চবি ছাত্রলীগের এক নেতা পেটালো আরেক নেতাকে

32

চবি প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রæপ বিজয়ের নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াসকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে একই গ্রুপের আরেক নেতা এইচ এম ফজলে রাব্বি সুজনের বিরুদ্ধে। সুজন শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ইলিয়াস সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। সুজন বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগে পদ প্রত্যাশী।
গত শুক্রবার রাজধানীর একটি আবাসিক হোটেলে বিকেলে ইলিয়াসকে মারধর করা হয় বলে জানা গেছে। অভিযুক্ত সুজন বর্তমানে যুবলীগের রাজনীতি করছেন এবং মহানগর যুবলীগের পদপ্রত্যাশী।
মারধরের ঘটনায় একটি সিসিটিভির দুটি ফুটেজ গণমাধ্যমের হাতে এসেছে। ফুটেজে দেখা যায়, পাঞ্জাবি পরা ছাত্রলীগ নেতা সুজন বেশ কয়েকজন নিয়ে হোটেলের রেস্টুরেন্টে যান। সেখানে খাবার টেবিলে নীল টি-শার্ট পরা আরেক নেতা ইলিয়াস বসে ছিলেন।
ফুটেজের শুরুতে দেখা যায়, সুজন ও তার অনুসারীরা ইলিয়াসের কাছে যান। পরে তাকে রিসিপশনের কাছে ডেকে নেয়া হয়। এ সময় সুজনের অনুসারীরা ইলিয়াসকে ধাক্কা দিতে থাকেন। পরে সুজনকে ইলিয়াসের কাঁধে হাত দিয়ে কথা বলতে দেখা যায়। দ্বিতীয় ফুটেজে দেখা যায়, একপর্যায়ে সুজন ইলিয়াসকে থাপ্পড় মারেন। এর পরই সুজনের সঙ্গে আসা ছেলেরা তাকে মারধর শুরু করেন। সুজন পেছন থেকে ছেলেদের সামনে এগিয়ে দেন।
এ ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা মো. ইলিয়াস রাজধানীর শাহবাগ থানায় সুজনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। বাকি অভিযুক্তরা হলেন মো. সোহেল, মো. নোমান, এস এম মেহরাজ, আলমগীর ও রাজেশ চৌধুরী। এছাড়াও অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে চার-পাঁচজন উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগপত্রে তিনি বলেন, শাহবাগ থানার তোপখানা রোডের হোটেল রয়েল প্যালেসের ষষ্ঠতলার ৬০৯ নম্বর রুমে ইলিয়াস অবস্থান করছিলেন। পূর্ব শত্রুতার জেরে সুজন ও তার অনুসারী কয়েকজন গত ২০ মে রাত সাড়ে ৩টার সময় বেআইনিভাবে প্রবেশ করে রুমের দরজা ভাঙার চেষ্টা করেন। তাকে গালাগাল করলে আতঙ্কিত হয়ে তিনি রুমের ইন্টারকমের মাধ্যমে ফোন করেন। তখন হোটেল কর্তৃপক্ষ তার রুমের সামনে এসে তাদের (সুজন ও তার অনুসারীদের) সরিয়ে দেন। এরপর হোটেল কর্তৃপক্ষ তার রুম পরিবর্তন করে পঞ্চম তলার ৫১০ নম্বর রুমে নিয়ে যান। একই দিন বিকেল অনুমান সাড়ে ৪টার সময় হোটেলের রেস্টুরেন্টে খেতে বসলে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গলা চেপে ধরে এলোপাতাড়িভাবে কিল ঘুষি, লাথি মারা হয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। এ সময় ফজলে রাব্বী সুজন তার রঢ়যড়হব১২ চৎড় সধী, যার বাজারমূল্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং আরেকজন তার সামসাং এ সেভেন্টি ওয়ান মডেলের সেট আছাড় মেরে ভেঙে ফেলেন।
পরে হোটেল কর্মচারীরা তাকে উদ্ধার করেন ও তার বন্ধু জাহিদুল আউয়ালের সহায়তায় তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, ‘আমার উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হয়েছে। আমি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আপনাদের পরে বিস্তারিত জানাব।’
অপরদিকে মারধরের বিষয়টি স্বীকার করে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী সুজন বলেন, ‘ইলিয়াস আমার ছোটভাই। আমি নিজে তাকে রাজনীতিতে আনছি, রাজনীতি শিখিয়েছি। আমি ওকে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বানিয়েছি। আমার ছোটভাই যদি বেয়াদবি করে বড় ভাইয়ের সঙ্গে, তাকে আমি যেমন স্নেহ করে রাজনীতিতে ওপরে তুলছি, তাকে শাসন করাও আমার সাংগঠনিক অধিকার।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকাতে আমি যুবলীগের সম্মেলন নিয়ে কাজ করতে গিয়েছিলাম। সেখানে ইলিয়াসের সাথে দেখা হলে সে নিজে আমার সাথে কথা বলতে আসে। কথা বলার এক পর্যায়ে সে আমার সাথে বাজে আচরণ করে। তাই ছোটভাই হিসেবে তাকে আমি শাসন করেছি। কারণ আমাদের নেতা কখনও আমাদের বেয়াদবি শেখান নাই। বেয়াদবি যারা করবে তাদের কঠিনভাবে দমন করতে হবে। যাতে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বজায় থাকে।’
তবে কমিটির পদ ভাগাভাগি নিয়ে দন্দ্বের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘কমিটি নিয়ে কোনো কিছু না। চবি ছাত্রলীগের কমিটির সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নাই। আমি ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে আসার পর চবি ছাত্রলীগের কোনো বিষয়েই আমি হস্তক্ষেপ করিনি। ওই কমিটি তো আমি করব না। আমি আমার সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ত।’
এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার বলেন, ‘চবি ছাত্রলীগের দুই নেতার মধ্যে হাতাহাতি হয়েছিল। আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, সুজন ও ইলিয়াস দুজনই শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফলের অনুসারী। নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে সুজন বিজয় গ্রুপ থেকে ছিটকে পড়েন। ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে তিনি শহরে যুবলীগের রাজনীতি শুরু করলেও এখনো তার অনুসারী অনেক কর্মী বিজয় গ্রæপে আছেন। দুজনই একই নেতার (নওফেল) অনুসারী হওয়ায় বর্তমান কমিটিতে পদ ভাগাভাগি নিয়ে সুজন ও ইলিয়াসের মধ্যে দ্ব›দ্ব চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে।