চবি ছাত্রকে পিটিয়ে পা ভেঙে দিল আরএনবি সদস্য !

75

চাঁদা না পেয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) এক সদস্যের বিরুদ্ধে। গত শুক্রবার বিকালের নগরীর বটতলী স্টেশনে এ ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার রাইয়্যান আলম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। আর তাকে মারধরে অভিযুক্ত রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সিপাহী মশিউর রহমান মূসা। এ ঘটনায় গতকাল শনিবার তাকে ক্লোজড করেছে কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্তকে বরখাস্ত করার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানা গেছে।
ভুক্তভোগী রাইয়্যান আলম বলেন, শুক্রবার বিকালে ক্যাম্পাসে যেতে বটতলী স্টেশনে গিয়েছিলাম। ওইদিন থেকে ট্রেন চলাচল করবে না, তা আমি জানতাম না। ইঞ্জিন লাগাবে ভেবে একটি ট্রেনের বগিতে দুই ছোট ভাইসহ আমরা তিনজন গিয়ে বসি। হুট করে আরএনবির তিনজন সদস্য আসেন। একজনের নাম মশিউর। তিনি বলে উঠলেন, এই তোরা কারা? তুই করে বলার পর বললাম, আমরা স্টুডেন্ট, ক্যাম্পাসে যাবো। তিনি বলেন, এখানে কেনো তোরা? আমি বললাম, আশ্চর্য কথা, আমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র, শাটলে বসতেই পারি। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তিনি বললেন, তুই টাকা দে। আমি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানাই এবং ঝামেলা হচ্ছে দেখে কয়েকজন বন্ধুদের মোবাইলে কল দিচ্ছিলাম। এসময় আরএনবির ওই সদস্য হঠাৎ করে আমার মোবাইল কেড়ে নিতে চেষ্টা করলেন, তবে আমি দিচ্ছিলাম না। একপর্যায়ে মোবাইল কেড়ে নিতে না পেরে তিনি দুটি লাঠি দিয়ে আমাকে পেটাতে শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছোট ভাইও আমাকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়। তারা আমাকে উদ্ধার করে পাঁচলাইশের পিপলস হাসপাতালে ভর্তি করে। লাঠির আঘাতে আমার এক পায়ের হাঁড় ভেঙে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
এ ঘটনার পর চবি ছাত্রলীগ কর্মীরা চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে গিয়ে বিক্ষোভ করেন। এসময় তাদেরকে আরএনবির কর্মকর্তারা শান্ত করেন। পরে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এ ঘটনার বিচার দাবিতে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়।
আহত শিক্ষার্থীর সহপাঠী আমিরুল হক চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয় দেওয়ার পরও পিটিয়ে আমার বন্ধুর পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আরএনবির অফিসার আমান উল্লাহও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এর আগেও আরএনবি সদস্য মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে এ ধরনের কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়ে এ ঘটনায় উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। মশিউর মাদকাসক্ত বলে আমরা জেনেছি। ঘটনার পর তিনি স্টেশন ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে ও সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে শনিবার বিকালে নগরীর বটতলী স্টেশনে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা শিক্ষার্থী নিরাপত্তা ও ঘটনার বিচারের দাবিতে হাতে লেখা পোস্টারও প্রদর্শন করেন। শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন থেকে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও শিক্ষার্থীর ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানিয়েছেন। পরে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তা, রেলওয়ে জিআরপি পুলিশের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা দাবি দুটি মেনে নিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।
এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর চট্টগ্রাম স্টেশনের পরিদর্শক আমান উল্লাহ আমান পূর্বদেশকে বলেন, শিক্ষার্থীরা যেভাবে চেয়েছিল, আমরা ঠিক সেভাবে কাজ করেছি। শিক্ষার্থীরা দুটি দাবি জানিয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও ক্ষতিপূরণ প্রদান। সবই মেনে নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত মশিউর রহমান মূসাকে ক্লোজড করা হয়েছে। তাকে বরখাস্তের প্রক্রিয়া চলছে।