল হক ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সজিব কুমার ঘোষ। এ নিয়ে পর পর দুদিন দুজন পাল্টাপাল্টি বক্তব্য সম্বলিত পৃথক দুটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। গত শুক্রবার শিক্ষক সমিতির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল হক স্বাক্ষরিত শিক্ষক সমিতির একটি প্যাডে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। যেখানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক প্রতিনিধি ছাড়া সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হলে শীতকালীন ছুটির পর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে উপাচার্য বরারবর ই-মেইলে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়। অপরদিকে গতকাল শনিবার শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সজিব কুমার ঘোষ স্বাক্ষরিত শিক্ষক সমিতির অপর একটি প্যাডে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। যেখানে সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক আব্দুল হক সমিতির অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সম্মতি ছাড়াই সভার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন বলে দাবি করা হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুমকিকে শিক্ষক সমিতি ও শিক্ষক সমাজের মর্যাদা ও চেতনা পরিপন্থী হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।
এতে বলা হয়, গত শুক্রবার চবি শিক্ষক সমিতির নামে সহ-সভাপতি প্রফেসর আবদুল হক (ভারপ্রাপ্ত সভাপতি) কর্তৃক প্রদত্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভার সিদ্ধান্তের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শনমূলক ও শিক্ষক সমিতির আদর্শিক চেতনার পরিপন্থি। চবির শিক্ষক সমাজের মর্যাদা বজায় রাখার জন্য এ অনাকাক্সিক্ষত প্রেস বিজ্ঞপ্তির প্রতিবাদ জরুরি।
এতে আরো বলা হয়, সাধারণত শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভার এ ধরনের সিদ্ধান্তসমূহ দাবি আকারে শিক্ষক সমিতির কার্যকরী পরিষদ প্রশাসনের নিকট লিখিত ও মৌখিক ভাবে তুলে ধরে এবং দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য দ্রæত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করে। কিন্তু বর্তমান ক্ষেত্রে বারংবার অনুরোধ করার পরও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি চবি শিক্ষক সমিতির কার্যকরী পরিষদের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে এ দাবিগুলো তুলে না ধরে আমাদের (চবি শিক্ষক সমিতির কার্যকরী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. সঞ্জীব কুমার ঘোষ, যুগ্ম সম্পাদক এসএএসএম জিয়াউল ইসলাম, সদস্য প্রফেসর ড. নাজনীন নাহার ইসলাম ও ড. শারমীন মুস্তারী) সম্মতি না নিয়ে সরাসরি গত শুক্রবার প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, যা সরাসরি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভার সিদ্ধান্তের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং বিভ্রান্তিমূলক। সাধারণ সভার সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুমকি শিক্ষক সমিতি ও শিক্ষক সমাজের মর্যাদা ও চেতনা পরিপন্থী। শিক্ষক সমিতির নামে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির এ প্রেস বিজ্ঞপ্তির তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং সকলকে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এদিকে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের বিবৃতিতে তোলা অভিযোগ মানতে নারাজ সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক আব্দুল হক। তিনি বলেন, আন্দোলনের বিষয় ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভার ২ নং এজেন্ডা ও ৮ নং বিধিধ এজেন্ডার আলোচ্য বিষয় ছিল। কিন্তু ওইদিন সভা শেষ হতে অনেক দেরি হওয়ার অনেক শিক্ষক আগেই চলে গিয়েছিল, তাই সেদিন বিষয়টিকে সমিতির এক্সিকিউটিভ বডির সভার এজেন্ডা হিসেবে স্থানান্তর করে সেদিন মিটিং সমাপ্ত করা হয়। গত ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত এক্সিকিউটিভ বডির সভায় এ এজেন্ডাগুলো নিয়ে আলোচনা হয় কিন্তু সেদিনও দেরি হয়ে যাওয়ার কারণে মিটিং পরবর্তী দিনের জন্য মুলতবি করা হয়। কিন্তু পরের দিন ২৩ ডিসেম্বর সাধারণ সম্পাদক মুলতবি সভা আয়োজনের কোনো উদ্যোগ নেননি। পরবর্তীতে আমি সারাদিন অপেক্ষা করার পর উনার কথা সাপেক্ষে সন্ধ্যা সাতটায় অনলাইনে মুলতবি সভা আয়োজনের উদ্যোগ নিই। কিন্তু ওই সভায় এক্সিকিউটিভ বডির ১১ জনের মধ্য থেকে সাধারণ সম্পাদক, ২ জন যুগ্ম সম্পাদক উপস্থিত হননি। অপর একজন যুগ্ম সম্পাদক মূল সভাতেও উপস্থিত ছিলেন না। যেহেতু ১ জন বাদে বাকিরা মূল সভায় উপস্থিত ছিলেন, তাই নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে মূল সভাতেও উপস্থিত হিসেবে গণ্য করা হবে। মুলতবি সভায় আমিসহ মোট ৬ জন ছিলাম। উপস্থিত সকলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই প্রেস রিলিজ ও উপাচার্যকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। সেদিন সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন না, তাই প্যাডে তার স্বাক্ষরও তিনি করেননি। যদি সভায় সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনো আপত্তি থাকত, তাহলে তা সভায় উপস্থিত হয়েই বলতে হত। কিন্তু উনার সাক্ষরিত প্রেস রিলিজে যাদের নাম বলা হয়েছে, তাদের কেউই মুলতবি সভায় উপস্থিত হননি।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষক সমিতির কাজ হলো প্রশাসনের নিকট থেকে শিক্ষকদের অধিকার আদায় করা। কিন্তু তিনি এখানে প্রশাসনের পক্ষে হয়ে শিক্ষকদের অধিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন বলে সেদিন মুলতবি সভায় উপস্থিত সদস্যরা আমাকে বলেছিলেন। তিনি প্রশাসনের পক্ষ হয়ে নিজের ব্যক্তিগত মতামতকে শিক্ষক সমিতির মমতাত বলে চালিয়ে দিচ্ছেন।
তবে গতরাত সাড়ে দশটায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় এ বিষয়ে কথা বলার জন্য শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সজিব কুমার ঘোষকে ফোন করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন।