চবির ওয়াইফাই ইন্টারনেট থেকেও যেন নেই

21

শাহরিয়াজ মোহাম্মদ, চবি

বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে শিক্ষা থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে জড়িয়ে আছে ইন্টারনেট। বিশেষ করে ২০২০ সালে করোনাকালীন লকডাউন চলাকালে সারাদেশের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাক্ষেত্রে ইন্টারনেটের সাথে সবচেয়ে বেশি যুক্ত হয়েছে।
প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষার্থীর প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল রয়েছে মোট ১১টি। যাতে প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী থাকেন। রয়েছে ৫০টিরও বেশি বিভাগ ও ইন্সটিটিউট। এছাড়াও রয়েছে প্রায় ৩৫টির মতো দপ্তর। এ বিশাল কর্মযজ্ঞের প্রায় প্রত্যেকটিতেই প্রতিনিয়ত ইন্টারনেটের ব্যবহার হয়ে আসছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের এতসব কর্মকাÐে নিরবচ্ছিন্ন ও সুষ্ঠুভাবে ইন্টারনেট প্রদান করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বাংলাদেশ রিসার্চ এন্ড এডুকেশন নেটওয়ার্ক (বিডি রেন) থেকে ক্রয়কৃত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ রয়েছে মাত্র ৭৫৮ এমবিপিএসের। যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল।
এই অপ্রতুল ব্যান্ডউইথের কারণে সবচাইতে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল থেকে প্রতিটি আবাসিক হলে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে একটি করে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হয়। সেখান থেকে হলের বিভিন্ন দপ্তরে, ব্লকে কিংবা প্রয়োজনীয় স্থানে ক্যাট-৬ ক্যাবল দিয়ে ল্যান সংযোগের মাধ্যমে ওয়াইফাই রাউটার স্থাপন করে হল কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে দেখা গেছে, সোহরাওয়ার্দী হলে মোট ৬টি ব্লকে দুইটি করে মোট ১২টি রাউটার স্থাপন করেছে হল কর্তৃপক্ষ। অন্যান্য হলসমূহে ব্লকভিত্তিক রাউটার স্থাপন করা না হলেও ওইসব হলে শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে হলের মেইন সুইচ থেকে ক্যাট-৬ ক্যাবলের মাধ্যমে সংযোগ নিয়ে নিজ নিজ কক্ষ বা ব্লকে ইন্টারনেট সেবা পেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে কানেকশন স্থাপনের পুরো খরচটা বহন করতে হয় শিক্ষার্থীদেরই। তবে ছাত্রী হলের প্রত্যেকটিতেই হল কর্তৃপক্ষ ব্লকভিত্তিক রাউটার স্থাপন করেছে বলে জানা গেছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রদানকৃত এসব ব্রডব্যান্ড সার্ভিসে একেবারেই সন্তুষ্ট নয় শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ দিনের অধিকাংশ সময়ই চালানো যায় না হল থেকে দেওয়া ওয়াইফাই ইন্টারনেট। ধীরগতির কারণে প্রয়োজনীয় কোনো কাজই ঠিকমতো করা যায় না এ ইন্টারনেটের মাধ্যমে।
তারা জানান, সকালের দিকে যখন শিক্ষার্থীরা সবাই ক্লাসে থাকে তখন কিছুটা চালানো যায়। তবে বেলা যতই বাড়তে থাকে ততই কমতে থাকে ইন্টারনেটের গতি। বিকেল হতে হতে একেবারেই ইন্টারনেটের গতি কমে যায়। যার ফলে এসব ইন্টারনেটে ব্যবহার করে উল্লেখযোগ্য কোনো কাজ করা যায় না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
