চবির দুই ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল নিয়ে অসঙ্গতি

13

চবি প্রতিনিধি

যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে। ‘এ’ ও ‘সি’ ইউনিটের ফলাফলের ক্ষেত্রে এই অসঙ্গতি দেখা গেছে। দুটি ইউনিটে যশোর বোর্ডের অধীনে থাকা ২৭৬ জনের ক্ষেত্রে এই অসঙ্গতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার ভর্তি পরীক্ষার কোর কমিটির সভার আহবান করা হয়েছে। ভর্তি কমিটির অনুমোদন পেলে ২৭৬ জনের মেরিট পজিশন পরিবর্তন হওয়ার কথা রয়েছে। তাতে ওই দুই ইউনিটে পাশ এবং ফেলের হারে কোনো পরিবর্তন হবে না। অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষার কোর কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় এ বিষয়ে লিখিত সিদ্ধান্ত জানাবেন ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সচিব অ্যাকাডেমিক শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার এসএম আকবর হোসাইন।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল টেলিটকের কাছ থেকে ভর্তি পরীক্ষার্থীদের এইচএসসি ও এসএসসির জিপিএ ডাটা কিনে নেয়। এরমধ্যে সব বোর্ডের ডাটাগুলো ঠিক থাকলেও শুধুমাত্র যশোর বোর্ডের এসএসসির জিপিএ’র তিন ডিজিটের মধ্যে শেষ ডিজিটটি মিসিং ছিল। যেমন- ৩.৭৯ এর মধ্যে শেষের ৯ ডিজিটটি মিসিং। আইসিটি সেল এই ভুলটি ধরতে পারেনি। এমনকি যশোর বোর্ড থেকে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা গত তিন মাস প্রোফাইলে এমন ভুল দেখেও আইসিটি সেলের কাছে অভিযোগ দেয়নি। যার ফলে ভর্তিচ্ছুদের প্রোফাইলে এই ভুলটা এখনো আছে। পরে ‘এ’ ইউনিটের এক ছাত্র বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করলে কাজ শুরু করে আইসিটি সেল। পরে দেখা যায় শুধুমাত্র অভিযোগকারীর নয়, পুরো যশোর বোর্ডের অধীনে থাকা শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এমন ভুল দেখা গিয়েছে। একটি বোর্ডের সমস্যা দেখা দেয়ার কারণে অন্যন্যা বোর্ডের ইনফরমেশনও চেক করেন তারা। কিন্তু অন্যান্য বোর্ডগুলোতে কোনো সমস্যা ছিল না। শুধু যশোর বোর্ডের জিপিএ’র শেষ ডিজিট মিসিং ছিল।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘টেলিটক থেকে যখন আমরা ডাটা সংগ্রহ করি তখনও কুমিল্লা বোর্ডের কিছু ডাটাও মিসিং ছিল। যেগুলো আমরা পরে সংগ্রহ করি। আবার অনেক শিক্ষার্থী, বিশেষ করে যারা কোটাধারী তাদের আবেদনের ক্ষেত্রে কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা দেখা দেয়। যেগুলো আমরা জানার সাথে সাথে সমাধান করে ফেলি। কিন্তু যশোর বোর্ডের ডাটা মিসিংটা টেকনিক্যাল অ্যারোরের কারণে ধরা যায়নি।’
ফলাফল সংশোধনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি উপাচার্যকে জানানো হয়েছে। ভর্তি কমিটির সদস্যদের সাথেও আলোচনা করা হয়েছে। দুটি ইউনিটের মধ্যে ‘এ’ ইউনিটে ২২৫ জন ও ‘সি’ ইউনিটে ৫১ জনের মত ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমনটা হয়েছে। ভর্তি কমিটির অনুমতি পেলে এদের প্রকাশিত ফলাফল সংশোধন করে আপগ্রেড করা হবে। তাদের পজিশন খুব বেশি ইফেক্ট ফেলবে না। যেমন কেউ ২০০তম মেরিট পজিশন হয়েছে, এখন তার ১৯৫ তম পজিশন হবে। ১৯৫-২০০ এর মধ্যে বাকিদের ফলাফল ১/২ পজিশন পিছনে যাবে। এমন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২৮ জন শিক্ষার্থীরই কেবল সাবজেক্ট পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। বাকিদের পজিশন অনেক পিছনে।’
অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘যারা পাশ করেছে এবং ফেল করেছে তাদের হার একই থাকবে। কারণ লিখিত ১০০ পরীক্ষার নম্বরের মধ্যে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয়নি। জিপিএ যোগের ক্ষেত্রে ভুল হয়েছে। শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না। আমরাও ইচ্ছেকৃত কোনো ভুল করিনি। এমনকি ওই ছাত্রদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরাই ভুলটা ধরে কমিটির কাছে সংশোধনের অনুমতি চেয়েছি। টেকনিক্যাল যে সমস্যাটা ছিল, তা আমরা সমাধান করে ফেলেছি। সমাধানকৃত ফলাফল আমাদের হাতে রয়েছে। কমিটি অনুমোদন দিলে পাবলিশ করা হবে। যার যেটা যোগ্য পজিশন, সে সেখানেই যাবে। এটা নিয়ে কোনো শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।’
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২০ আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথমবর্ষের বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘এ’ ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদভুক্ত ‘সি’ ইউনিটের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে ‘এ’ ইউনিটে ৩৮.৬৮ শতাংশ পরীক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছে। পাস করেছে ১৩ হাজার ৫৬৯ জন। ফেল করেছে ১৯ হাজার ৫৮০ শিক্ষার্থী।
‘সি’ ইউনিটে পাস করেছেন ২ হাজার ২৬৪ জন শিক্ষার্থী। পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ৯ হাজার ২২২ জন। শতকরা হিসেবে পাসের হার ২৪.৫৫ শতাংশ। ফেল করেছেন ৬ হাজার ৯৫৮ জন শিক্ষার্থী।