সোহরাওয়ার্দী হলে অবস্থানরত ছাত্র তৌহিদুল হক ফাহাদ পূর্বদেশকে বলেন, হল থেকে আমাদের ওয়াইফাই দেয়া হয়েছে ঠিক, তবে তা দেয়া না দেয়া সমান কথা। দেখা যায়, দিনের অধিকাংশ সময়েই ধীর গতির কারণে ইন্টারনেট চালানো যায় না। দিন শেষে টাকা দিয়ে ডাটা কিনেই আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে ইন্টারনেট দিয়েছে তা থেকেও না থাকার মতো। এমতাবস্থায় কর্তৃপক্ষের উচিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যান্ডউইথের পরিমাণ বৃদ্ধি করে সুষ্ঠুভাবে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রদানের ব্যবস্থা করা।
জননেত্রী শেখ হাসিনা হলে অবস্থানরত ছাত্রী ফারহানা শিমু বলেন, আমরা সকালের দিকে ক্লাসে থাকি। তখন আমাদের তত ইন্টারনেট প্রয়োজন হয় না। ক্লাস শেষে রুমে এসে ইন্টারনেটে আমাদের বিভিন্ন কাজ করতে হয়। কিন্তু যখনই আমাদের ইন্টারনেটের বেশি প্রয়োজন হয় তখনই হলের ওয়াইফাইয়ের গতি কমতে থাকে। রাতে তো একেবারে চালানোর মত অবস্থাই থাকে না।
এদিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিস প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ডিভাইস ও যন্ত্রপাতিসমূহ পুরাতন হওয়ার কারণে চাইলেও হুট করে ব্যান্ডউইথের পরিমাণ বৃদ্ধি করা সম্ভব না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল সূত্রে জানা গেছে, চবিতে বর্তমানে যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সেটআপটি আছে তা স্থাপন করা হয়েছিল ২০১০ সালে। তখনকার সময়ে ইন্টারনেটের প্রয়োজনীয়তা এখনকার মত এত বেশি ছিল না। তখনকার প্রয়োজন অনুসারেই যন্ত্রপাতিসমূহ স্থাপন করা হয়েছিল, যা সর্বোচ্চ ১০২৪ এমবিপিএস পর্যন্ত ব্যান্ডউইথ সাপোর্ট করবে। তবে ২০২২ সালে এসে ইন্টারনেটের প্রয়োজনীয়তা অনেক বৃদ্ধি পেলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সেট আপে কোনো প্রকার সংস্কার করা হয় নি। এখনও চলছে সেই ২০১০ সালে স্থাপিত ব্রডব্যান্ড সেট আপ দিয়ে।
অথচ প্রায় চবির সমপরিমাণ ছাত্রছাত্রী নিয়েও চবির চাইতে সাড়ে ৩ গুণের বেশি ব্যান্ডউইথ রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি)। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল সূত্রে জানা গেছে, রাবিতে মূল ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে ২টি। একটির পরিমাণ ১০০০ এমবিপিএস অপরটি ১৮০০ এমবিপিএসের। যার মোট পরিমাণ ২৮০০ এমবিপিএস।
এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যান্ডউইথের পরিমাণও চবির তুলনায় ৩ গুণের বেশি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাবির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে ব্যান্ডউইথের পরিমাণ ২৫০০ এমবিপিএস।
তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ব্রডব্যান্ড ব্যান্ডউইথের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য কাজ করছেন বলে পূর্বদেশকে জানিয়েছেন আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. খাইরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা অনেক আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইথ বাড়ানোর ব্যাপারে চিন্তা করে আসছি। এ বিষয়ে বিডিরেন কর্তৃপক্ষের সাথে আমাদের মৌখিক আলোচনাও হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনেট সেট আপের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ডিভাইস ও যন্ত্রপাতিসমূহ পুরাতন হওয়ায় আমরা চাইলেও হুট করে ব্যান্ডউইথ বৃদ্ধি করতে পারছি না।
তিনি আরো বলেন, ব্যান্ডউইথ বাড়ানোর জন্য আমাদের বেশ কিছু ডিভাইস ও যন্ত্রপাতি পরিবর্তন করতে হবে। যার জন্য একটি বিশাল খরচের ব্যাপার রয়েছে। তবে চেষ্টা করছি ব্যান্ডউইথের পরিমাণ বাড়ানোর। অচিরেই আমরা তা করতে সক্ষম হব।